সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে নিষেধ করায় মারধর, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আবারও হামলা
Published: 25th, March 2025 GMT
সিলেটে দুই দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় প্রথম দফা ও রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে এসব ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নার্স জাহেদুল ইসলাম (২৮), দিলোয়ার হোসেন (২৪) ও হাসপাতালটির পুলিশ বক্সের কনস্টেবল সুভাষ দাশ (৩২); সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স রাসেল আহমদ (২৮) ও শহীদুল ইসলাম (৩০)।
অন্যদিকে হামলায় জড়িত অভিযোগে দুই সহোদরসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন জকিগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন (৩৫) ও তাঁর ভাই মুসলিম উদ্দিন (২২) ও আবদুর রহমান (২২)। তাঁরা বর্তমানে সিলেট নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় বসবাস করেন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত আটটার দিকে দোকানে চা খাচ্ছিলেন রাসেল ও শহীদুল। এ সময় তাঁদের পাশে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছিলেন গিয়াস উদ্দিন ও আবদুর রহমান। রাসেল ও শহীদুল তাঁদের ওপর ধোঁয়া ছাড়তে নিষেধ করলে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় গিয়াস উদ্দিন ও আবদুর রহমানের পক্ষ নিয়ে আরও কয়েকজন ওই দুই নার্সকে মারধর করেন। এতে তাঁরা আহত হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তাঁদের ওপর আবারও হামলা চালান গিয়াস উদ্দিন, আবদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। হামলাকারীদের থামাতে গেলে পুলিশ সদস্য সুভাষ দাশের ওপর চড়াও হন তাঁরা। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীদের কয়েকজন পালিয়ে যান। তবে গিয়াস উদ্দিন, মুসলিম উদ্দিন ও আবদুর রহমানকে আটক করে পুলিশ।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ চন্দ্র দাশ বলেন, সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে আহত হয়ে কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। আগের ঘটনার জেরে গতকাল রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের ওপর আরেক দফায় হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ডের প্রস্তুতি চলছে। ওই মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও আবদ র রহম ন স ল ট এম এ জ ওসম ন র ওপর র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যার অস্বীকার ঠেকাতে আগে বিচার দরকার
ব্যক্তির স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ।
সহুল আহমদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। গণহত্যা বা এ ধরনের অপরাধের ঘটনার সত্যতার অস্বীকার ঠেকাতে সবার আগে দরকার বিচার।
এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম ও লেখক সারোয়ার তুষার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাতের পঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—গণহত্যার পক্ষগুলো সব সময় জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ১৯৭১–এর পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে একাত্তরের ২৫ মার্চ সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই–সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন।’
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।