গ্রিনল্যান্ড দখলে নিতে ট্রাম্প কেন এত মরিয়া
Published: 25th, March 2025 GMT
ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড নিয়ে চলমান আলোচনা–সমালোচনার মধ্যেই সেখানে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে এ সফর হতে পারে। সফরটি নিয়ে গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করে গ্রিনল্যান্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর এখন প্রতিনিধিদল পাঠানোর ঘটনাকে ‘অত্যন্ত আগ্রাসী’ হিসেবে দেখছেন সেখানকার রাজনীতিবিদেরা।
গ্রিনল্যান্ড নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানাতে কোনো রাখঢাক রাখেননি ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে ওভাল অফিসে ফেরার পর থেকে তিনি বেশ কয়েকবার অর্থের বিনিময়ে কিংবা সামরিক শক্তি খাটিয়ে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এখন পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডের নেতারা ট্রাম্পের এমন অভিপ্রায়কে দৃঢ়, তবে ভদ্রভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁরা বারবার বলছেন, এটা (গ্রিনল্যান্ড) বিক্রির জন্য নয়।
এ সপ্তাহে ‘সেকেন্ড লেডি’ উষা ভ্যান্সের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সম্ভাব্য গ্রিনল্যান্ড সফর নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ সফরে উষার সঙ্গী হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা পরামর্শক মাইক ওলাৎজ ও জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস রাইট।
গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এ সফর ‘অত্যন্ত আক্রমণাত্মক’। আমাদের ওপর ‘ক্ষমতার প্রদর্শন’ এই সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে গ্রিনল্যান্ড দখলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তোড়জোড় আরও বাড়বে। আর সফরের পরে চাপ (গ্রিনল্যান্ডের ওপর) বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কেন? এখানে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো—
কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডগ্রিনল্যান্ডের বেশির ভাগ ভূখণ্ড আর্কটিক অঞ্চলে পড়েছে। এটা এমন একটি অঞ্চল, যেটা নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। মূলত আর্কটিকের অনুত্তোলিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিশ্ব বাণিজ্য ত্বরান্বিত করতে উদীয়মান জাহাজ চলাচল করিডরের জন্য তাদের এমন আগ্রহ।
এরই মধ্যে, আর্কটিকের বরফ গলতে শুরু করায় এই অঞ্চলটিকে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যের অন্যতম ক্ষেত্রে রূপান্তর করেছে, যা একসময় কার্যত অব্যবহৃত পড়ে ছিল। এখন এই অঞ্চল দিয়ে আরও বেশি জাহাজ চলাচল করছে। এই অঞ্চলের দেশগুলো যতটা সম্ভব সমুদ্র সম্পদের ওপর দাবি জানিয়ে প্রতিযোগিতায় জড়িয়েছে।
মার্কিন নৌ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সুয়েজ কিংবা পানামা খালের পরিবর্তে আর্কটিক অঞ্চল হয়ে চলাচল করলে এশিয়া ও ইউরোপ কিংবা এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজগুলোর পথ (রুট) প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। কাজেই এ প্রশ্নটা সামনে এসেছে—অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এই কৌশলগত নৌপথের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে? বিশেষ করে যখন দাবিদারেরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী আর ভূরাজনৈতিক পরাশক্তি।
আর্কটিক অঞ্চলের বর্ধিতাংশের দাবি জানাতে পারে মাত্র পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ড) এবং যুক্তরাষ্ট্র (আলাস্কা)। এ পরিস্থিতিতে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিলে যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক অঞ্চলের আরও বড় অংশের বিষয়ে দাবি জানাতে পারবে।
আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ডে মার্কিন প্রতিনিধিদল, নিন্দা ও ক্ষোভ নেতাদের৭ ঘণ্টা আগেজাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্বআমরা গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চাই নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য। এমনকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য। এমনটা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মাসে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণে এ মন্তব্য করেন তিনি। গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘এই ভূখণ্ড সামরিক নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন সেনা রয়েছে। ছোট্ট একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটিও রয়েছে সেখানে। নাম পিটুফিক স্পেস বেস, যা আগে থুলে বিমানঘাঁটি নামে পরিচিত ছিল। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে এই ঘাঁটি নতুন করে নকশা করেছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘাঁটি সম্ভবত ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে পারে। ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোমের’ আদলে এটা বানানো হচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিপক্ষের, বিশেষ করে চীনের সম্ভাব্য হুমকি থেকে রক্ষা করতে তিনি এটা বানাতে চান। এক নির্বাহী আদেশে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির পরিকল্পনা প্রণয়নে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
বাজারভিত্তিক হুমকিও রয়েছে। এসবও প্রতিহত করতে চান ট্রাম্প। রাশিয়া ও চীন এরইমধ্যে আর্কটিক অঞ্চলে জাহাজ চলাচলের পথ (রুট) নিয়ে সহযোগিতা করছে। অঞ্চলটিতে রাশিয়ার ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। আর্কটিকে সবচেয়ে বড় উপকূলও রয়েছে রাশিয়ার। এই অংশীদারত্ব অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে হুমকি তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন মন ত র র জন য এ সফর আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে
কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বাড়ছে। ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্যও বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই দুই দেশ যখন আরও বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় দাঁড়িয়ে, তখন যুক্তরাষ্ট্রকে সামলাতে হচ্ছে অত্যন্ত জটিল এক কূটনৈতিক সমীকরণ।
যুক্তরাষ্ট্রকে এখন এই অঞ্চলে কয়েকটা জটিল বিষয় সামলাতে হবে। এদিকে আছে ভারতকে সমর্থন দেওয়া, ভারতের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব বজায় রাখা। সঙ্গে আছে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক রক্ষার কৌশল তৈরি করা।
এগুলোর কোনোটাতেই কোনো রকম শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন হিসেবে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলেই দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং একটি বড় সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আর কেবল আঞ্চলিক কোনো বিষয় নয়। এই সংঘাতের প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। ফলে সামান্য সামরিক উত্তেজনাও ভয়াবহ পরিণতির দিকে গড়াতে পারে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান নতুন সংঘাতে জড়াচ্ছে?২৪ এপ্রিল ২০২৫দক্ষিণ এশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। এই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি—দুটিই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যদি সামান্যতম ভুল কূটনৈতিক পদক্ষেপও নেয়, তাহলে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়; বরং বৈশ্বিক পরিসরেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।
সাম্প্রতিক হামলার পর ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি এ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ও ভারতের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্পষ্ট করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে রয়েছে। আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানাই।’
ব্রুস আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত-বিতর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নিচ্ছে না। কারণ, এই জটিল সংকট সামাল দিতে সংবেদনশীল ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।
কাশ্মীরে হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ভারত সফরে ছিলেন। তবে এ সফর ছিল পূর্বনির্ধারিত কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা।
হামলার পর ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি হামলার নিন্দা জানান এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর এই সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা যখন বাড়ছিল, তখন ভ্যান্সের ভারতে উপস্থিত থাকার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ও কৌশলগত আলোচনা সম্ভব করে তোলে। এতে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন দিল্লিকে শুধু কৌশলগত নয়, বরং সামরিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে।
দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। সামান্য ভুল পদক্ষেপ থেকেও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ওয়াশিংটন সম্ভবত দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করবে, যাতে সহিংসতা আর না বাড়ে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়।ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে, বিশেষ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কমপ্যাক্ট’ উদ্যোগ চালুর মাধ্যমে। এই অংশীদারত্বের মূল লক্ষ্য হলো সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও জোরদার করা।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাও এগোচ্ছে। ২০২৫ সালের শরতেই তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বাড়ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।
সব মিলিয়ে ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে যে প্রতিষ্ঠিত হবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে থাকবে এবং এ সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
আরও পড়ুনকাশ্মীর: ভারত সরকার ও মিডিয়া দায় এড়াতে পারে কি২৫ এপ্রিল ২০২৫এর বিপরীতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তানও। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলী জারদারি চীন সফর করেন। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া—বিশেষত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
এই অংশীদারত্বকে দুই দেশই ‘সর্বকালীন মৈত্রী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাইরের চাপ মোকাবিলায় একে অপরকে সব সময় সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তারা পুনর্ব্যক্ত করেছে। যদিও পাকিস্তানে চীনের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে, তবু সামগ্রিকভাবে চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক এখনো শক্ত ও টেকসইভাবে এগোচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে আছে এবং সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানায়। আমরা নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করি, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রার্থনা করি এবং এ নৃশংস ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেন, ‘গত এক দশকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কই যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতকে মেজর ডিফেন্স পার্টনার হিসেবে ঘোষণা দিতে উৎসাহিত করেছে—এই শ্রেণিতে ভারতই প্রথম।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। চীন সন্ত্রাসবাদের সব রূপের বিরোধিতা করে। আমরা নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এখন বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ—একদিকে ভারতকে সমর্থন জানানো, অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আসা সংযমের আহ্বানকেও গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। সামান্য ভুল পদক্ষেপ থেকেও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ওয়াশিংটন সম্ভবত দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করবে, যাতে সহিংসতা আর না বাড়ে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়।
এই পরিস্থিতির পরিণতি শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যতের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তো তা খুবই স্পর্শকাতর, কারণ, চীনের আঞ্চলিক প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।
আমির দফতরি নিউজ উইকের প্রতিবেদক
নিউজ উইক থেকে থেকে, ইংরেজি থেকে অনুবাদ