রাষ্ট্রীয় পুরস্কার জীবদ্দশায় দেওয়ার নিয়ম করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Published: 25th, March 2025 GMT
ভবিষ্যতে স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ব্যক্তির জীবদ্দশায় দেওয়ার নিয়ম করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন আগামীতে নিয়ম করতে পারি, যাঁদের মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার পালা, তাঁদের দেওয়া শেষ হওয়ার পর থেকে শুধু জীবিত অবস্থায় যাঁরা আছেন, তাঁদের আমরা পুরস্কার দেব। তাঁদের প্রতি সম্মান জানাব।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এবার মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (পপসম্রাট)। বাবার পক্ষে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে আজম খানের কন্যা অরনী খান বলেন, মৃত্যুর পর স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক দেওয়ার মাধ্যমে সরকার তাঁর বাবাকে যে সম্মান দিয়েছে, তা তাঁদের জন্য অমূল্য গর্বের বিষয়। এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ায় তাঁরা খুবই আনন্দিত। তবে তিনি যদি জীবিত অবস্থায় এই সম্মাননা পেতেন, তাহলে তাঁদের আনন্দ অনেক গুণ বেড়ে যেত।
যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য ব্যক্তিরা এখনো বেঁচে আছেন, জীবিত অবস্থায় যেন তাঁদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়, সরকারের কাছে সেই অনুরোধ জানান অরনী খান।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার চাইতে জীবদ্দশায় পুরস্কারটি পেলে যে আনন্দ দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, ব্যক্তির জন্য তা মরণোত্তর পুরস্কারে পাওয়া যায় না। যাঁকে আমরা সম্মান দেখাচ্ছি, তিনি আমাদের সঙ্গে নেই। আমরা যেন আগামীতে নিয়ম করতে পারি, যাঁদের মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার পালা, তাঁদের দেওয়া শেষ হওয়ার পর থেকে শুধু জীবিত অবস্থায় যাঁরা আছেন, তাঁদের আমরা পুরস্কার দেব।’
পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাঁরা আমাদের জাতিকে এক মহান উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, পুরস্কার দিয়ে কেবল তাঁদের সম্মান করছি না, আমরা বরং জাতি হিসেবে নিজের সম্মান তাঁদের মাধ্যমে আমরা পাচ্ছি। তাঁরা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুল পরিচিত, তাঁরা জাতির জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। আমরা চাই, যাঁদের আমরা সম্মান দিতে চাই, যথাসময়ে যেন সেটি দেই।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা একটি “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ আমরা কোনোক্রমেই বৃথা যেতে দেব না।’
এ সময় এই বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ‘বাংলার সূর্যসন্তান’ উল্লেখ করে তাঁদের কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আজ এ সম্মাননা পেলেন, তাঁরা জীবদ্দশায় এ প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আজকের দিনে তাঁদের অবদানকে আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান স্বরূপ এ বছর সাত বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মনোনীত লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর (বদরুদ্দীন উমর) ছাড়া বাকি ছয়জনই মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছেন। বদরুদ্দীন উমরও আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরস্কার গ্রহণ করেননি। আজকের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ জানিয়েছেন, বদরুদ্দীন উমরের পুরস্কারের রেপ্লিকা জাতীয় জাদুঘরে রাখা হবে।
আর মরণোত্তর পুরস্কার পাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের পক্ষে তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে পুরস্কার নেন। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের পক্ষে তাঁর কন্যা সাদাফ সায সিদ্দিকী, সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদের (কবি আল মাহমুদ) পক্ষে তাঁর কন্যা আতিয়া মীর, সমাজসেবায় ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের পক্ষে তাঁর ছেলে শামেরান আবেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খানের (পপসম্রাট) পক্ষে তাঁর কন্যা অরনী খান এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের (তৎকালীন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনে নিহত) পক্ষে তাঁর মা রোকেয়া খাতুন পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া সংস্কৃতিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার নভেরা আহমেদের পুরস্কার প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠান ও ৩২৪ জন ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ব ত অবস থ য় র প রস ক র প রস ক র দ র স ব ধ নত প রস ক র প প রস ক র র বদর দ দ ন অন ষ ঠ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনকে মিথ্যা, বানোয়াট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের নিয়মিত বৈঠক সম্পর্কিত ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনের তথ্য নাকচ করে বলেছে, সংবাদমাধ্যমটি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার আইএসপিআরের এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নজরে এসেছে যে ইন্ডিয়া টুডে আবারও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠিত একটি নিয়মিত বৈঠক সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।’
এতে বলা হয়েছে, আজ (২৫ মার্চ ২০২৫) প্রকাশিত ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনার মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরুরি বৈঠক করেছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি অপসাংবাদিকতার চর্চা এবং একসময়ের খ্যাতিমান সংবাদমাধ্যমটির বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে পতিত হওয়ার একটি উজ্জ্বল নজির।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র বা যাচাইযোগ্য প্রমাণবিহীন এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানোর আরেকটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। এতে উপস্থাপিত তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ‘আসন্ন অভ্যুত্থান’ সম্পর্কিত দাবি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘ইন্ডিয়া টুডে’ বারবার দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতিমালা উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
আইএসপিআরের প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ইন্ডিয়া টুডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ‘২০২৫ সালের ১১ মার্চ আমরা এক প্রতিবাদলিপিতে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর ও তথ্যগতভাবে ভুল প্রতিবেদনের বিষয় উন্মোচন ও খণ্ডন করেছি।’
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া ইন্ডিয়া টুডের সম্পাদকীয় নীতির ব্যাপারে উদ্বেগজনক ইঙ্গিত দেয়, যা সত্য প্রচারের পরিবর্তে চাঞ্চল্য সৃষ্টির দিকে ধাবিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সেবায় এবং গণতন্ত্র ও শান্তি রক্ষার নীতি সমুন্নত রাখার জন্য তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা ইন্ডিয়া টুডেসহ সকল সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা করতে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিভেদ ও অবিশ্বাস তৈরি করে এমন ভিত্তিহীন ও ক্ষতিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’