নববর্ষের শোভাযাত্রায় রাজধানীর রাজপথে থাকবেন শহীদ বীর আবু সাঈদ। তাঁর দুই হাত প্রসারিত বুক টান করে দাঁড়ানোর অকুতোভয় দৃশ্যটি ইতিমধ্যে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই দৃশ্য ভাস্কর্যে তুলে আনা হবে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায়। শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য হবে ২০ ফুট দীর্ঘ।

এ শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। গতকাল সোমবার অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে শোভাযাত্রার বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, এ শোভাযাত্রা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক।

চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

চারুকলা অনুষদের ডিন জানান, এবার প্রাথমিকভাবে বড় আকারের চারটি ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ২০ ফুট দীর্ঘ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য।

জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। তবে এবার শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থাকবে কি না, তা নির্ধারিত হয়নি।

এ শোভাযাত্রা ছাড়াও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে থাকছে আরও আয়োজন। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এ আয়োজন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান চলবে দুই দিন। থাকবে কনসার্ট, ড্রোন শোসহ বেশ কিছু কর্মসূচি।

শোভাযাত্রায় আবু সাঈদ

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন কর্মসূচি নিয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অংশীজনদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য ড.

নিয়াজ আহমেদ খান। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এতে যোগ দেন। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, এ সভায় এবারের নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। চারুকলা অনুষদ বরাবরের মতোই শোভাযাত্রার মূল আয়োজন করবে। তবে এবার এ শোভাযাত্রা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। এতে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলো নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বড় আকারে রাজা-রানির মুখোশ থাকবে অন্তত চারটি। এ ছাড়া থাকবে প্যাঁচা, পাখি, ফুল—এসবের শতাধিক মুখোশ। গ্যালারির সামনে জলরঙের ছবি আঁকছিলেন শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। নকশা আঁকছিলেন মাটির সরায়। এগুলো সুলভে বিক্রি করে শোভাযাত্রার খরচ মেটানো হবে।প্রাক্তন শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন

চারুকলা অনুষদের ডিন জানান, এবার প্রাথমিকভাবে বড় আকারের চারটি ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ২০ ফুট দীর্ঘ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য। আরও থাকবে একটি করে বাঘ, পাখি ও স্বৈরাচারের প্রতীকী ভাস্কর্য। আর অনেক মুখোশ থাকবে। তিনি জানান, শোভাযাত্রার কোন পথে যাবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা থাকবে, না পরিবর্তন করা হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে আরও সময় আছে, তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

গতকাল অনুষদ চত্বরে দেখা গেল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজ চলছে। জয়নুল গ্যালারিতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন কাজের তদারক করছিলেন। তিনি জানান, বড় আকারে রাজা-রানির মুখোশ থাকবে অন্তত চারটি। এ ছাড়া থাকবে প্যাঁচা, পাখি, ফুল—এসবের শতাধিক মুখোশ। গ্যালারির সামনে জলরঙের ছবি আঁকছিলেন শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। নকশা আঁকছিলেন মাটির সরায়। এগুলো সুলভে বিক্রি করে শোভাযাত্রার খরচ মেটানো হবে।

মন্ত্রণালয়ের আয়োজন

গত রোববার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, এবার প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান হবে দুই দিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তিতে কনসার্ট আয়োজন করা হবে। এতে মাইলস, ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, ভাইকিংস ও স্টোন ফ্রি ব্যান্ড দল এবং বাউল-ফকিরেরা সংগীত পরিবেশন করবেন। আর পয়লা বৈশাখে সন্ধ্যায় চীন সরকারের সহযোগিতায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পয়লা বৈশাখ ও জুলাই বিপ্লব নিয়ে হবে ড্রোন শো।

পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তির অর্থ এই নয়, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বৃহত্তর কোনো স্রোতে মিশিয়ে ফেলা। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে, সেই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা উচিত। এ জন্য সরকার আমাদের আর্থিক, নিরাপত্তা দিয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু সরকারের আয়োজনে আমাদের মিশিয়ে ফেলাকে অন্তর্ভুক্তি বলা যায় না।’

ইলিরা দেওয়ান বলেন, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তিতে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক রীতিতে বিজু, বৈশু, সাংরাই উৎসব করে থাকে। এটি সাধারণত ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। এ উৎসবে অংশ নিতে তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। তাদের এ সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষায় সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রভাতি আয়োজন ও গণসংগীত

ষাটের দশকে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের হাত ধরে। এবারও রমনার বটমূলে প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে ছায়ানট। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ প্রথম আলোকে জানান, অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ও গান নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলক গানের নিয়মিত মহড়া চলছে। এতে শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন। এ ছাড়া ২টি পাঠসহ প্রায় ১৫টি একক গান থাকবে।

সংগীত সংগঠন সুরের ধারাও পয়লা বৈশাখ সকালে সহস্রকণ্ঠের সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তাদের অনুষ্ঠান হয় পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠের পাশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে সুরের ধারার পরিচালক শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জানান, তাঁদের বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে। এবারেও সহস্রকণ্ঠের গান হবে। তবে অনুষ্ঠানের স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি।

এ ছাড়া নববর্ষের আরেকটি প্রধান সংগীতানুষ্ঠান হয়ে থাকে শিশু একাডেমির সামনে নারকেল বীথি চত্বরে। বিশিষ্ট গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে এ সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয়। এবারও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী এ অনুষ্ঠান করছে। ঋষিজের সহসভাপতি শিল্পী ফকির সিরাজ জানান, এবারও তাঁরা নারকেল বীথিতে প্রভাতি অনুষ্ঠান করবেন। তাঁদেরও গানের মহড়া চলছে।

এ ছাড়া এবার প্রথমবারের মতো পয়লা বৈশাখ বিকেল চারটায় বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০ ফ ট দ র ঘ প রথম আল ক নববর ষ র অন ষ ঠ ন র অন ষ র স মন চ র কল র র মত ত হয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে রাজধানীতে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’ থাকছে না।

শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’ রাখা বিষয়ে প্রাথমিক চিন্তা ছিল। কিন্তু এখন এই চিন্তা থেকে সরে আসা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’ (তাঁরা এটাকে ভাস্কর্য বলছেন না) নিয়ে প্রাথমিক স্ক্রেচ হয়েছিল। এর মাধ্যমে আবু সাঈদের বীরত্বকে তুলে ধরার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আবু সাঈদের পরিবার চাইছে না, তাই এ বিষয়ে অনেকের চিন্তা থাকলেও সেখান থেকে সরে আসা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার আজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এবার শোভাযাত্রায় প্রাথমিকভাবে বড় আকারের চারটি ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ২০ ফুট দীর্ঘ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য। আরও থাকবে একটি করে বাঘ, পাখি ও স্বৈরাচারের প্রতীকী ভাস্কর্য। আর অনেক মুখোশ থাকবে। নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা থাকবে, না পরিবর্তন করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে আরও সময় আছে, তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আরও পড়ুননববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকবে ২০ ফুট দীর্ঘ শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য ২৫ মার্চ ২০২৫

চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতিসংঘে দাপ্তরিক ভাষা, ক্রু-৯, বাংলাদেশে স্টারলিংক, আরসা, রাবনাবাদ চ্যানেল কী—জানুন
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকবে না আবু সাঈদের ভাস্কর্য
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’
  • সন্‌জীদা খাতুনের এক জীবন
  • ফুটপাতে এককাতারে ধনী-গরিবের ইফতার
  • আথিয়া-রাহুল প্রথমবার মা-বাবা হলেন
  • প্রথমবার মা-বাবা হলেন আথিয়া-রাহুল
  • নাটকীয় ম্যাচে ইতালিকে হারিয়ে প্রথমবার সেমিফাইনালে জার্মানি