হাতিয়ায় সড়কে অবস্থান নিয়ে ৭ ঘণ্টা বিক্ষোভ এনসিপি নেতা-কর্মীদের
Published: 25th, March 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলার ঘটনায় সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সোমবার রাত আটটা থেকে হাতিয়ার জাহাজমারা বাজারে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে হামলাকারীদের ধরতে প্রশাসনের অভিযানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে এনসিপি নেতা-কর্মীরা সড়ক থেকে সরে যান।
এদিকে হান্নান মাসউদসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শহরের জামে মসজিদ মোড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপূর্ত ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তুহিন ইমরান, জেলা সংগঠক ইয়াছিন আরাফাত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, বনি আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, ‘এ ধরনের হামলা আগে আওয়ামী লীগ করত। এখন যারা হামলা করছে, তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এখন আওয়ামী কায়দায় একটি দল মানুষের মুখে ভাষা কেড়ে নিতে চায়।’
গত সোমবার বিকেলে এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ তাঁর নিজ উপজেলা হাতিয়ার জাহাজমারা এলাকায় গণসংযোগে যান। তিনি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাহাজমারা বাজারে একটি পথসভা করছিলেন। সভায় হান্নান মাসউদের বক্তৃতা চলাকালে কিছু ব্যক্তি পথসভায় বাধা দেন এবং একপর্যায়ে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মারধর শুরু করেন। হামলাকারীরা বিএনপির নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
এ হামলার পর রাত আটটার দিকে হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে জাহাজমারা বাজারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দফায় লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা হয়। তখন আরও কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে আবদুল হান্নান মাসউদও আহত হন। হামলার মধ্যেও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের দল। এনসিপির সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে, তখনো জাহাজমারা বাজারে হামলাকারীরা ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আবদুল হান্নান মাসউদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইউছুফ প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, দুই দফায় সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যখন হামলা চালানো হয়, তখন হামলাকারীদের অনেকের হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তাঁরা হান্নান মাসউদকে হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার হামলা করেছেন। অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও আজ জাহাজমারায় গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হবে।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জাহাজমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ন ন ন ম সউদ হ ন ন ন ম সউদ র অবস থ ন এনস প র কর ম র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
তারা কি ফিরিবে আর...
‘যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষালোভী
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণচুমি’
গানের এই চরণগুলো ভেসে আসছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এই গান শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, মোহিনী চৌধুরীর কথাগুলো আজ কেন শহীদ মিনারে।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছে। ২৫ মার্চ কালরাতের শহীদদের স্মরণে গান গাইছেন একদল শিল্পী। গানটি শেষ হতে না হতেই আবারও তাঁরা গেয়ে উঠলেন—
‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’
সে সময় তাঁদের চেহারায় মোমবাতির আভা। সেই চেহারায় ফুটে উঠছে নানা দাবি। গোবিন্দ হালদারের গানের কথায় যেন সেই দাবিগুলোই তুলে ধরছিলেন—
‘আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ
বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল, শত্রু জাল’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ভুলি নাই ভুলি নাই মৃত্যুমিছিল: জেনোসাইড একাত্তর দায়বদ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মোমবাতি প্রজ্বালন শেষে এভাবেই সব প্রজন্মের কাছে একাত্তরের গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরেন শিল্পীরা। স্মরণ করেছেন কালরাতের শহীদদের।
মোমবাতি প্রজ্বালন ও শহীদ স্মরণের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মোমবাতি প্রজ্বালনের আগে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে আজকের এই আয়োজন করেছি। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ কালরাতের নির্মম গণহত্যা আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি লাভের দাবি জানাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়