হবিগঞ্জ শহরের একটি কাপড়ের দোকানে ঢুকে ‘ঘুষ চাওয়ার’ অভিযোগে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে ঘেরাও করে রেখেছিলেন কয়েক শ মানুষ। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

সোমবার (২৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঘাটিয়াবাজারের এসডি প্লাজা নামের দোকানটিতে ঘটনাটি ঘটে।

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেছেন শামীম আল মামুন। তিনি জানান, দায়িত্ব পালনে এসডি প্লাজায় গিয়েছিলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

বরগুনাগামী বাসে ডাকাতি

হান্নান মাসউদের ওপর হামলা, রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এনসিপির বিক্ষোভ

অভিযুক্ত শামীম আল মামুন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিদর্শক পদে কর্মরত। 

এলাকাবাসী জানান, একটি বিপণিবিতানে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসডি প্লাজার সামনে ঘাটিয়াবাজারের কয়কশ ব্যবসায়ী, দোকানের কর্মচারী ও ক্রেতারা শামীম আল মামুনকে ঘেরাও করে রাখেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন ভুয়া, ভুয়া স্লোগান দিয়ে তাকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে নিরাপত্তা দেয়। পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তোলার সময় কয়েকজন উত্তেজিত লোক শামীম আল মামুনকে চড় মারেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কাস্টমসের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

এসডি প্লাজা দোকান মালিকের ছেলে শুভ দাশ জানান, শামীম আল মামুন এক সপ্তাহ আগে এসডি প্লাজায় একা গিয়ে দোকানের কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। এরপর বিভিন্ন ধারায় মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেদিন তাকে টাকা দেওয়া হয়নি।

তিনি আরো জানান, সোমবার রাতে তিনি (শামীম আল মামুন) দোকানটিতে গিয়ে আবারো ঘুষের টাকার জন্য চাপ দেন। এ সময় দোকানের লোকজন ও কাস্টমস কর্মকর্তার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কয়েকশ লোক এগিয়ে এসে তাকে ঘেরাও করে রাখেন।
পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।  

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

শহিদুল হক মুন্সী বলেন, “ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তা দুই পক্ষ বিপরীতমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন। মূল ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ শ ম ম আল ম ম ন কর মকর ত ক স টমস

এছাড়াও পড়ুন:

হাতি মৃত্যুর মামলায় দোকানি জেলে, চাপা কান্না পরিবারে

‘এই জমির জন্য আমার সোয়ামি (স্বামী) মরে গেছে, নিজে পঙ্গু হইছি, আত্তির (হাতি) মুখ থেইকা ফসল বাঁচাইতে গিয়ে পুলা (ছেলে) এখন জেলে।’ এভাবেই নিজের ক্ষেতে বুক চাপড়ে আহাজারি করে কথাগুলো বলেছেন বৃদ্ধা জুলেখা বেগম।
নালিতাবাড়ী সীমান্তের পূর্ব সমশ্চুড়া এলাকায় বসবাস করেন জুলেখা বেগম। তাঁর সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়ে সবাই বিবাহিত। স্বামীর রেখে যাওয়া দুই একর আবাদি জমি রয়েছে। বনের জমিতে বাড়ি করে ছেলেদের নিয়ে কোনোমতে বসবাস করছেন।
জমির ফসল ও ছেলেদের উপার্জন থেকে কোনোরকম একটি মাটির ঘরে দিনাতিপাত করেন এই বৃদ্ধা। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর জমির পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বড় ছেলে জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার আটক কৃষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বন্যহাতি হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা করেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শেরপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বন বিভাগের মামলায় জেল খাটছেন জিয়াউর রহমান।
স্থানীয়রা জানান, পূর্ব সমশ্চুড়া গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন এলাকার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমান। ময়েজ উদ্দিন ধারদেনা করে নিজের নামে গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালে দুই একর জমি কেনেন। জমির ফসলে সংসার ভালোই চলছিল। ২০১৬ সালের একদিন ওই জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে গেলে স্থানীয় একজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধে ময়েজ উদ্দিনের। এক পর্যায়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ময়েজকে। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরেন জিয়াউর রহমান। সম্প্রতি মধুটিলা ইকোপার্ক-সংলগ্ন সীমান্ত সড়কে একটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন তিনি। দোকানের আয় ও বাবার রেখে যাওয়া জমির ফসল থেকে দুই সন্তানের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চলে যেত। এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে থাকায় মানবেতর দিন 
কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। হাতি মৃত্যুর মামলায় জেলে থাকায় স্বামীকে কিভাবে মুক্ত করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না স্ত্রী রেখা খাতুন।
এলাকাবাসী জানান, ধান পাকার মৌসুম এলেই সীমান্তজুড়ে হাতির উপদ্রব শুরু হয়। দেড় সপ্তাহ ধরে ২০-২৫টি বন্য হাতি গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানক্ষেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। গত বৃহস্পতিবার রাতেও পূর্ব সমশ্চুড়া গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালে থাকা কৃষক জিয়াউর রহমানের বোরো ক্ষেতে হানা দেয় বন্যহাতির পাল। এ সময় একটি মাঝ বয়সী পুরুষ হাতি ওই ক্ষেতের পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক জিআই তারে আটকে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
জিয়াউর রহমানের বোন মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘এই জমি রক্ষা করতে গিয়ে মাইনসের (মানুষের) হাতে বাবা প্রাণ হারিয়েছেন। এখন ফসল বাঁচাতে গিয়ে হাতি মৃত্যুর মামলায় ভাই জেলে।’ আক্ষেপ করে জানান, হাতির জন্য কোনো বছরই ফসল ঘরে তোলা যায় না। তাই তাঁর ভাই ক্ষেতের পাশে বিদ্যুতের তার দিয়েছিল, যেন হাতির পাল কষ্টের ফসল নষ্ট করতে না পারে। তিনি বলেন, ‘বছর বছর যদি আত্তি ফসল খেয়ে যায়, তাহলে বাঁচমু কেমনে।’
স্থানীয় যুবক স্যামুয়েল চাম্বুগং জানান, সন্ধ্যার পর পরই হাতির পাল হাঁক-ডাক শুরু করে। সীমান্তের কৃষকের গলার কাঁটা এই হাতি।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খানের ভাষ্য, জেনারেটরের 
বিদ্যুৎ দিয়ে বন্যহাতি হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিয়াউর রহমান জিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ