ভুট্টা খেতে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতকের মায়ের সন্ধান মিলল
Published: 25th, March 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামে ভুট্টা খেত থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকের মায়ের সন্ধান পেয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে সোমবার রাতে ওই নবজাতকের মায়ের সন্ধান পায় তারা।
জানা যায়, ভুট্রা খেতের পাশে নানা বাড়িতে ভূমিষ্ঠ হয় ওই নবজাতক। তার মায়ের নাম শিল্পী বেগম। সোমবার রাতে নবজাতকের মায়ের সন্ধান পাওয়ার পর এলাকায় বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে নবজাতকের নানাবাড়ি ভাঙচুর করতে গেলে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের প্রতিরোধ করেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামের সিরাজ উদ্দীনের মেয়ে শিল্পী বেগমের সঙ্গে ১০ বছর আগে শহরের গোয়ালপাড়া গ্রামের আবু রায়হান নামে এক যুবকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা হন শিল্পী বেগম। অভাব অনটনের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে রায়হান তিন বছর আগে পুরুষ থেকে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেন। পরে সংসার ফেলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি।
এদিকে তিন সন্তান নিয়ে বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবন চলে শিল্পী বেগমের। শহরে ভাড়াবাসায় থাকলেও কিছুদিন আগে সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামে বাবার বাড়িতে আসেন। সোমবার সকালে প্রসব যন্ত্রণায় এক পর্যায়ে ভুট্রার খেতে চলে যান তিনি। সেখানেই কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে নবজাতককে ফেলে বাড়িতে চলে আসেন শিল্পী। পরে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবজাতককে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নবজাতকে মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘স্বামী হিজড়া হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। বাবার বাড়িতে আসার পরে হঠাৎ প্রসব ব্যথা উঠলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়নি। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলে এত কিছু ঘটতো না। প্রথমে অনেক ভয়ে ছিলাম, সে কারণে বাচ্চা কী করব ভেবে না পেয়ে ভুট্রা খেতে রেখে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমার শিশুকে কেউ নিতে রাজি তলে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে।’
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘বার বার বলার পরে অবশেষে শিল্পী শিকার করেছেন যে ওই নবজাতক তারই। সে নবজাতককে ভ ফেলে আসে। এর আগে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সে এক শিশু বিক্রি করেছে।’
স্থানীয় মাতবর আব্দুস সুবহান বলেন, ‘প্রশাসন বিষয়টি জানে। আমরা নবজাতককে উদ্ধার করেছি। বর্তমানে ওই নবজাতক চিকিৎসাধীন।’
ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার করা নবজাতকের মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ ও নবজ তকক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাসের দাম বাড়ায় বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটি বৈষম্যমূলক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (ইউরোচ্যাম) নতুন ঘোষিত গ্যাসের দাম বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারাও দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ইকােনমিক জােনস ইনভেস্টর অ্যাসােসিয়েশন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সমিতির নেতারা জানান, এ সিদ্ধান্ত বিনিয়াগ, উৎপাদন ব্যায় এবং রপ্তানি প্রতিযােগিতার সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারাও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
গত রোববার নতুন শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন, সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। পাশাপাশি নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১ দশমিক ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফিকি বলেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত মূল্যনীতি শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।
এতে বলা হয়, ভিন্ন ভিন্ন দামের মডেল নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং বিনিয়োগ সম্মেলনের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।
ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘আমরা জ্বালানির চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইউরোচ্যামের প্রতিক্রিয়া
গ্যাসের নতুন দামের মডেলটিকে বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ব্যবসায়ী সংগঠন ইউরোচ্যাম বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং নতুন ও সম্প্রসারণশীল শিল্পের ওপর উচ্চমূল্য আরোপের মাধ্যমে বিনিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
ইউরোচ্যাম বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা নিশ্চিত এবং শিল্প সম্প্রসারণে সহায়তা করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি শুল্ক কাঠামো বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রস্তাবিত এই কাঠামো ব্যবসার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত করার হুমকি তৈরি করছে এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে।’