ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামে ভুট্টা খেত থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকের মায়ের সন্ধান পেয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে সোমবার রাতে ওই নবজাতকের মায়ের সন্ধান পায় তারা।

জানা যায়, ভুট্রা খেতের পাশে নানা বাড়িতে ভূমিষ্ঠ হয় ওই নবজাতক। তার মায়ের নাম শিল্পী বেগম। সোমবার রাতে নবজাতকের মায়ের সন্ধান পাওয়ার পর এলাকায় বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে নবজাতকের নানাবাড়ি ভাঙচুর করতে গেলে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের প্রতিরোধ করেন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামের সিরাজ উদ্দীনের মেয়ে শিল্পী বেগমের সঙ্গে ১০ বছর আগে শহরের গোয়ালপাড়া গ্রামের আবু রায়হান নামে এক যুবকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা হন শিল্পী বেগম। অভাব অনটনের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে রায়হান তিন বছর আগে পুরুষ থেকে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেন। পরে সংসার ফেলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি।

এদিকে তিন সন্তান নিয়ে বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবন চলে শিল্পী বেগমের। শহরে ভাড়াবাসায় থাকলেও কিছুদিন আগে সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামে বাবার বাড়িতে আসেন। সোমবার সকালে প্রসব যন্ত্রণায় এক পর্যায়ে ভুট্রার খেতে চলে যান তিনি। সেখানেই কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে নবজাতককে ফেলে বাড়িতে চলে আসেন শিল্পী। পরে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবজাতককে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নবজাতকে মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘স্বামী হিজড়া হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। বাবার বাড়িতে আসার পরে হঠাৎ প্রসব ব্যথা উঠলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়নি। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলে এত কিছু ঘটতো না। প্রথমে অনেক ভয়ে ছিলাম, সে কারণে বাচ্চা কী করব ভেবে না পেয়ে ভুট্রা খেতে রেখে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমার শিশুকে কেউ নিতে রাজি তলে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে।’

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘বার বার বলার পরে অবশেষে শিল্পী শিকার করেছেন যে ওই নবজাতক তারই। সে নবজাতককে ভ ফেলে আসে। এর আগে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সে এক শিশু বিক্রি করেছে।’

স্থানীয় মাতবর আব্দুস সুবহান বলেন, ‘প্রশাসন বিষয়টি জানে। আমরা নবজাতককে উদ্ধার করেছি। বর্তমানে ওই নবজাতক চিকিৎসাধীন।’

ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার করা নবজাতকের মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ ও নবজ তকক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হাতি মৃত্যুর মামলায় দোকানি জেলে, চাপা কান্না পরিবারে

‘এই জমির জন্য আমার সোয়ামি (স্বামী) মরে গেছে, নিজে পঙ্গু হইছি, আত্তির (হাতি) মুখ থেইকা ফসল বাঁচাইতে গিয়ে পুলা (ছেলে) এখন জেলে।’ এভাবেই নিজের ক্ষেতে বুক চাপড়ে আহাজারি করে কথাগুলো বলেছেন বৃদ্ধা জুলেখা বেগম।
নালিতাবাড়ী সীমান্তের পূর্ব সমশ্চুড়া এলাকায় বসবাস করেন জুলেখা বেগম। তাঁর সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়ে সবাই বিবাহিত। স্বামীর রেখে যাওয়া দুই একর আবাদি জমি রয়েছে। বনের জমিতে বাড়ি করে ছেলেদের নিয়ে কোনোমতে বসবাস করছেন।
জমির ফসল ও ছেলেদের উপার্জন থেকে কোনোরকম একটি মাটির ঘরে দিনাতিপাত করেন এই বৃদ্ধা। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর জমির পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বড় ছেলে জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার আটক কৃষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বন্যহাতি হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা করেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শেরপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বন বিভাগের মামলায় জেল খাটছেন জিয়াউর রহমান।
স্থানীয়রা জানান, পূর্ব সমশ্চুড়া গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন এলাকার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমান। ময়েজ উদ্দিন ধারদেনা করে নিজের নামে গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালে দুই একর জমি কেনেন। জমির ফসলে সংসার ভালোই চলছিল। ২০১৬ সালের একদিন ওই জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে গেলে স্থানীয় একজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধে ময়েজ উদ্দিনের। এক পর্যায়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ময়েজকে। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরেন জিয়াউর রহমান। সম্প্রতি মধুটিলা ইকোপার্ক-সংলগ্ন সীমান্ত সড়কে একটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন তিনি। দোকানের আয় ও বাবার রেখে যাওয়া জমির ফসল থেকে দুই সন্তানের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চলে যেত। এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে থাকায় মানবেতর দিন 
কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। হাতি মৃত্যুর মামলায় জেলে থাকায় স্বামীকে কিভাবে মুক্ত করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না স্ত্রী রেখা খাতুন।
এলাকাবাসী জানান, ধান পাকার মৌসুম এলেই সীমান্তজুড়ে হাতির উপদ্রব শুরু হয়। দেড় সপ্তাহ ধরে ২০-২৫টি বন্য হাতি গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানক্ষেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। গত বৃহস্পতিবার রাতেও পূর্ব সমশ্চুড়া গুচ্ছগ্রাম-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালে থাকা কৃষক জিয়াউর রহমানের বোরো ক্ষেতে হানা দেয় বন্যহাতির পাল। এ সময় একটি মাঝ বয়সী পুরুষ হাতি ওই ক্ষেতের পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক জিআই তারে আটকে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
জিয়াউর রহমানের বোন মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘এই জমি রক্ষা করতে গিয়ে মাইনসের (মানুষের) হাতে বাবা প্রাণ হারিয়েছেন। এখন ফসল বাঁচাতে গিয়ে হাতি মৃত্যুর মামলায় ভাই জেলে।’ আক্ষেপ করে জানান, হাতির জন্য কোনো বছরই ফসল ঘরে তোলা যায় না। তাই তাঁর ভাই ক্ষেতের পাশে বিদ্যুতের তার দিয়েছিল, যেন হাতির পাল কষ্টের ফসল নষ্ট করতে না পারে। তিনি বলেন, ‘বছর বছর যদি আত্তি ফসল খেয়ে যায়, তাহলে বাঁচমু কেমনে।’
স্থানীয় যুবক স্যামুয়েল চাম্বুগং জানান, সন্ধ্যার পর পরই হাতির পাল হাঁক-ডাক শুরু করে। সীমান্তের কৃষকের গলার কাঁটা এই হাতি।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খানের ভাষ্য, জেনারেটরের 
বিদ্যুৎ দিয়ে বন্যহাতি হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিয়াউর রহমান জিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ