বায়ুদূষণে ঢাকাকে ছাড়াল কোন ৩ শহর
Published: 25th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্রের রোগ) মেডিসিন বিভাগে শয্যাসংখ্যা ৩৭। গতকাল সোমবার প্রতিটি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগী আসলে ছিল ৯০–এর বেশি। কারণ, শয্যায় স্থান না হওয়ায় অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে আছেন। এ তথ্য জানালেন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক রোগীর শয্যার বিপরীতে আরও দুই রোগী রাখতে হচ্ছে। কারণ, শয্যাসংকট। দিন দিন শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ছে। শহরে যে দূষণ, তাতেই এ অবস্থা।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখা হয়। চলতি মাসে রোগীসংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভাগ সূত্র জানাচ্ছে।
রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়চলতি মার্চ মাসে (২৩ তারিখ পর্যন্ত) ময়মনসিংহের বায়ুদূষণ রাজধানী ঢাকার চেয়ে বেশি। দেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক বেশি হয়। তবে এ মাসে ময়মনসিংহসহ রংপুর ও রাজশাহীর বায়ুর মানও ঢাকার চেয়ে খারাপ। চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত রাজশাহীর বাতাস। এ তথ্য খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো.
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুর মান নির্ণয়ের জন্য নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এর মধ্যে অনেক বেশি পরিচিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এয়ার নাউ। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও প্রায় নিয়মিত দিনভিত্তিক বায়ুমানের অবস্থা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। এর তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিদিন অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, ক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড এবং ওজোনের মান দেখে। দেশের ৩১টি স্টেশনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এসব দূষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান শুধু অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (জিএম ২.৫) মান দেখে। সে অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুর যে মান পর্যবেক্ষণ করে, তা আরও বিস্তৃত।
ঢাকার চেয়ে বেশি দূষণ ৩ নগরে
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫১ হলে তাকে ভালো বলা হয়। মান ৫১ থেকে ১০০ হলে বায়ুর মান মাঝারি। ১০১ থেকে ১৫০ বায়ুর মান সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকারক বলে গণ্য হয়। বায়ুর মানকে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয় যদি মান ১৫১ থেকে ২০০–এর মধ্যে থাকে। খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়, মান যখন ২০১ থেকে ৩০০–এর মধ্যে থাকে। আর ৩০০–এর বেশি মান হলে তা হয় দুর্যোগপূর্ণ। এ হিসাবে মার্চের ২৩ দিনের একদিনও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুরের মানুষ নির্মল বায়ু পায়নি।
চলতি মাসের ২৩ দিনের মধ্যে চার দিন বাদ দিয়ে ১৯ দিনের দূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সে চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল রাজশাহীতে—গড় মান ২০৩। এরপর ছিল ময়মনসিংহে—মান ১৯৮। উত্তরের আরেক নগর রংপুরের মান ছিল ১৮৭। চার নগরীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম ছিল ঢাকার মান—১৭৮। দিনের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল ১২ মার্চ রংপুরে—৩২৩। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষণও ছিল এ শহরে ১১ মার্চ। এর মান ছিল ৩০৯। তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষণ ছিল ১ মার্চ—রাজশাহীতে। এর মান ছিল ৩০৩।
ঢাকার বাইরে এত দূষণ কেন
ময়মনসিংহ শহরের রাস্তায় হাঁটলে একটি সাধারণ দৃশ্য প্রায় সর্বত্র চোখে পড়ে। তা হলো, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন উপচে পড়ছে আবর্জনা। এসব পরিষ্কার করতে নগর কর্তৃপক্ষের তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। নির্মাণকাজের ধুলাবালুতে আশপাশ প্রায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সেসব দেখারও তেমন কেউ নেই।
রংপুর শহরতলিতে ইটের ভাটা আছে অনেক। এগুলোর দূষণ প্রায় অনিয়ন্ত্রিত।
রাজধানীর বাইরে যানবাহন, কলকারখানা, বর্জ্য পোড়ানো, ইটভাটা ইত্যাদি দূষণের নানা উৎসের উপস্থিতি কম। তারপরও দূষণ এত বেশি কেন বিভাগীয় এসব শহরে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা, চালের কল এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।’
দেশের বায়ুদূষণের একটি বড় উপাদান আন্তসীমান্ত দূষিত বায়ুপ্রবাহ। যেটি ভারতের হরিয়ানা ও দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোরের মতো অঞ্চল ঘুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে এর প্রবেশের পথ উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা রংপুর। তাই এখানে এবং রাজশাহীতে স্থানীয় উৎসের পাশাপাশি এই বায়ুপ্রবাহের দায় আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সালাম। তিনি বলেন, আন্তসীমান্ত বায়ুকে কারণ দেখিয়ে অবশ্য স্থানীয় উৎসগুলোর নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত হচ্ছে। এর দায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এড়াতে পারে না।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও ময়মনসিংহ]
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রামগতিতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার ভোরে উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইলে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
রামগতির ঘটনায় জানা গেছে, ওই গহবধূ সাহ্রির পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের পাশের টয়লেটে যান। আসার পথে দু’পাশ থেকে অপরিচিত দুই ব্যক্তি তাঁকে জাপটে ধরে পাশের নির্জন পুকুরপাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওই নারী। জ্ঞান ফেরার পর চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে তাঁকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, তাঁর বাড়ি সিলেট জেলায়। বছর দুয়েক আগে চরগাজী ইউনিয়নের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। এক সন্তানসহ ভালোভাবে সংসার চলছে। বিয়ের দুই মাস পর একদিন পাশের গ্রামে স্বামীর বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান তিনি। সেখানে ননদের জামাই জামাল আহমেদ তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। পারিবারিকভাবে এর প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর কয়েক মাস পর বাড়িতে এসে তাঁকে ধর্ষণ করে চলে যায় প্রভাবশালী জামাল। এ ঘটনার বিচার দাবি করলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সালিশ বৈঠক হতে দেয়নি ধর্ষক।
ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা একাধিক নারী জানান, গৃহবধূর চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে আসি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করছি। রামগতি থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইলের রাজগাতী ইউনিয়নে গত শুক্রবার ধর্ষণের শিকার শিশুটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বড়াইল গ্রামে তারাবির নামাজ পড়তে গেলে স্থানীয় ফারুক মিয়ার ছেলে আরিয়ান আহমেদ শাওন শিশুটিকে ধর্ষণ করে। গুরুতর অবস্থায় এখন সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার নান্দাইল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন শাওনকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।