মহান স্বাধীনতা উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
Published: 25th, March 2025 GMT
মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ইতোমধ্যে সৌধ মিনারসহ পুরো চত্বরের হাঁটার পথ, বেদি, স্থাপনা সেজেছে রঙ-তুলির আঁচড়ে। বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রঙ-বেরংয়ের বাহারি ফুল।
বুধবার (২৬ মার্চ) ৫৫তম মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সারা দেশ। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পালন করা হবে নানা কর্মসূচি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির যে বীর সন্তানেরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে সমগ্র জাতি।
এদিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্য ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নামবে স্মৃতিসৌধে।
স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্মৃতিসৌধ চত্বরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ইটের পথ, শহীদ বেদি ও গণকবর ধোয়ামোছার পর সাদা রঙের শুভ্র আভায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। বৃক্ষরাজির প্রাঙ্গণ আর সবুজ ঘাসের গালিচা কেটে-ছেঁটে নান্দনিক করে তোলার কাজও শেষ করেছেন গণপূর্তের কর্মচারীরা।
স্মৃতিসৌধ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ২৬ মার্চ (বুধবার) স্বাধীনতা দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন সর্বস্তরের মানুষ। ফুল, শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁরা। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষে নানাভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
গত রবিবার স্মৃতিসৌধ চত্বর ঘুরে দেখা যায়, মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভার গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা। এদের মধ্যে কয়েকজন মিলে সড়কের পাশে ফাঁকা জায়গায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘাসের চারা রোপণ করছেন। স্মৃতিসৌধ চত্বর পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে, রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বেদিসংলগ্ন সিঁড়িগুলো। সবুজ ঘাসের গালিচা কেটেছেঁটে নান্দনিক করে তোলা হচ্ছে। পুরোনো ফুলের গাছগুলোকে পরিচর্যা করার পাশাপাশি রোপণ করা হয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছ। ভবনের দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে বর্ণিল আলোকবাতি।
স্মৃতিসৌধ চত্বরে ফুলের চারা রোপণ করা আব্দুল মতিন বলেন, “স্মৃতিসৌধে শহীদদের কবর রয়েছে। এটি দেশের স্বাধীনতার স্মৃতি স্তম্ভ। এখানে কাজ করতে আমার কাছে ভালোই লাগে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করতেছি।”
সবুজ ঘাসের গালিচা কেটেছেঁটে নান্দনিক করার কাজ করা রওশন মিয়া বলেন, “ঘাস কেটে, ফুলের চারা লাগিয়ে স্মৃতিসৌধ সুন্দর করতেছি। এখানে কাজ করতে গর্ব হয়, ভালো লাগে।”
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পুরো স্মৃতিসৌধ চত্বর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিপাটি করা হয়েছে। এছাড়া পুরো চত্বরে ফুল দিয়ে সাজানো, রং তুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আলোকসজ্জা, লেক সংস্কারসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা এ কার্যক্রমে শতাধিক কর্মী কাজ করেছেন । নিরাপত্তার লক্ষ্যে গত ১৬ মার্চ থেকে স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সংরক্ষিত করা হয়েছে। ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।”
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো.
ঢাকা/সাব্বির/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২৬ ম র চ প রস ত ত গণপ র ত উপলক ষ ক জ কর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-মীর মশাররফ-লালন, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা মিলেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ফকির লালন সাঁই, মুঘল সম্রাট আকবর, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথসহ অন্তত ৩৮ জন বিখ্যাত মনীষীর। তবে তারা আসল নয়, ডামি। ডামি হলেও তাদের মাধ্যমে দারুণভাবে ফুটেছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের চেহারা ও অবয়ব। তাদের দেখে মুগ্ধ নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীরা।
এছাড়াও শোভাযাত্রায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের সচিত্র দেখা গেছে।
সোমবার সকালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল সাগে ৯টায় কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমি থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা প্রশাসন। আনন্দ শোভাযাত্রাটি হলবাজার, গণমোড়, থানামোড়, গোলচত্বর, উপজেলা সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় আবুল হোসেন তরুণ অডিটোরিয়ামে চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে দই চিড়া খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমীর ১২৫ জন সংগীত ও নৃত্যশিল্পী নেন এবং শোভাযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রুহিনা ইসলাম প্রজ্ঞা বলেন, বৈশাখী শোভাযাত্রায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিয়ারী সুন্দরী, কাজী মিয়াজান, মীর মশাররফ হোসেনসহ অসংখ্য মনীষীদের দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে।
কলেজ ছাত্র শুভ মোল্লা বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জাঁকজমক হয়েছে আয়োজন। বন্ধুরা মিলে খুবই আনন্দ করছি।
সুবর্ণা খাতুন নামের এক শিশু জানায়, পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে নৃত্য করেছি। দই চিড়া খেয়েছি। খুবই ভালো লাগছে।
প্রায় ১৮ ধরে বৈশাখের শোভাযাত্রায় মীর মশাররফ হোসেনের ডামি চরিত্রে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান মানু। তিনি বলেন, প্রতি বৈশাখে একই চরিত্রে থাকি। নিজের কাছে খুবই ভালো লাগে। যতদিন বাঁচি, এ চরিত্রেই থাকতে চাই।
আধুনিকতার বাইরে এসে যেন বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারি। সেজন্য সম্রাট আকবরের ডামি সেজেছিলাম। কথাগুলো বলছিলেন চয়ন শেখ।
পরিচয় জানতেই 'বল বীর, বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারই নত শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!' কবিতার কয়েকটি লাইন বলতে থাকেন পান্টি এলাকার মিলন হোসেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডামি ছিলেন।
নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ইতিহাস ঐহিত্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিত করতে রবীন্দ্রনাথ, মশাররফ, কাঙাল, বাঘা যতীনসহ ৩৮টি ডামি চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ এর গণ অভ্যর্থান, প্যালেস্টাইনের চিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানান ডামি পরিচালক কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাস বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রায় বিখ্যাত ব্যক্তি ও মনীষীদের চরিত্র দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। তা দেখে মুগ্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ডামি ছাড়াও চিড়া দই খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।