ইয়েমেনে হামলা পরিকল্পনার আলোচনা ফাঁস, গোপন গ্রুপে ঢুকে পড়লেন মার্কিন সাংবাদিক
Published: 25th, March 2025 GMT
সম্প্রতি ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গোপন আলোচনা ফাঁস হয়েছে। এনক্রিপ্টেড চ্যাট অ্যাপ ‘সিগনাল’ থেকে একটি আলোচনার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যদিও এটি শত্রুদের হাতে পড়েনি, তবে ঘটনাটি নজরে এসেছে সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গের।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিদের ওপর হামলা পরিচালনা সমন্বয়ের জন্য খোলা একটা সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রুপে এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে যুক্ত করেছিলেন। ওই সাংবাদিক ভুলক্রমে ব্যক্তিগত সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত হয়েছিলেন। ওই গ্রুপে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা ইয়েমেনে সামরিক হামলার সমন্বয় করছিলেন।
গ্রুপটিতে আছেন—প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং অন্যরা। এই গ্রুপে হামলার সময়সূচি, লক্ষ্যবস্তু এবং অস্ত্রের প্যাকেজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অথচ, বিষয়গুলো ক্লাসিফায়েড সরকারি ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধ থাকার কথা।
‘হুতি পিসি স্মল গ্রুপ’ নামের গ্রুপ চ্যাটটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা দলের মূল সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে
গত ১৫ মার্চ যখন ইয়েমেনের হুথি টার্গেটে মার্কিন হামলা শুরু হয়, তখন চ্যাট গ্রুপে ওয়াল্টজ লিখেন, ‘অসাধারণ কাজ!’ এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত ও আগুনের ইমোজি পাঠান। অন্য কর্মকর্তারাও এতে সাড়া দেন।
কিন্তু এই সাফল্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন বহিরাগত এ ধরনের সংবেদনশীল চ্যাটে অনুপ্রবেশ করতে পারলে তা প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা। আরও আশঙ্কার বিষয়, এ ধরনের আলোচনার জন্য সরকার নির্ধারিত সুরক্ষিত যোগাযোগ চ্যানেল ব্যবহার করা হয়নি, যা গুপ্তচরবৃত্তি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।
সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট মার্ক ওয়ার্নার বলেন, ‘এই প্রশাসন গোপন তথ্য ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বহীন আচরণ করছে, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ক্রিস ডেলুজিও হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটিতে তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন, এবং দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি করতে হবে।’
এ বিষয়ে রিপাবলিকান নেতারাও সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসম্যান ডন বেকন বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা উচিত হয়নি। রাশিয়া ও চীন অবশ্যই এসব মনিটর করছে।’
এদিকে, ট্রাম্প এই বিষয়ে অজ্ঞতার ভান করেছেন। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এই খবরের বিষয়ে কিছু জানতাম না।’
তবে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জাতীয় নিরাপত্তা টিম ও মাইকেল ওয়াল্টজের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটনে গুঞ্জন রয়েছে, এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের পদত্যাগ আসতে পারে।
সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকের সাংবাদিকের গ্রুপে যুক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ছিল। গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর এবং হামলার আগে বা পরেও তাকে গ্রুপের কোনো সদস্য গ্রুপ থেকে বের করে দেননি বা তিনি কীভাবে যুক্ত হয়েছেন সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে, নারীকে শিকল দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন
বরগুনার আমতলীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ায় এক নারীকে (৩২) মারধর করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, ওই বাড়ির লোকজন তাঁকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন। আহত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ওই নারীর সঙ্গে খালাতো দেবর আবুল কালাম মীরের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনার জেরে গত মার্চ মাসে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ওই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে। ওই তিন সন্তান তাদের দাদির কাছে থাকে। বিবাহবিচ্ছেদের পর ওই নারী আবুল কালাম মীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। তবে আবুল কালাম মীর রাজি হচ্ছিলেন না। গত রোববার সন্ধ্যায় ওই নারী কালামের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দাবিতে অনশনে বসেন। ওই সময় কালাম বাড়িতে ছিল না। রাতে কালামের মা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা ওই নারীকে লোহার শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। তাঁর দুই হাত, দুই পা, বাহু, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়।
খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ছালাম সিকদার ও হাসনেহেনা বেগম তাঁকে উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে গতকাল সোমবার তাঁকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী বলেন, ‘বিয়ের দাবিতে আবুল কালাম মীরের বাড়িতে অনশনে বসেছিলাম। তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমাকে লোহার শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। আমাকে তিন ঘণ্টা নির্যাতন করেছেন। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর বড় ভাই আবুল হোসেন মীর বলেন, ‘যে নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, তিনি ও তাঁর স্বামী কালামের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন। ওই টাকা যাতে শোধ করতে না হয়, সে জন্য তাঁরা প্রেমের সম্পর্কের নাটক সাজিয়েছেন। আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো সম্পর্ক ছিল না।’
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁরা একটি নাটক সাজিয়েছেন। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’