পাঁচতারকা হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তারা কেউই নেই। গতকাল ম্যাচ-পূর্ববর্তী ৪০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে প্রায়ই আলোচনা উঠে আসে হামজা দেওয়ান চৌধুরী ও সুনীল ছেত্রির নাম। বাংলাদেশ-ভারত দু’দলের কোচই আলাদা বিশ্লেষণে বাংলাদেশের হামজা ও ভারতের ছেত্রিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। শিলংয়ে আজ বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের মধ্যে ভেতরের লড়াইটা হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রবাসী হামজা ও ভারতের ৪০ বছর বয়সী তারকা ছেত্রির মধ্যে।
হামজার আবির্ভাব বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য নতুন আলো। শিকড়ের টানে ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের ফুটবলে নাম লেখানো এ ডিফেন্ডার আজ লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াবেন। মঙ্গলবার ম্যাচের দিন জাতীয় সংগীতের সময় হয়তো হামজার বুকের মধ্যে কম্পন শুরু হবে। কারণ বাবা-মায়ের কাছে বাংলাদেশের গল্প শুনলেও এই প্রথম যে গাইবেন, ‘আমার সোনার বাংলা.
বাংলাদেশের কোটি ফুটবলপ্রেমীর দৃষ্টি থাকবে হামজার দিকে। গত কয়েক দিনে এক ছাদের নিচে থাকা হামজা সতীর্থদের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে অতীতের লড়াইয়ের গল্প শোনা হামজা ভালো করেই জানেন, তাকে কী সামলাতে হবে। তাঁর সামনে যে আজ ছেত্রির মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভারতীয় কিংবদন্তিকে থামানোর চ্যালেঞ্জ। দুই বড় তারকার লড়াইয়ের আগে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সেরার বিতর্ক। হামজা এখনও বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ না খেললেও স্কিল দক্ষতার কারণে ছেত্রির সঙ্গে তাঁর তুলনা শুরু হয়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সেই তুলনায় না গিয়ে হামজা ও ছেত্রির প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, হামজা ও সুনীলের ফিরে আসা আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হতে চলেছে। এটি সত্যিই খুব প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হতে চলেছে। তবে এটা শুধু তাদের নিয়েই হবে না, নিশ্চিতভাবে। আমরা যদি আগামীকাল (আজ) জিততে পারি, তবে সেটা শুধু হামজার জন্য হবে না। হামজা অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার মনে হয়, সুনীলের ফিরে আসা ভারতকে শক্তিশালী করেছে। যে জিতুক না কেন, সেটা দলের জন্য হবে।’
হামজা ও ছেত্রি দু’জনই ভিন্ন পজিশনে খেলেন। ক্যারিয়ারের ভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারা। ভারতের আক্রমণভাগের মূল অস্ত্র হলেন ছেত্রি। বল পজিশনে দক্ষতা আর নিখুঁত ফিনিশার হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ছেত্রি। হামজার পজিশন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ট্যাকলিং, স্টামিনা ও আক্রমণ প্রতিহত করার দক্ষতায় হামজা ক্লাবের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ আর সতীর্থকে বল জোগান দেওয়া মূল কাজ হওয়ায় হামজার নামের পাশে গোল সংখ্যা সেভাবে নেই। লেস্টার সিটির জার্সিতে এফএ কাপ জেতা হামজা ইংল্যান্ডে বিশ্বমানের সব প্রতিপক্ষকে থামিয়ে দলকে অনেকবারই রক্ষা করেছেন।
ছেত্রি ও হামজার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলা হামজা ছয় বছর পর স্বাদ পেতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচের। আর ছেত্রি তো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের কিংবদন্তি। ১০ মাস আগে অবসর নেওয়ার পর ভারতকে কক্ষ পথে ফেরানোর জন্য কোচ মানোলো মার্কুইজের ডাকে সাড়া দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরেন ছেত্রি। অতীতে অনেকবারই বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবানো ছেত্রি আতঙ্ক এবারও আছে বাংলাদেশ দলে। তবে হামজার কারণে আগের মতো সেই ভয়টা নেই সতীর্থদের। কারণ হামজা তো বিশ্বমানের ফুটবলার।
যেমনটি বলেছেন, ভারত কোচ মানোলো, ‘আমি মনে করি, সে (হামজা) উঁচু মানের ফুটবলার। সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছে, এখন তার দল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে, কিন্তু তারাও লিগে উঠবে। আমি মনে করি, তার মতো একজন খেলোয়াড়ের জাতীয় দলের হয়ে খেলা এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, এশিয়ার ফুটবলের জন্য ভালো। আমি যেটা অনুভব করতে পারছি, তার সতীর্থরা তার সঙ্গে খেলতে অনুপ্রেরণা পাবে, মাঠের খেলায় এটার কি প্রভাব পড়বে, তা অবশ্য আমি জানি না।’
ভারতের কোচ এর পর শুনিয়েছেন কেন সুনীলকে ফিরিয়েছেন, ‘সুনীল ভারতীয় ফুটবলে কিংবদন্তি। দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আমি তাকে ডেকেছিলাম, কেননা আমরা প্রথম ম্যাচে গোল পাচ্ছিলাম না। বেশি সুযোগও তৈরি করতে পারছিলাম না, যদিও কিছু সুযোগ মিস করেছিলাম। তার ফেরাটা আমাদের জন্য দারুণ বিষয়।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যার অস্বীকার ঠেকাতে আগে বিচার দরকার
ব্যক্তির স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ।
সহুল আহমদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। গণহত্যা বা এ ধরনের অপরাধের ঘটনার সত্যতার অস্বীকার ঠেকাতে সবার আগে দরকার বিচার।
এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম ও লেখক সারোয়ার তুষার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাতের পঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—গণহত্যার পক্ষগুলো সব সময় জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ১৯৭১–এর পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে একাত্তরের ২৫ মার্চ সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই–সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন।’
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।