ছুটিতে আজ বাড়িতে আসার কথা ছিল, কিন্তু ফিরল বিজিবি সদস্য বেলালের নিথর দেহ
Published: 25th, March 2025 GMT
এবারের ঈদে কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়েছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হাসান। ছুটিতে তিনি বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, ছুটির আগেই বাড়িতে এল তাঁর নিথর দেহ।
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাগরে ডুবে যাওয়া একটি নৌযানে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যান বেলাল হাসান (৩৫)। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। প্রায় ১১ বছর আগে তিনি বিজিবিতে যোগ দেন। তিনি শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ফাঁড়িতে সেপাই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় মেয়ের বয়স ৮ বছর, ছোট মেয়ের দেড় বছর।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে মুরাদনগরের কাজিয়াতল গ্রামে জানাজা শেষে বেলাল হাসানকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এর আগে গতকাল ভোর চারটার দিকে বেলালের মরদেহ কক্সবাজার থেকে বাড়িতে আসে।
বেলাল হাসানের অকাল মৃত্যুতে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী রোকসানা খানম প্রিয়জনকে হারিয়ে চিৎকার করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
বেলালের স্ত্রী রোকসানা খানম বলেন, ‘ঈদে বাড়ি এসে আমাদের নিয়ে আনন্দ করবেন, এ জন্য তিনি ছুটি নিয়েছিলেন। কথা ছিল ২৫ তারিখে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্ন সাগরেই ভেসে গেল। এখন আমরা কী নিয়ে বাঁচব? দুটি অবুঝ শিশুসন্তান নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াব? আমার দুটি মেয়ে কাকে বাবা বলে ডাকবে?’
আরও পড়ুনঅনুপ্রবেশের সময় সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবি, বিজিবি সদস্যসহ ১৬ জন নিখোঁজ২২ মার্চ ২০২৫বেলালের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সে (বেলাল) বলল, “বাবা, ২৫ তারিখ থেকে আমার ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। আমি টাকা পাঠিয়েছি। আপনি আপনার মতো করে সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে নিবেন। আমি আসছি, সবাই এবার অনেক আনন্দ করব।” আমার সেই ছেলেকে আজ কবরে চিরঘুম পাড়িয়ে আসলাম। আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।’
বেলাল হাসানের ভাই নাজমুল হাসান জানান, ‘গত শনিবার বিকেলে বিজিবি থেকে আমাদের বাড়িতে দুজন লোক আসেন। তাঁরা জানান, আমার ভাই বেলাল হাসান শনিবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধারকালে সাগরে নিখোঁজ হয়েছেন। গত রোববার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাই। তখন খবর আসে আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুনভেসে এল সাগরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের লাশ২৩ মার্চ ২০২৫মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, টেকনাফে বিজিবির সেপাই বেলাল হাসানের মৃত্যুর খবর তাঁরা পেয়েছেন। তাঁর বাড়িতে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সরকারিভাবে যে নির্দেশনা আসবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের কাছ দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা অবৈধভাবে সাগরপথে বাংলাদেশে আসছিল। পথে প্রবল স্রোতে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পাশে কর্তব্যরত বিজিবির সদস্যরা তৎক্ষণাৎ স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। তাঁরা ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেন। উদ্ধারকাজ চলাকালে সমুদ্র উত্তাল ছিল। এ সময় বিজিবির সদস্য বেলাল হাসান পা পিছলে সাগরে পড়ে যান। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট সৈকত এলাকায় লাশটি ভেসে আসে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।