জেমিনি সি ফুডের কারসাজি: এবাদুল পরিবারকে ৩.৮৫ কোটি টাকা দণ্ড
Published: 25th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনসুঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বিকন ফার্মারসিউটিক্যালস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম) মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার পারিবারিক সহযোগীরা।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার সহযোগীরা জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম যোগসাজস করে বাড়ায়। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
শেয়ার কারসাজিতে সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন- এবাদুল করিমের দুই সন্তান, তার শ্যালক ও নিকটতম আত্মীয়। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজস করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সম্প্রতি বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য রাইজিংবিডি ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল- জেমিনি সি ফুডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে খাদ্য ও আনসুঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৫ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ১১ লাখ টাকা, তার মেয়ে রিসানা করিমকে ২.
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৫ আসনে নির্বাচিত হন। ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোর পর্ষদে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবাদুল করিমের ছেলে উলফাত করিম। তিনি কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তার মেয়ে রিসানা করিম। তিনি কোম্পানিটির ম্যানেজমেন্টে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মোহাম্মদ এবাদুল করিমের শ্যালক সোহেল আলম। তিনি আগে বিকন ফার্মারসিউটিক্যালসের পরিচালক ছিলেন। আর ফাতেমা সোহেল মোহাম্মদ এবাদুল করিমের আত্মীয়।
এর আগে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করার দায়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী নুরুন নাহার, তার মেয়ে ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বড় অংকের জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ ৫ ব্যক্তি যোগসাজশ করে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার লেনদেন করে। কারসাজিকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার যোগসাজস করে দাম বাড়ায়। আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৪১.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৩৪.৪০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫৯২.৭০ টাকা বা ১৭৩.৪৬ শতাংশ বেড়ে।
কারসাজিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
অভিযুক্তদের ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার কারসাজি করে ইচ্ছাকৃতভাবে আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী। সেহেতু অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৩) এবং ১৭(ই)(৫) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ফলে আলোচ্য সময়ে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৩) ও ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘনের দায়ে এবাদুল করিম, রিসানা করিম, উফাত করিম, সোহেল আলম ও ফাতেমা সোহেলকে জরিমানা করা হলো।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৩ স ল র ১ জ ন য় র শ য় র ক রস জ আল চ য সময় র ক রস জ র র ব যবস থ ব এসইস র ক রস জ ত র পর প ত কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সংবাদ নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি ‘সংবাদ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ সেবা’ বা ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালুর পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি উপযুক্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করেছে।
আন্তর্জাতিক সিকিউরিটিজ কমিশনের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) ‘এ’ ক্যাটাগরির সদস্য হিসেবে বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করবে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্য মতে, কমিশন এমন একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করেছে, যারা দেশের জাতীয় পর্যায়ের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যম থেকে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে পারবে।
তথ্যগুলো নির্ধারিত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে ইমেইল ও একটি পোর্টাল ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে, এবং প্রয়োজনে ভিডিও ক্লিপও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
সংবাদগুলো সাধারণ এবং নেতিবাচক প্রতিবেদনে বিভক্ত থাকতে হবে, যেখানে নেতিবাচক প্রতিবেদনে আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে, যেমন অর্থপাচার প্রতিরোধ (এএমএল), সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি), সিকিউরিটিজ আইন বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নীতিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা ইত্যাদি।
বিএসইসি মনে করে, এই পর্যবেক্ষণ সেবাটি ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান বজায় রাখা সম্ভব হবে।
বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিদিন গণমাধ্যমে বাজারসংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা বিনিয়োগকারী এবং সামগ্রিক বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া সংবাদ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। একটি ‘সংবাদ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ সেবা’ বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে এবং গণমাধ্যমে বাজার সংক্রান্ত গুজবের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে, যা তথ্যের প্রবাহকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।
সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে হবে।
ঢাকা/এনটি/ইভা