আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করবে সরকার। 

প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪২৪.৭৭ মার্কিন ডলার হিসাবে এই চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৯ কোটি ১০ লাখ ৯৭ টাকা। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড চাল সরবরাহ করবে।

জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির লক্ষ্যে চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫০৬ টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ১৪ হাজার ১২২  টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৯ টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জি টু জি পদ্ধতিতে আরো চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর চাল ক্রয়ের জন্য গত ৪ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৭টি দরপত্র জমা পড়ে এবং ৭টি দরপত্রই ভারত ভিত্তিক। গত ২০ মার্চ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। দরপত্রে মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪২৪.

৭৭ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়।

বিদেশ থেকে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য আগমনের পর পণ্য খালাসের আগেই দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা খাদ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় এবং পরে সংগৃহীত নমুনা কম্পোজিট করে এক প্যাকেট পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। দরপত্রে উল্লিখিত বিনির্দেশের কোনো প্যারামিটারের সঙ্গে পণ্যের প্রাপ্ত গুণগত মান নিম্নমানের হলে দরপত্রে উল্লিখিত সমুদয় চাল প্রত্যাখান করার বিধান রয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন চ ল চ ল আমদ ন র ৫০ হ জ র পর ক ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর, হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিবসহ তিনজন গ্রেপ্তার

বরিশালে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেনকে অপর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল সোমবার রাতে অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন। মঙ্গলবার তাঁদের কোতোয়ালি মডেল থানায় সোপর্দ করার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় করা একটি মামলায় ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে বরিশাল মহানগর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক নুরুল আমিন তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ওসি আরও বলেন, সেনাসদস্যকে অপহরণ, মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাঁর চাচা আবদুল মতিন কাজী বাদী হয়ে একটি অভিযোগ করেছেন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে যুবদল কর্মী নুর হোসেন ওরফে সুজন এবং হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকার।

মামলার বাদী আবদুল মতিন কাজী চাঁদপুরের উত্তর মতলব থানার মহনপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী আবুল হোসেনের ছেলে। অপহরণের শিকার সেনাসদস্য তাঁর ভাতিজা মো. জাফর। তিনি রাজশাহী সেনানিবাসে ল্যান্স করপোরাল হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন।

মামলার আসামিরা হলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম ওরফে মিঠু (৩৬), সাবেক সহসভাপতি নূর হোসেন (৩৫), মো. ইমরান খন্দকার (৩৫), হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মো. মনির হোসেন (৪২), মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ী (৫২), রুবেল (৫১), বেলায়েত (৩২), মো. জাহিদ (৪৫), মহানগর মহিলা দলনেত্রী ফরিদা বেগম (৪৫), স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম (৫০), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান ওরফে মঞ্জু (৪৮) ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. নিজাম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী আবদুল মতিন কাজী, তাঁর ভাতিজা জাফর এবং তাঁদের সহযোগী বরিশাল নগরের বিমানবন্দর থানার গগনপাড়া এলাকার আবদুল বাছেদ হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর বালুমহালের ইজারার দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য সোমবার বেলা একটার দিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা দরপত্র জমা দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলে বেশ কয়েকজন তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় কেন তাঁরা দরপত্র জমা দিয়েছেন, তা জানতে চান। একপর্যায়ে মতিন, বাছেদ ও জাফরকে তাঁরা মারধর শুরু করেন। তখন প্রাণভয়ে দুজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে আবদুল মতিন বিষয়টি বরিশাল সেনা ক্যাম্পে অবহিত করেন।

মামলা সূত্রে আরও জানা গেছে, সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে নগরের নদীবন্দর এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। এ সময় আটক সেনাসদস্য নিজেকে ল্যান্স করপোরাল পরিচয় দিলে অপহরণকারীরা নিজেদেরও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাফরের হাত ও পা বেঁধে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় জাফরের সঙ্গে থাকা সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্রটি নিয়ে ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, একটি আইফোন, ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেন অপহরণকারীরা। জাফরকে রেখে অপহরণকারীরা বাইরে গেলে জাফর সেখান থেকে বের হন।

সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন ও হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকারকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই হোটেল থেকে আটক করেন।

মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ও হামলার শিকার আবুল বাসেদ জানান, ১৩ কোটি টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেঘনার বালুমহাল তাঁরা ইজারা পেয়েছেন।

মামলার অন্যতম আসামি মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম বলেন, মেঘনার বালুমহালের বিপরীতে ৩৩টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। বাসেদ ও আবদুল মতিনের ভাড়াটে গুন্ডাদের বাধায় অন্যরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। আবদুল মতিনসহ তাঁর সহযোগীরা দুটি দরপত্র জমা দিয়ে ওই বালুমহাল বাগিয়ে নিয়েছেন। ফরিদা অভিযোগ করেন, সোমবার ভোরে একদল যুবক তাঁদের চাঁদমারীর বাসায় হানা দিয়ে তাঁর দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

দরপত্র ক্রয়কারী মফিজুল ইসলাম নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকার পে-অর্ডার কেটেও দরপত্র জমা দিতে পারেননি। মেঘনার বালুমহাল পুনঃ দরপত্রের জন্য আবেদন করবেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশালে সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর, হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিবসহ তিনজন গ্রেপ্তার
  • ভারত থেকে এলো সাড়ে ১১ হাজার টন চাল