গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারানোর ঘোষণা রাফিনিয়ার
Published: 25th, March 2025 GMT
২০১৯ সালের পর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় নেই ব্রাজিলের। এর মধ্যে দুই দল চারবার মুখোমুখি হলেও তিনটিতে হেরেছে ব্রাজিল এবং ড্র করেছে অন্য ম্যাচে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জয়খরা কাটাতে আগামীকাল ভোরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটাকে পাখির চোখ করেছে দলটি।
এমনকি এই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারানোর আগাম ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে দিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রাফিনিয়া। বার্সেলোনার এই তারকা ফরোয়ার্ড অবশ্য শুধু হারানোর ঘোষণা দিয়েই থামেননি, বরং যুদ্ধের ঘোষণাই যেন দিয়ে রাখলেন।
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘রোমারিও টিভি’তে রাফিনিয়া বলেছেন, ‘আমরা তাদের অবশ্যই হারাব। গুঁড়িয়ে দেব। মাঠে এবং প্রয়োজন হলে মাঠের বাইরেও। নিশ্চিতভাবে আমি গোল করতে যাচ্ছি। আমরা যা আছে সব নিয়ে মাঠে নামব।’
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ কবে জিতেছিল ব্রাজিল ১ ঘণ্টা আগেসাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম লেগের ম্যাচে মারাকানায় মারামারি আর সংঘর্ষে তুলকালাম কাণ্ড হয়েছে। এমনকি নাটকীয় বিতর্কে একটি ম্যাচ তো মাঠেই গড়াতে পারেনি। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও অবশ্য আছে।
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিওর সঙ্গে রাফিনিয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীনতার ইতিহাসে চাই ঐক্য
পৃথিবীতে যেসব দেশ সাম্রাজ্যবাদীর দখল থেকে লড়াই করে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেসব দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কতখানি মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যদি সে দেশের নাগরিক বিশেষ করে শিশু ও তরুণ প্রজন্ম অনুধাবন করতে না পারে, তার চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে যেতে সঠিক ইতিহাস থাকা জরুরি।
দেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত যতই বিভেদ-বৈষম্য-মতবিরোধ থাকুক; অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ, নির্বিবাদ শ্রদ্ধাবোধ এবং মতৈক্য থাকতে হবে। এটিই শক্তিশালী জাতি গঠনের প্রধান শর্ত। যথার্থ দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে প্রজন্মের শিক্ষাস্তরভেদে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিবিদ্বেষ অথবা অবজ্ঞা সমগ্র জাতি এবং রাষ্ট্রকে বিতর্কিত ও কলুষিত করবে। এ কারণে জাতির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্বের সঙ্গে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা মত ও বিভেদ বিদ্যমান। যে কারণে স্বাধীনতার পর আমাদের স্বনির্ভর হতে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে; ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সজ্ঞানে। সজ্ঞানে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবনে এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ও কলঙ্কজনক। রাজনৈতিকভাবে এসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে মনগড়া তথ্য দিয়ে। এমনকি তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো ধৃষ্টতাও দেখানো হচ্ছে।
মানুষ মাত্রই ভুলভ্রান্তি থাকে। কর্ম ও নেতৃত্বে ভুল থাকতেই পারে। মানজজীবনে এটা যথাস্বীকৃত। তাই বলে হত্যা করতে হবে– এমন বিধান কোথাও নেই। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াকু বীর বা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে বা বিনাবিচারে, তা কোনোভাবেই যথার্থ কাজ নয়। মহান স্বাধীনতার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে প্রজন্ম বিপথগামী হয়; অদৃষ্টবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্ধশতকে স্বাধীন বাংলাদেশে তা-ই হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য লাগাতার সংগ্রাম, রক্তঢালা লড়াই, শ্রমসাধ্য নেতৃত্ব এবং শেষমেশ যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের যতখানি অবদান তার ততখানি মূল্যায়ন নিয়ে আজও বিতর্ক চলমান। সেই সঙ্গে চলছে স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বার্থ, অবজ্ঞা-অবহেলা, প্রতারণা, যা সভ্য দেশে চিন্তাই করা যায় না।
একটি জাতির ইতিহাস, তার স্বাধীনতার ইতিহাস কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলার বিষয় নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এশিয়ার একাধিক দেশে যেমন ভারত, জাপান, চীন, দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান প্রভৃতি। এসব দেশে ঐতিহাসিক ঘটনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ সমস্যা থাকার কারণে সত্যিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং সজ্ঞানে ভুলভ্রান্তি সাজিয়ে ইতিহাস লিখিত হয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। এমনকি একাধিক দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব দেশের অবদান রয়েছে অথবা দেশ গঠনে সার্বিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা রয়েছে, সেসব সজ্ঞানে অস্বীকার করা হয়েছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলভ্রান্তি শিখে বড় হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সহমর্মিতা জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এমনকি তারা জানতেই পারছে না, তার দেশের সত্যিকারের ইতিহাস কতখানি সঠিক, যৌক্তিক ও প্রামাণিক! সুতরাং এতে জাতিগত ঐক্যেই শুধু ফাটল নেই; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও দুর্বল হয়ে থাকতে হয়। এখন রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সর্বজনের স্বীকৃতি ও নিরঙ্কুশ ঐক্য স্থাপন জরুরি।
প্রবীর বিকাশ সরকার: শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক