Prothomalo:
2025-04-16@04:01:27 GMT

জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখুন

Published: 25th, March 2025 GMT

গুজব সংক্রমণ ব্যাধির মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই গুজবের ভিত্তি যদি রাজনীতি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। মুহূর্তে জন থেকে জনে, এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে আসছে। যাদের উদ্দেশ্য যেকোনো মূল্যে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা।

সাম্প্রতিক কালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতার বার্তাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। পক্ষে–বিপক্ষে নানা রকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনকি এই প্রচারণা থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীও রেহাই পায়নি। রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের কোনো পদাধিকারীর আগের কোনো বক্তব্যকে এখনকার বক্তব্য বলে চালানো হচ্ছে। কেউ কেউ গুজবের আগুনে বেগুনপোড়া দিয়ে আত্মসুখও অনুভব করছেন।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সবাই আশা করেছিলেন, দেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চলছিল তার অবসান হবে, অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা সেটা বলছে না।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, যতই দিন যাচ্ছে, আন্দোলনকারী দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে অনৈক্য–বিভেদ বাড়ছে। এই সুযোগে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি চক্র অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছ। আরেকটি চক্র বিদেশে বসে যাকেই অপছন্দ হচ্ছে, তাকে হুমকি দিচ্ছে, বাড়িঘর ও অফিস হামলা চালানোর জন্য উসকানি দিচ্ছে। অতীতে তাদের উসকানির কারণে কিছু স্থানে অঘটন ঘটলেও এখন আর জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। 

৫ আগস্টের আগের অরাজক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যখন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে, তখন কোনো ঘটনা, বিবৃতি কিংবা গুজবকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কারোরই কাম্য নয়। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির জন্য দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কোনো পক্ষের এমন কিছু করা বা বলা উচিত হবে না, যাতে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সে রকম কিছু হলে সুযোগসন্ধানীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাবে, যা কখনোই করতে দেওয়া সমীচীন হবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণ–অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণের জন্য জাতীয় ঐক্য আরও মজবুত করতে হবে।

ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কারও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যেকোনো দল করতে পারে। অতীত অপরাধের বিচারও দাবি করতে পারে। কিন্তু ‘আমরা দমন করব’, ‘প্রতিহত করব’—এ ধরনের স্লোগান স্বৈরাচারী আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

গুজব তারাই সৃষ্টি করে, যাদের ভালো কিছু করার সামর্থ্য নেই। সমাজের প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিককে চলমান সংকট সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আন্দোলনকারী সব পক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে, এসব উসকানি ও গুজবে কান দেবেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আজ ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই কর্মকর্তা 

সংস্কার, মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক। এ ছাড়া মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এদিন আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু আর হেরাপ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রথম বাংলাদেশ সফর। সফরে অ্যান্ড্রু আর হেরাপের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা মিয়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনের।

মার্কিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক চুলিক তাঁর চার দিনের সফরে বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এবং গণতান্ত্রিক পথে ফেরার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করার কথা। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নিকোল অ্যান চুলিক বর্তমানে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হলেও, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি না থাকায় এ দপ্তরের দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। সফরকালে তিনি সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সে চাহিদাগুলো জানতে চাইবেন। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোতে জঙ্গিবাদের মাথাচাড়া দেওয়ার খবর আসায় বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ এবং মানবাধিকার বিষয়ও আসতে পারে।

তিনি বলেন, ১/১১-এর সময় সংস্কারে জোর না দেওয়াটা এক প্রকার ভুল মনে করে মার্কিনিরা। সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ায় সহযোগী হিসেবে থাকতে চায় দেশটি।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশিয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ কূটনীতিক অ্যান্ড্রু আর হেরারের বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতি প্রাধান্য পাবে। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর বৈঠক করার কথা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এটিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে দেখছে। কারণ মিয়ানমারের কিছু এলাকা বাদে দেশটিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমানে মিয়ানমার মাদক চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অপহরণ করে আটকে রাখা, নারী ও শিশুসহ মানব পাচারের অন্যমত কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিও রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে দেশটির সেনাবাহিনীসহ বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলো জড়িত। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের অপরাধীরা অপরাধমূলক কার্যক্রম মিয়ানমারের মাটিতে বসে চালাচ্ছে। তাই পুরো পরিস্থিতি আলোচনায় আসবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ