মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে রোববার দুপুরে রাজধানী ঢাকার ওয়ারী এলাকা থেকে বাদলকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী থানার একটি দল। তিনি টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের বেতকা চৌরাস্তা এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে।

টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার ওয়ারী থানা পুলিশ তাকে আটক করে টঙ্গিবাড়ী থানায় হস্তান্তর করে। সোমবার তাকে ছাত্র জনতার ওপর হামলার মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা বাদলকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট পাপিয়া আক্তার নিলু। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. শহীদুল ইসলাম জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ত

এছাড়াও পড়ুন:

'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ