‘আলুর তো দাম নাই, ঈদ করমো কী দিয়া’
Published: 25th, March 2025 GMT
‘বাহে, এবার আলু, তাংকু (তামাক) কোনোটারে দাম নাই। বেচাইলে অর্ধেক লস। হাতোতও টাকা নাই, সামন তো ঈদ। ছাওয়ার ঘরে নয়া জামার জন্য বায়না ধরছে। কেমন করি ঈদখান পার করিম, খুব টেনশন হয়ছে।’
গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে কথাগুলো বলছিলেন চিকলী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিবছর উৎপাদিত ফসল বিক্রির লাভের টাকায় পরিবারে জন্য ঈদের কেনাকাটা, সংসার খরচ করেন। কিন্তু এবার লাভ তো দূরের কথা, ফসল বিক্রি করতে গেলেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মিজানুর রহমান জানালেন, আমন ধান বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবার ৫০ শতকে আলু ও ৩০ শতকে তামাক চাষ করেছেন। আলু উৎপাদনে তাঁর ২১ টাকা খরচ হলেও বর্তমানে ১২ টাকা কেজি দরে সেই আলু কেনাবেচা হচ্ছে। গত বছর যে তামাক ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, সেই তামাক এবার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো ঈদের আগে তামাক কেনা শুরু না করায় ও হিমাগারে জায়গাসংকট থাকায় আলু ও তামাকের বাজারে ধস নেমেছে। এ অবস্থায় আলু বিক্রি করলে অর্ধেক লোকসান গুনতে হবে।
বামনদীঘি গ্রামের ইদ্রিস উদ্দিন এবার এক একরে আলু চাষ করেছেন। আলু উত্তোলনের পর এখনো দাম না থাকায় বিক্রি ও রাখার জায়গা সংকটে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। এখনো সেই আলু মাঠে নিয়ে বিপাকে তিনি। এরই মধ্যে ঈদের চিন্তা পেয়ে বসেছে তাঁকে। ইদ্রিস উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাজারে আলুর দাম নাই, হিমাগারোত জায়গা নাই। চার দিন ধরি আলু নিয়া জমিবাড়িত সুতি আছি। তা হইলে তোমরায় কন এবার ঈদ করমো কী দিয়া?’
শুধু মিজানুর রহমান ও ইদ্রিস উদ্দিনই নয়; তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকের এবার একই অবস্থা। আলু ও তামাকের দাম না থাকায় ঈদের আমেজ নেই তাঁদের মধ্যে।
প্রতি সোম ও শুক্রবার তারাগঞ্জে হাটের দিন। এই দুদিনে পুরো উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ কেনাকাটা করতে এ হাটে আসেন। সরেজমিনে ঘুরে কাপড়ের হাটে দেখা যায়, তেমন কর্মব্যস্ততা নেই। দু–একটি দোকানে কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও, প্রায় দোকানে অলস সময় পার করছেন অধিকাংশ কর্মচারী।
মা ক্লথ স্টোরের সামনে কথা হয় হাড়িয়ারকুটি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়ার সঙ্গে। দুই মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কাপড় দেখছিলেন। ঈদের কেনাকাটা করছেন? জিজ্ঞেস করতেই মানিক মিয়া বলেন, ‘ভাই, মেয়ে দুইটা ছাড়ে না ওই জন্যে ৮ টাকা কেজিতে লোকসান করি ১০ বস্তা আলু বেচে হাটোত আসনু ছাওয়াগুলার নতুন জামা কিনার। কিন্তু যে দাম, জামাত হাতে দেওয়া যাওছে না।’
মা ক্লথ স্টোরের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ব্যবসা খুবই খারাপ। গত বছর ১৫ রমজানের পর থেকে প্রতিদিন দেড় লাখ, হাটের দিন দুই লাখের বেশি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার। মানুষের হাতে টাকা নাই, খুব কম কেনাকাটা করছে।’
বদরগঞ্জের কাচাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম গতকাল বদরগঞ্জ বাজার থেকে ছেলের জন্য জুতা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। কথা হলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘চার মণ আলু বেচে এক জোড়া জুতা কিননু। জুতা–কাপড়ের এত দাম, কিন্তু হামার আলুর দাম নাই।’
ওই উপজেলার ট্যাক্সেরহাট গ্রামের আরেক কৃষক মেহেরাব হোসেন বলেন, ‘২৪ শতক জমি বর্গা নিয়া আলু নাগাছন। ১২০ কেজি আলু গত বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ হাটোত বেচপার গেছনু। আধামাংনা দাম করায় বাড়িত আনি থুচুনু। আলুর তো দাম নাই, ঈদ করমো কী দিয়া?’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আলুর তো দাম নাই, ঈদ করমো কী দিয়া’
‘বাহে, এবার আলু, তাংকু (তামাক) কোনোটারে দাম নাই। বেচাইলে অর্ধেক লস। হাতোতও টাকা নাই, সামন তো ঈদ। ছাওয়ার ঘরে নয়া জামার জন্য বায়না ধরছে। কেমন করি ঈদখান পার করিম, খুব টেনশন হয়ছে।’
গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে কথাগুলো বলছিলেন চিকলী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিবছর উৎপাদিত ফসল বিক্রির লাভের টাকায় পরিবারে জন্য ঈদের কেনাকাটা, সংসার খরচ করেন। কিন্তু এবার লাভ তো দূরের কথা, ফসল বিক্রি করতে গেলেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মিজানুর রহমান জানালেন, আমন ধান বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবার ৫০ শতকে আলু ও ৩০ শতকে তামাক চাষ করেছেন। আলু উৎপাদনে তাঁর ২১ টাকা খরচ হলেও বর্তমানে ১২ টাকা কেজি দরে সেই আলু কেনাবেচা হচ্ছে। গত বছর যে তামাক ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, সেই তামাক এবার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো ঈদের আগে তামাক কেনা শুরু না করায় ও হিমাগারে জায়গাসংকট থাকায় আলু ও তামাকের বাজারে ধস নেমেছে। এ অবস্থায় আলু বিক্রি করলে অর্ধেক লোকসান গুনতে হবে।
বামনদীঘি গ্রামের ইদ্রিস উদ্দিন এবার এক একরে আলু চাষ করেছেন। আলু উত্তোলনের পর এখনো দাম না থাকায় বিক্রি ও রাখার জায়গা সংকটে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। এখনো সেই আলু মাঠে নিয়ে বিপাকে তিনি। এরই মধ্যে ঈদের চিন্তা পেয়ে বসেছে তাঁকে। ইদ্রিস উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাজারে আলুর দাম নাই, হিমাগারোত জায়গা নাই। চার দিন ধরি আলু নিয়া জমিবাড়িত সুতি আছি। তা হইলে তোমরায় কন এবার ঈদ করমো কী দিয়া?’
শুধু মিজানুর রহমান ও ইদ্রিস উদ্দিনই নয়; তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকের এবার একই অবস্থা। আলু ও তামাকের দাম না থাকায় ঈদের আমেজ নেই তাঁদের মধ্যে।
প্রতি সোম ও শুক্রবার তারাগঞ্জে হাটের দিন। এই দুদিনে পুরো উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ কেনাকাটা করতে এ হাটে আসেন। সরেজমিনে ঘুরে কাপড়ের হাটে দেখা যায়, তেমন কর্মব্যস্ততা নেই। দু–একটি দোকানে কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও, প্রায় দোকানে অলস সময় পার করছেন অধিকাংশ কর্মচারী।
মা ক্লথ স্টোরের সামনে কথা হয় হাড়িয়ারকুটি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়ার সঙ্গে। দুই মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কাপড় দেখছিলেন। ঈদের কেনাকাটা করছেন? জিজ্ঞেস করতেই মানিক মিয়া বলেন, ‘ভাই, মেয়ে দুইটা ছাড়ে না ওই জন্যে ৮ টাকা কেজিতে লোকসান করি ১০ বস্তা আলু বেচে হাটোত আসনু ছাওয়াগুলার নতুন জামা কিনার। কিন্তু যে দাম, জামাত হাতে দেওয়া যাওছে না।’
মা ক্লথ স্টোরের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ব্যবসা খুবই খারাপ। গত বছর ১৫ রমজানের পর থেকে প্রতিদিন দেড় লাখ, হাটের দিন দুই লাখের বেশি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার। মানুষের হাতে টাকা নাই, খুব কম কেনাকাটা করছে।’
বদরগঞ্জের কাচাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম গতকাল বদরগঞ্জ বাজার থেকে ছেলের জন্য জুতা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। কথা হলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘চার মণ আলু বেচে এক জোড়া জুতা কিননু। জুতা–কাপড়ের এত দাম, কিন্তু হামার আলুর দাম নাই।’
ওই উপজেলার ট্যাক্সেরহাট গ্রামের আরেক কৃষক মেহেরাব হোসেন বলেন, ‘২৪ শতক জমি বর্গা নিয়া আলু নাগাছন। ১২০ কেজি আলু গত বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ হাটোত বেচপার গেছনু। আধামাংনা দাম করায় বাড়িত আনি থুচুনু। আলুর তো দাম নাই, ঈদ করমো কী দিয়া?’