প্রতিদিন বাইসাইকেলে ৪০-৫০ কিলোমিটার এলাকা ফেরি করে মুরগি ও পাতিহাঁসের ছানা বিক্রি করেন মাহিদুর (৪২)। এ আয়েই বয়স্ক মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ সাত সদস্যদের সংসার চালান। মাহিদুর জানায়, ফজরের আজানে ঘুম ভাঙার পরপর তাঁর কর্মব্যস্ততা শুরু হয়। আর শেষ হয় রাত ১১টা নাগাদ।

মাহিদুরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খরিয়াল গ্রামে।

চৈত্রের খরদুপুরে বরেন্দ্রভূমির গহিন গ্রাম রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোলদের বাবুডাইং গ্রামে বসে গত শনিবার কথা হয় মাহিদুরের সঙ্গে। তিনি জানান, ওই এলাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে তাঁর গ্রাম। বিভিন্ন গ্রামে এসব ছানা বিক্রি করতে করতে এ গ্রাম চলে আসেন। আবার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করতে করতে বাড়ির দিকে রওনা হবেন। রাতে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে মহাজনের বাড়িতে ছুটবেন। সেখান থেকে আবার আগামীকাল বিক্রির জন্য হাঁস-মুরগির ছানা নিয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সাজিয়ে বাড়ি ফিরবেন। মহাজনকে বিক্রির টাকা দিলেই চলে। এ ব্যবসায় কোনো পুঁজি লাগে না।

কথায় কথায় মাহিদুর জানান, প্রায় তিন বছর আগে থেকে এসব ছানা বিক্রি করছেন। এর আগে একটি রিকশাভ্যান কিনে ২০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে প্লাস্টিকের হরেক মাল বিক্রি করতেন। তিন বছর আগে ১৮ বছর বয়সী বড় ছেলে আমগাছ থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। তখন হরেক মালসহ রিকশাভ্যান বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করান। কিন্তু ভালো হয়নি। বাড়িতেই শুয়েবসে ছেলের দিন কাটে। অল্প কিছুদিন থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলেকে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজে পাঠাচ্ছেন। এদিকে একার আয়ে সাতজনের সংসার চলছে না। প্রতিদিন নিজের আয় হয় ৪০০-৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়।

বাবুডাইং গ্রামের নারী মাকুয়া কোল টুডু (৫৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই মাহিদুর এ গ্রামে হাঁস–মুরগির ছানা বিক্রি করতে আসে। হামরা কাছ থাকিই কিনি। মাহিদুর বাড়ি বহ্যা দিয়া যায়। হাটের দামেই পাই। হামারঘে ভালোই উপকার হয়। খাটনি থাকি বাঁচিয়া যায়। হাঁস-মুরগি পোষা হয়। পাতিহাঁসের বাচ্চা কিনি ৪০ টাকায়, সোনালি মুরগির বাচ্চা ৫০-৬০ টাকা করি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রগ ম রগ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

পূর্ব শত্রুতার জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আইন ও ফাইনান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এতে আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী নাম নুহানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টুকিটাকিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক দফা মারামারি হওয়ার পর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আবারো আরেক দফায় মারামারি হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেলের সামনে তৃতীয় দফায় মারামারি হয়।

আরো পড়ুন:

কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাবিতে প্রতিবাদী সমাবেশ

রাবির পরীক্ষার জন্য শনিবার বন্ধ থাকবে জবি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাইনান্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সোমবার রাতে গত বছরের ইফতার করা নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে আমাদের একজনকে চড় থাপ্পড় মারে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে আজ আবার টুকিটাকি চত্বরে এসে তারা আবার আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে মারামারি হয়।”

আহত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুহানকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “একজন যখন রিকশায় করে আসলো, আমরা শিক্ষার্থী মনে করে তাকে চিকিৎসার জন্য ভিতরে আনি। তার মাথায় আঘাত ছিল। ডাক্তার দেখার পর তাকে একটু বসতে বললাম। কারণ যেহেতু ডাক্তার অবজারবেশনে ছিল, তাকে আরেকবার দেখতো। কিন্তু সে চলে গেছে। পরে আর তাকে পাইনি।”

এ বিষয়ে প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা যতটুকু জানতে পারলাম, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই মারামারিটা হয়েছে। এক গ্রুপ বলছে সমাধান করার জন্য মেরেছে, আরেক গ্রুপ বলছে আমাদেরকে আগে মেরেছে। তবে মারামারি হয়েছে। একবার মারামারি করার পর আবার মেডিকেল সেন্টারে তারা মারামারি করেছে। যারা এ ঘটনার ভিক্টিম, তাদের বলেছি অভিযোগ দিতে। তারা অভিযোগ দিলে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেব।”

তিনি আরো বলেন, “আগের ঘটনাগুলোও তদন্ত চলমান আছে। কেও যদি মনে করে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবে না, তবে সে ভুল। এতে অবশ্যই অ্যাকশনে যাওয়া হবে। কেও যেন দলীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব না খাটায়, সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে ইতোমধ্যে জানিয়েছি। ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা হলকে সুরক্ষিত মনে করছি। যারা প্রতিপক্ষ তাদেরও বলে দিয়েছি, তারা যদি হলে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ