অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০০ কোটি ডলার দেবে চীন
Published: 25th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে গুরুত্ব পাবে ভূ-রাজনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য। সেখানে কোনো চুক্তি সই হবে না; কিছু সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে বাংলাদেশকে এক চীন নীতিতে ২০০৫ সালের অবস্থানে ফেরত যেতে বলবে বেইজিং। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে চীন থেকে বেশ কিছু সমরাস্ত্র সংগ্রহের প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে তারা। পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেবে বেইজিং। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম এই দ্বিপক্ষীয় সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগামীকাল বুধবার দুপুরে চীনের পাঠানো চার্টার ফ্লাইটে হাইনান যাবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার ২৫ দেশের জোট বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। চীন সফরে বেশ কিছু প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে ড.
সূত্র জানায়, সফর সামনে রেখে ১২টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ থেকে ৮টি সই হতে পারে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১০টির মতো ঘোষণা আসতে পারে বৈঠক থেকে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দুর্যোগ প্রশমনে সহায়তা, চীনা গ্রন্থকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চীনের চিরায়ত সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহায়তাসহ বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি আছে।
এ ছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন, চীনের সহযোগিতায় রোবোটিক ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবলিটেশন কেন্দ্র স্থাপন, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি সইয়ের জন্য আলোচনা শুরুর ঘোষণা, ৫ বছরে বাংলাদেশের এক হাজার তরুণের চীন সফরের আমন্ত্রণ, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেশ কিছু ঘোষণা আসতে পারে।
পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, রোহিঙ্গা সংকট, পানিসংক্রান্ত সহযোগিতা ছাড়াও স্বল্প সুদে ঋণ এবং অনুদান মিলিয়ে দেড় বিলিয়ন ডলারের সহায়তার বিষয়গুলো আলোচনায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফরে চুক্তি সই নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, চুক্তি না, কিছু সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এগুলো পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জিডিআইতে যুক্ত হবো কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে দেশটির ঢাকার রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘আমরা এ সফর নিয়ে কাজ করছি। সফরে কিছু ঘোষণা আসতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ সফরকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে বেইজিং। কারণ গত দেড় দশক আওয়ামী লীগের কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেনি চীন। তাই সফরে তাদের অন্যতম প্রস্তাব থাকবে– ২০০৫ সালে ‘এক চীন নীতি’ নিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান ছিল, তাতে ফেরত যেতে।
গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে– চীন সরকার গোটা চীনের প্রতিনিধিত্ব করে, তাইওয়ান চীনের অংশ। চীনের মূল স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ চীনকে সমর্থন করে। একই সঙ্গে চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করে বাংলাদেশ।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৫ সালের এক চীন নীতিতে তাইওয়ান ইস্যুতে আরও জোরালো আওয়াজ ছিল বাংলাদেশের। সে সময় আন্তর্জাতিক ফোরামে তাইওয়ানের বিরোধিতা করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের মিশন খুলতে দেওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে চীনের। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নেই। ফলে তারা বাংলাদেশকে আগের অবস্থানে ফিরতে আহ্বান জানাবে। যেমনটি জানিয়ে ছিল মানচিত্র ও পাঠ্য বইয়ের ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে জরিপ অধিদপ্তর ও পাঠ্য বইয়ে চীনের মানচিত্র নিয়ে আপত্তি তোলে বেইজিং। চীনের দাবি, ম্যাপগুলোতে চীনের অনেক অংশ ভারতের বলে দেখানো হয়েছে। সেগুলো সংশোধন করতে ঢাকাকে বলা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জিডিআইয়ের দিকে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে। পুরোপুরি যোগ দেবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা থাকবে। এটি এসডিজি অর্জনে পরিপূরক, উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক বলে তুলে ধরা হবে। এতে সহযোগিতা থাকবে না বাংলাদেশের।
তারা আরও জানান, আসন্ন বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান থাকবে চীনের তরফ থেকে। সামরিক স্থাপনার আধুনিকায়ন বা সমরাস্ত্র সংগ্রহের মতো বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে। এগুলো রাজনৈতিক সরকারের জন্য রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ইউন স এক চ ন ন ত কর মকর ত র প রস ত অবস থ ন ত ইওয় ন সহয গ ত চ ন সফর সরক র সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা মাত্র
বাবেলের অধিবাসীরা যখন হজরত ইবরাহিমের (আ.) কথা কর্ণপাত করল না, শক্ত যুক্তিও মেনে নিতে রাজি হলো না, তখন তিনি দাওয়াত দেওয়ার ভিন্ন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন। তাদের মন্দিরে অনেকগুলো কাঠের দেবদেবী ছিল, এর মধ্যে একটি ছিল প্রধান দেবতা। তিনি পরিকল্পনা করলেন তার জাতিকে দেখাবেন এই প্রতিমাগুলো কত দুর্বল—নিজের শরীর থেকে একটি মাছি তাড়াবারও শক্তি এদের নেই।
একদিন বাবেলে ধর্মীয় মেলা হবে, লোকজন ইবরাহিমকে (আ.) সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। ইবরাহিম (আ.) আকাশের তারকার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি অসুস্থ।’ তিনি ঠিক মিথ্যা বলেননি, তার জাতির কুফরি কাজকর্মে তিনি আত্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারা তার কথা বিশ্বাস করে। (সুরা সফফাত, আয়াত: ৮৮-৯০) ইবরাহিম (আ.) আস্তে আস্তে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিমাগুলোর কায়দা করব।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৫৭)
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কখন পড়ব০৪ মার্চ ২০২৫এরপর তারা যখন চলে যায়, তিনি চুপি চুপি প্রতিমাগুলোর কাছে গেলেন। যাদের সামনে ছিল থরেথরে সাজানো ফলমূল আর সুস্বাদু খাবার। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি খাবে না? তোমাদের কী হয়েছে, কথা বলছো না কেন?’ (সুরা সফফাত, আয়াত: ৯১-৯৩) তিনি সজোরে মূর্তিগুলোর ওপর আঘাত হানলেন। কিন্তু বড় মূর্তিটাকে কিছু করলেন না, যেন ওটার ওপর সব দোষ চাপানো যায়।
লোকজন ধর্মমেলা থেকে ফিরে যখন মন্দিরের এই হাল দেখল, রেগেমেগে একদম বেহাল হয়ে হয়ে গেল। তারা বলল, ‘কে আমাদের দেবদেবীর এই অবস্থা করল? সে নিশ্চয় সীমালংঘনকারী। কেউ কেউ বলল, এক যুবককে দেখেছি এদের সমালোচনা করতে, তার নাম ইবরাহিম। তারা বলল, তাকে জনতার সামনে উপস্থিত করো, যেন তারা তাকে দেখতে পারে।’
ইবরাহিমকে (আ.) উপস্থিত করার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমিই কি আমাদের দেবদেবীদের এই হাল করেছ? ইবরাহিম (আ.) বললেন, ওই বড় দেবতাটাই এসব করেছে, ওটাকে জিজ্ঞেস করো, যদি কথা বলতে পারে!’
এ কথা শুনে তারা চিন্তায় পড়ে গেল। তারা একে অপরকে বলল, তোমরা দেবদেবীদের অরক্ষিত রেখে গেছ, তোমরাই বরং সীমালঙ্ঘনকারী। তারপর লজ্জায় তাদের মাথানত হয়ে গেল। তারা ইবরাহিমকে (আ.) বলল, ‘তুমি তো ভালো করেই জানো এরা কথা বলতে পারে না।’
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইবরাহিম (আ.) এই মন্তব্য শোনারই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করো, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক তোমাদের এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৫৯-৬৭)
মূর্তিপূজার অসারতার এমন স্পষ্ট প্রমাণের পর বাবেলের অধিবাসীদের উচিত ছিল এক আল্লাহয় বিশ্বাস করা, হজরত ইবরাহিমকে (আ.) নবী বলে মেনে নেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে ফন্দি আঁটতে থাকে কীভাবে মূর্তি ভাঙার প্রতিশোধ নেওয়া যায়, কীভাবে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া যায়।
আল্লাহর শরিয়ত কোনো প্রাণীকেই জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অনুমতি দেয় না, আর মানুষ তো সবচেয়ে সম্মানিত প্রাণী, তার বেলায় তো আরও আগে না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৩,৫৪২) কিন্তু কাফেরদের নীতিতে ইনসাফ নাই, মানবতা নাই, আছে কেবল পাশবিকতার জয়গান। আর তাই বাবেলের মূর্তিপূজারীরা সিদ্ধান্ত নেয়—এই যুবককে নিরস্ত করার একটাই উপায় আছে, আর তা হলো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা।
আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫