রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আগেই পাঁচটি সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাব বা সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাঁচটি কমিশনের শতাধিক সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/দপ্তর, সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অতি জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময় ও আর্থিক সংশ্লেষ আছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে। এ জন্য একটি নির্ধারিত ছক দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অন্তত ১২১টি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট ১৪টি মন্ত্রণায়ল/বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে আইন–বিধি সংশ্লিষ্ট ৯টি প্রস্তাব। অবশ্য একটি প্রস্তাবে একাধিক সুপারিশও আছে। এগুলো মূলত আইন-বিধি ও প্রশাসনিক সংস্কার–সংক্রান্ত। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে, এই প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই।

১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাছাই করা আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সংলাপের দরকার নেই। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ই বাস্তবায়ন করতে পারে। এ বিষয়ে ৩০ পৃষ্ঠার একটি নথি তৈরি করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়গুলো তাদের মতো করে এগুলো বাস্তবায়ন করবে।

এর অংশ হিসেবে ১৯ মার্চ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা ও প্রস্তাবগুলো পাঠানো শুরু করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কত সময় প্রয়োজন এবং এসব বাস্তবায়নে টাকা খরচ হবে কি না, হলে তা কত, সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সুপারিশগুলো মূলত সংবিধান–সম্পর্কিত। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরি করে জুলাই সনদ করবে সরকার। এর বাইরে বেশ কিছু সুপারিশ আগেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, তারা ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়েছে। সেখানে ‘সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য বাছাইকৃত’ ৯টি প্রস্তাবের উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন) সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, পোস্টাল ব্যালটের পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।

এই ৯টি প্রস্তাবে অনেকগুলো সুপারিশ আছে। যেমন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশেই অনেকগুলো ধারায় সংশোধন এবং কিছু নতুন বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। চিঠি পেলেও এখন পর্যন্ত ইসি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ছাড়াও জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের বিএফএ সম্মেলনে আজ বক্তব্য রাখবেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় বক্তব্য রাখবেন প্রধান উপদেষ্টা।

লাওসের প্রধানমন্ত্রী সোনেক্সাই সিফানডোন, চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং, বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং এর মহাসচিব ঝাং জুন হাইনানের বিএফএ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠেয় এ অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কু দোংইউ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। অধ্যাপক ইউনূস এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশ থেকে রওনা দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস এরই মধ্যে চীন পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী সাউদার্ন এয়ারলাইন্সে একটি বিশেষ ফ্লাইট বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে দেশটির হাইনানের কিয়োংহাই বোয়াও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম এবং হাইনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান।

বোয়াও ফোরামের পাশাপাশি, তিনি বিশ্বখ্যাত এবং চীনের বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

২৯ মার্চ অধ্যাপক ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিকেইউ) বক্তৃতা দেবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে।

তিনি চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন, যাতে তারা যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং হাসপাতাল স্থাপনের জন্য উৎসাহিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার আগামী ২৯ মার্চ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ