জমিতে, পড়ার টেবিলে, বিছানায়, খাটের নিচে, মেঝেতে, ঘরের আঁড়ায়, মাচায়, উঠানে–সবখানে আলু। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে উৎপাদিত ৫৮ হাজার ৮৭০ টন আলু হিমাগারে স্থানের অভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল সিরাজদীখান। এ বছরও এ উপজেলায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার টন আলু। এর মধ্যে হিমাগারে স্থানের অভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না প্রায় ৫৮ হাজার ৮৭০ টন আলু। ওই আলু বিকল্প পদ্ধতিতে বাঁশের মাচার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে কৃষককে। উত্তোলন শেষে কিছু আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলেও বাকি আলু বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে হচ্ছে।
উপজেলায় আলু সংরক্ষণে হিমাগার রয়েছে মাত্র ১০টি। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে সর্বসাকল্যে প্রায় ৭৩ হাজার ১৩০ টন। ফলে এ বছর উপজেলায় উৎপাদিত প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার টন আলুর মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার ৮৭০ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আলুর আকার ছোট। এমন ছোট আলু বাজারে বিক্রি করতে গেলে কাঙ্ক্ষিত দাম পাবেন না বলে ধারণা করছেন কৃষক। গত দু’বছরের মতো এবারও তারা আলুতে লোকসানের মুখ দেখবেন বলে আশঙ্কা করছেন।
কেয়াইন ইউনিয়নের কৃষক আওলাদ হোসেন খান জানান, তাঁর জমিতে উৎপাদিত আলুর মধ্যে অর্ধেকের মতো হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। বাকি আলু ঘরের বাইরে উঠানে মাচা বানিয়ে সংরক্ষণ করছেন তিনি। ইছাপুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, তাদের উৎপাদিত হাজার হাজার টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করার জায়গা পাচ্ছেন না। তাই জমিতে স্তূপাকারে আলু ফেলে রেখেছেন। কিছু আলু ঘরের উঠানে মাচায় সংরক্ষণ করছেন। এরপরও অনেক আলু ঘরে-বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে হচ্ছে।
চন্দনধুল গ্রামের কৃষক স্বপন মৃধা বলেন, হিমাগারে জায়গা না পেয়ে ১৭০০ মণ আলু দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতে সংরক্ষণ করছেন।
সদর উপজেলায় উৎপাদিত আলু নিয়েও কৃষক বিপদে রয়েছেন। তারাও উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগ হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় আলু চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ২২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, এ উপজেলায় ১০টি হিমাগারে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা রয়েছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। এ কারণে তারা সবসময় কৃষককে বলে থাকেন তারা যেন দেশীয় পদ্ধতিতে আলুগুলো মজুত করে রাখেন। এতে তারা বেশি দামেও আলু বিক্রি করতে পারবেন এবং তাদের বাড়তি খরচও হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল ৫৮ হ জ র উপজ ল য় উৎপ দ ত করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক, বুধবার
প্রায় ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ (এফওসি) বৈঠক করবে। এ লক্ষ্যে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ তার দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে বুধবার ঢাকায় আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে শেষ এফওসি ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
হ্যাটট্রিক জয়ে বিশ্বকাপের আরো কাছে বাংলাদেশ
ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ: টিউলিপসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণ করা না হলেও আলোচনার সময় পারস্পরিক স্বার্থের সব বিষয়ই আলোচনায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেন খান এই বৈঠকে যোগদানের জন্য বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “ইসলামাবাদ ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে আগ্রহী।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তান বিশেষ করে তাদের পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক বিবেচনায় বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে। তুলাকে প্রধান পণ্য হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তান তুলা সরবরাহ করতে আগ্রহী।”
হাইকমিশনার বলেন, “পাকিস্তান যেহেতু আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। তাই পরিবহন খরচ কম হলে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের মাধ্যমে আমদানি অন্বেষণ করার সুযোগ রয়েছে।”
সরাসরি বিমান যোগাযোগের বিষয়ে হাইকমিশনার খান বলেন, “ফ্লাই জিন্নাহ ছাড়াও, শিয়ালকোটে অবস্থিত আরেকটি পাকিস্তানি বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার সিয়াল ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেছে।”
তিনি বলেন, “ফ্লাই জিন্নাহ বর্তমানে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, এয়ার সিয়াল অনুমোদন পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “সরাসরি বিমান সংযোগ পর্যটন বৃদ্ধি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, “সারা বিশ্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিষয় বিদ্যমান থাকে, তবে বর্তমান সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।”
ঢাকায় অবস্থানকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বালুচ বৃহস্পতিবার এফওসি'র পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটি হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।
ঢাকা/হাসান/সাইফ