অনলাইনে ১৫ লাখ রিটার্নের ১০ লাখে কোনো কর নেই
Published: 24th, March 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত অনলাইনে ১৫ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন বা বিবরণী দাখিল করেছেন। তবে এর মধ্যে ১০ লাখ মানুষ তাদের যে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন, তা করযোগ্য আয়ের নিচে, অর্থাৎ তারা ‘শূন্য রিটার্ন’ দাখিল করেছেন। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনায় এ তথ্য দেন তিনি ।
সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দাবিটা অযৌক্তিক না হলেও তাতে কিছু সমস্যা আছে। যেমন ধরেন এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ১৫ হাজার রিটার্ন অনলাইনে জমা হয়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে ১০ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে, যাদের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রিটার্নের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। এখন করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করলে শূন্য রিটার্নের সংখ্যা আরও এক লাখ বেড়ে যাবে বলে তাঁর ধারণা।
তিনি বলেন, কোয়ালিটি ট্যাক্সপেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এখন সীমা বাড়িয়ে দিলে বড় একটা গ্রুপ যারা ন্যূনতম কর দিত, তারাও জিরো ট্যাক্সে চলে যাবে। অবশ্য তিনি বলছেন না যে, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে না। এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি জানান, কোম্পানি আয়করের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হার ধীরে ধীরে উঠিয়ে নেওয়া হবে। আগামী বাজেটেও এ সিদ্ধান্তের প্রতিফলন থাকবে।
ইআরএফ সভাপতি জানান, ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কেটে রাখা হয়। আবার আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক রয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয় নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি আমানতের মুনাফার ওপর কর কমানো এবং ১০ লাখ টাকা জমা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করলে এনবিআর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ইতিবাচক কিছু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান ভ্যাট প্রসঙ্গে বলেন, এখানে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। হিসাব ও ইনভয়েসভিত্তিক ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট ১৫ শতাংশ হলেও ঠিকমতো ইনপুট ক্রেডিট নিলে অনেকের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার এক থেকে দেড় শতাংশ হবে। এনবিআর আবার ওই শৃঙ্খলার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
আলোচনা সভায় ইআরএফের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের ওপর করের ভার কমানো, ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ, এনবিআরে ইআরএফ সদস্যদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টারের ব্যবস্থা করাসহ মোট ৩৫টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে ব্রোকারেজ হাউসের উৎসে কর কমানোর দাবি ডিবিএর
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর উৎসে করহার কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ উৎসে কর কর্তনের হার বিদ্যমান ০.০৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০২০ শতাংশ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ডিবিএর পক্ষ থেকে এই সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা উৎসে করকে আরো সহজীকরণ করার জন্য বলছি। আমরা উৎসে করের পরিবর্তন চাচ্ছি। করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেমন, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং-এর তুলনায় আমাদের দেশে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর উৎসে করের হার অনেক বেশি। বর্তমানে বাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আয়ও আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে এবং আয় না হলেও আয়কর দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় এই কর হার কমানো সুপারিশ করছি আমরা।
তিনি আরো বলেন, ১ লাখ টাকায় আমাদের উৎসে কর দিতে হয় ৫০ টাকা। যেখানে ভারতে প্রতি এক লাখে উৎসে কর দিতে হয় ১০ রুপি। এ ছাড়া পাকিস্তানে ০.৬৫ রুপি, সিঙ্গাপুরে ০.৭৫ ডলার এবং হংক এ ৫.৬৫ ডলার দিচ্ছে।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর কমিশন ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান আয়ের উৎস। অত্যাধিক হারে কর আরোপ করার ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর পক্ষে টিকে থাকা এবং পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাজেই ব্রোকারেজ হাউজের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং পুঁজিবাজারকে সক্রিয় করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর বিদ্যমান কর হার যৌক্তিক কারণে হ্রাস করা একান্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী করদাতাদের মূলধনী ক্ষতির সমন্বয় বা জের পরবর্তী বছরগুলোতে টানার অনুমতি নেই। লোকসানের সমন্বয় ও জের টানার অনুমতি না থাকার ফলে উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়ে এবং বিনিয়োগে নিরুৎসায়ী হয়ে বাজার ত্যাগ করে। গত কয়েকবছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ধরে রাখতে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান আয়কর আইন ২০২৩ এর নবম অধ্যায়, ধারা ৭০ এর (৩) এর সাথে বর্ধিত বিধান সংযোজনের সুপারিশ করছি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত, হ্রাসকৃত করহার বা ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এইরূপ কোন উৎসের বা খাতের ক্ষতির সমন্বয় বা জের টানা যাবে না। তবে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোন সিকিউরিটিজ অথবা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিলের ইউনিট লেনদেনের মাধ্যমে মূলধনী ক্ষতির সমন্বয় বা জের টানা যাইবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সরকার আমাদের সুপারিশ সুবিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে এর বাস্তবায়ন করে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ সুগম করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জরিমানা ছাড়া আর কোন উন্নতি নাই। সত্যিকার অর্থে বিএসইসিতে কোন কাজ হচ্ছে না। বাজারে বিনিযোগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। বড় পুঁজির বিনিয়োগ না হলে কখনই পুঁজিবাজার রান করবে না। বিএসইসিতে গত ৮ মাসে কোনো আইপিও পেন্ডিং নাই। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা নাই। এই বাজারে পণ্য সরবরাহ খুবই বাজে।
বিএসইসির টাস্কফোর্স নিয়ে ডিবিএ নেতারা বলেন, যাদের নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা বাস্তবে প্রকৃত অর্থে অভিজ্ঞতাহীন। এরা আবার করেছে ফোকাস গ্রুপ। যারা ব্রোকার কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই মতামত দিয়েছে। অথচ তাদের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।
তারা বলেন, সমন্বয়হীন আয়কর দুনিয়ার কোথাও নাই। মুনাফা করলে সরকার আয়কর পাওয়ার অধিকারী। আবার লোকসান করলে আয়কর না দেওয়া ব্যবসায়ীর অধিকার। কিন্তু ১৫ বছর ধরে লোকসান করেও আয়কর দিয়ে আসছে ব্রোকাররা। এটা এক প্রকার জুলুম।
বক্তারা আরো বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট দৈন্যদশা চলছে। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী থেকে ১২ লাখে নেমেছে। সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ৫ লাখও নেই। অনেকে বলেন, বাজারে ভলিউম বাড়ে না, ভালো কোম্পানি না থাকলে ভলিউম বাড়বে না। গত ১০ বছরে গ্রোথ কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে নাই। যে আইপিওগুলো এসেছে সবই দুর্বল কোম্পানির। আজ বাজারে টার্নওভার নাই, ভলিউম নাই, সব জায়গায় রিফর্ম দরকার আছে। তবে সবার আগে বাজারে টার্নওভার লাগবে, ৪০০-৫০০ কোটি টাকা টার্নওভারে বাজার ঘুরপাক খাচ্ছে এটা দিয়ে বাজার চলবে না।
ঢাকা/এনটি/এনএইচ