জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির আত্মপ্রকাশের এক মাসও পেরোয়নি। এরই মধ্যে দলটির শীর্ষ নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ ও সমন্বয়হীনতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তাদের কয়েকজনের আচরণ ও কথাবার্তায় রাজনৈতিক বিবেচনাবোধের স্পষ্ট অনুপস্থিতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ফেসবুকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারসিজ আলম আলাদা পোস্ট দেন। একই ঘটনার দুই পোস্ট নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।  দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন এ নিয়ে সরাসরি নিজেদের মন্তব্য দিতে থাকেন। সারজিসের পোস্টের নিচে মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ লেখেন, ‘এসব কী ভাই! পাবলিকলিই বলছি, দু’জনের একজন মিথ্যা বলছেন। এটা চলতে পারে না। মানুষ এনসিপিকে নিয়ে যখন স্বপ্ন বুনছে, তখন এভাবে এনসিপিকে বিতর্কিত করা কাদের এজেন্ডা!’ 

হাসনাত ও সারজিস কি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন? সারজিসের ভাষ্যে স্পষ্ট, তারা নিজেদের আগ্রহে সেখানে যান। সেখান থেকে ফিরে ১০ দিন পর দেওয়া হাসনাতের আক্রমণাত্মক ভাষ্যে তাঁর ‘অনভিজ্ঞতা’ ও ‘অদূরদর্শিতা’ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। পারস্পরিক অনানুষ্ঠানিক কথা উন্মুক্ত করে দেওয়া কোনো পক্ষের জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়।
যে প্রসঙ্গ নিয়ে এত জলঘোলা– ‘রিফাইন্ড’ বা পরিশোধিত আওয়ামী লীগকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুনর্বাসিত করবার চেষ্টা– তা কি আওয়ামী লীগের গণ্য করার মতো কোনো নেতা দাবি করেছেন? তারা তো দেশে-বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই শূন্যতার পেছনে কেন ধাওয়া করছেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ? জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের হিংস্র ভূমিকা চাক্ষুষ করেছে দেশের মানুষ; তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ আগামীতে রাজনীতিতে থাকতে পারবে কিনা; বা থাকলে কোন নেতৃত্বের আওতায় থাকবেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল নিয়ে যেখানে আলাপ হতে পারে; তার বদলে কে কোথায় 
কী বলল, তাই নিয়ে শোরগোল বাধিয়ে মূল গন্তব্য থেকে দৃষ্টি দূরে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা বুদ্ধিদীপ্ত ও ইতিবাচক নয়।

০২.


তাহলে দেশের জন্য মূল গন্তব্য কী? তা নিশ্চয় আওয়ামী লীগ পরিচালিত অগণতান্ত্রিক, একদলীয় ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বেরিয়ে অবাধ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি। এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যথার্থ কাজ। সরকার যে ইতোমধ্যে ৬টি সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির কাজ শুরু করেছে, তা এই লক্ষ্যে পরিচালিত বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু এর মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের বিশৃঙ্খল কথাবার্তা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা ইত্যাদি অশুভ ইঙ্গিত দেয়। সেই আদি প্রশ্ন আবারও করতে হয়, হাসনাত বা সারজিস কি দলের পক্ষ থেকে আসন সমঝোতা প্রশ্নে আলোচনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা? তারা ব্যক্তিগত পরিসরে কার সঙ্গে কী আলোচনা করবেন, সেটি ইচ্ছে হলেই তারা চিৎকার করে বলতে পারেন? রাষ্ট্রে শৃঙ্খলার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি যার যার পেশাগত ও ব্যক্তিগত মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা। গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ী নেতৃত্বের মর্যাদা যেমন অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, তেমনি রক্ষা করতে হবে সব অংশীজনের মর্যাদা।

০৩.
জনমানুষের বিপুল ভালোবাসা পাওয়ার পরও ছাত্রনেতৃত্ব মাঝেমধ্যে এমন কিছু আচরণ করছেন, যাতে মনে হচ্ছে, তারা নিজেদের কাজ ও এসবের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নন। তারা নানা বিষয়ে তর্ক করছেন, দাবি জানাচ্ছেন; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর সাত মাসের বেশি সময় পার হলেও দেশের তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে নিজেদের কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেননি। দেশে প্রতিবছর ২৬ থেকে ২৭ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণ চাকরিপ্রার্থী হয়। এদের কর্মসংস্থান কোথায়, কীভাবে হচ্ছে? নাকি সকল তরুণ আগামীতে এনসিপিতে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেবে? এই পার্টির কর্মী নিশ্চয়ই সার্বক্ষণিক নয়, এই বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা যেমন সুস্পষ্ট হওয়া উচিত, তেমনি জরুরি পার্টি নেতৃবৃন্দের পেশার বিষয়টিও পরিষ্কার করা। রাজনৈতিক দলের আয়ের উৎস পরিচ্ছন্ন না হলে সেই দল থেকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি আশা করা যায় না। 

০৪.
দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি প্রশ্নে বিপুল কথাবার্তা ছাত্রনেতৃবৃন্দের সমান্তরালে অন্তর্বর্তী উপদেষ্টারাও বলে চলেছেন। সমকাল জানিয়েছে, “মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না। তাদের পরিচয় হতে যাচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।” (২১.০৩.২৫) 

যা প্রতিষ্ঠিত সত্য, সেসব পরিবর্তন করে আসলে কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় বর্তমান সরকার? মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে থাকবেন না।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’! রাজনৈতিক চার শতাধিক নেতাও তাই? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল কোন প্রক্রিয়ায়? কারা তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? কার আহ্বানে ও নেতৃত্বে সাত কোটি মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছিল? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা ইতিহাসে নির্ধারিত। শেখ মুজিবের অবদান শেখ হাসিনার পারিবারিক সম্পত্তি নয়। কন্যার অপরাধে জাতির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। আর দেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস পরিবর্তনের এই পুরোনো ধারা দেশের অগ্রগতিতে আদৌ ভূমিকা রাখে না। বর্তমান বাংলাদেশের বিকাশের পথে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কি? নইলে এসব সংস্কারে মনোযোগী কেন সরকার? দেশের আইনশৃঙ্খলা ন্যুব্জ, অর্থনীতি পর্যুদস্ত ও লুণ্ঠিত, শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত, বেকার সমস্যা আকাশছোঁয়া– এসবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর নজরদারি ও নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আগামী নির্বাচিত সরকারের সামনে তা উদাহরণ হয়ে থাকতে পারত। তা না করে আজ মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, কাল চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আনন্দ শোভাযাত্রায় পরিণত করা, দেশের মানুষের জন্য আদৌ নতুন কোন শুভ যোগ করবে? এ নিয়ে সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা সরকারি কোনো উদ্যোগ নয়, ছিল না– এখানেও হাত দিতে হবে কেন সরকারকে? মঙ্গল শব্দটিতেই বা কেন এত বীতরাগ? স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সুলতানি আমলের মিছিলের অনুসরণে ঈদ মিছিল হবে এবার। সুলতানি আমলে সম্ভবত পুরুষরাই কেবল এই মিছিলে অংশ নিতেন। আমরা কি সুলতানি আমলেই ফিরে যাব? এবারও ঈদের মিছিলে কেবল পুরুষরাই থাকবে, নাকি নারীদের অংশগ্রহণ অনুমোদন করবে সরকার? নারীরা মিছিলে অংশ নিলে তাদের পোশাক কী হবে? বিভিন্ন ভাষণে, মাহফিলে যেভাবে নারীদের পোশাক নিয়ে বয়ান দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে সংশয় জাগা বিচিত্র কিছু নয়।

চারপাশে এত সংশয় ও অস্থিরতার নেপথ্যে যার যার সুনির্দিষ্ট দায়িত্বে স্থির না থেকে অন্যান্য কাজে বেশি মনোযোগী হওয়াই কারণ। অন্তর্বর্তী সরকারের নামের মধ্যেই রয়েছে তাদের কার্যপরিধির ইশারা; অন্তর্বতী সরকার– অর্থাৎ আরেকটি সরকার আসবার আগের মধ্যবর্তী সময়কালের জন্য যে সরকার। কাজেই নির্বাচিত সেই সরকার আসবার আগে, ন্যূনতম সময়ের মধ্যেই ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপের নানা কসরত অবশ্যই সন্দেহ দানা বাঁধায়। বিশেষত প্রতিষ্ঠিত সত্য ও প্রচলিত সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে গায়ের জোর খাটিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবার পরিবর্তে আরও বিভাজিত ও পরস্পরের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করবে। 

মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল ও সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প গণঅভ য ত থ ন র জন ত ক ক র কর ক ত কর র জন য আওয় ম এনস প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একাত্তরের পরে তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এ দেশের মানুষ যে গণতন্ত্র চেয়েছিল– ’১৪, ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচন– সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে যারা মারা গেছে, তাদের রক্তের শপথ– আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এদিন একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। 

আখতার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীকে ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এর পর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে; পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।

রাজধানীর বকশীবাজারে বিকেলে কারা কনভেনশন সেন্টারে লালবাগ থানা এনসিপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি ক্যান্টনমেন্ট বা ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পথ করে দিতে চায়, তবে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনও বাংলাদেশে হতে দেব না।

দেশজুড়ে বিক্ষোভ: আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। তা না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আহতরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’– প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করেছে, তাদের আবার কীসের ক্লিন ইমেজ? গণহত্যার বিচার শেষ হওয়ার আগে যতই ক্লিন ইমেজ হোক না কেন, বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না।

গণসংহতি আন্দোলন পাবনা জেলার উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও এর রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হওয়ার পরও বিচারকাজ এখনও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগোয়নি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, অবিলম্বে তার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। স্থানীয় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে গতকাল মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের এক দফা দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

এদিকে, গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। নাসের রহমান লেখেন, গণভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক। এই গণহত্যাকারী দলকে কোনো সুস্থ, বিবেকবান ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কখনোই সমর্থন করতে পারে না।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্রে গভীর ক্ষত, উদ্ধার জরুরি
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন
  • ডিএসসিসির রাজস্বে ভাটা, আদায় বাড়াতে ঈদের পর অভিযান
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধারা জাতির গর্ব: সেনাপ্রধান
  • মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকছে দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের মোটিফ
  • গোপালগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১২ জনের হেলথ কার্ড প্রদান
  • ‘সেনাবাহিনী ভূমিকা না রাখলে গণঅভ্যুত্থান সফল হত না’
  • অধ্যাপক জিনাত হুদাকে গ্রেপ্তা‌রের দাবি ঢা‌বি সাদা দ‌লের 
  • আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না: আখতার হোসেন