যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধ একটি নতুন উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। ৮ মার্চ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তারা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতক এবং ক্যাম্পাসে গাজা সংহতি শিবিরের বিশিষ্ট সংগঠক মাহমুদ খলিলকে আটক করেন। ক’দিন পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) ঘোষণা দেয়, তারা কলাম্বিয়ার স্নাতক ছাত্রী রঞ্জানি শ্রীনিবাসনের ভিসা বাতিল করেছে এবং কলাম্বিয়ার সাবেক ছাত্রী লেকা কোর্দিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।

একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি বাতিল করে। তাদের মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগকে ‘কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য একাডেমিক রিসিভারশিপ’-এর অধীনে রাখার দাবি জানায়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৪ সালের এপ্রিলে তাদের হ্যামিল্টন হলের এক ভবনে অংশগ্রহণকারীদের ডিগ্রি বাতিল করছে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত ৬ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মেয়ে হিন্দ রজবের নামানুসারে হিন্দ হলের নাম বদলে দেয়। পণ্ডিত ও আইন বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক নিন্দা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টি শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুখোশ নিষিদ্ধ, শৃঙ্খলা পদ্ধতি পুনর্গঠন, বাইরে থেকে একজন অনুমোদিত একাডেমিক নিয়োগ করা এবং ক্যাম্পাসে পুলিশের ক্ষমতা সম্প্রসারণ তারই প্রমাণ তুলে ধরে।
ক্যাম্পাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভিন্নমতের ওপর এই অভূতপূর্ব আক্রমণ ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগের অস্ত্র ব্যবহারের নতুন ধাপ তুলে ধরে। বক্তৃতা নিষেধাজ্ঞা ও ক্যাম্পাসের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে শুরু হয়েছিল, যা এখন গ্রেপ্তার, নির্বাসন, নজরদারি ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপে রূপ নিয়েছে। 

এর চূড়ান্ত লক্ষ্য শুধু ফিলিস্তিনপন্থি সক্রিয়তা দমন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করা। এটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদের আদর্শিক দুর্গে রূপান্তর করার একটি বৃহত্তর ডানপন্থি প্রচেষ্টারই অংশ। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন উচ্চশিক্ষার ওপর আক্রমণ, যা ট্রাম্প তীব্র করে তুলছেন, কয়েক বছর আগে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডা ও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক হলোকাস্ট রিমেমব্রান্স জোটের (আইএইচআরএ) বেঁধে দেওয়া ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞা গ্রহণে বাধ্য করার মাধ্যমে। বিশেষ করে তরুণ মার্কিনিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন হতে শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর এই সংজ্ঞা প্রয়োগের চাপ তৈরি হয়। ৭ অক্টোবর হামলার পর ফিলিস্তিনপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎপরতার ওপর আক্রমণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। অধ্যাপকদের বরখাস্ত, ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ, বক্তাদের আমন্ত্রণ বাতিল, এমনকি বর্তমানে গ্রেপ্তার ও নির্বাসনের ঘটনাও ঘটছে।
এই অভূতপূর্ব দমন অভিযান প্রগতিশীল ইহুদি সম্প্রদায়কেও ফাঁদে ফেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি ভয়েস ফর পিসের মতো সংস্থাগুলোর কাজ বন্ধ শুরু করেছে এবং ইসরায়েলের সমালোচক ইহুদি শিক্ষাবিদদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

ইসরায়েলের সমালোচক ইহুদি কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার অভিযানের ফলে হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিত ইতামার মান এবং লিহি ইয়োনা ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস ল রিভিউয়ের একটি নিবন্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, আইএইচআরএ সংজ্ঞার মতো আইনি কাঠামো ‘ইহুদি পরিচয়কে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা’ এবং ফিলিস্তিনপন্থি সক্রিয়তা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনপন্থি তৎপরতা ও বৃহত্তর একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর আজকের দমন স্বল্প মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ভয় দেখাতে সফল হতে পারে। কিন্তু ন্যায়বিচার ও মুক্তির মূলে নিহিত ধারণাকে মুছে ফেলতে ব্যর্থ হবে। এই নতুন জবরদস্তি কতদূর যাবে, তা আমেরিকানদের লড়াই ও তাদের স্বাধীনতা রক্ষার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।

ফয়সাল কুট্টি: ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ইমেরিটাস বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল স ত নপন থ কল ম ব য র ওপর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় বিএনপি ও শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে স্কুলের জমি দখলের অভি

ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবির ও বিএনপি নেতা নাসিম আবেদীনের বিরুদ্ধে। 

একদিকে বিদ্যালয়ের জমি দখলের খবরে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী। 

জমি দখলের খবরে ছুটে আসেন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ফতুল্লার বিভিন্ন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এসময় জাফর সাদিক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের ডেকে বিদ্যালয়ের জমি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে সদর ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আমি জমি দখলদার ডেকে তিনদিনের মধ্যে জমির দখল মুক্ত করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ