হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সরকার স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বোরো ফসল উৎপাদন তীর্ব সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। একই কথা বলছেন বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জের বৃহৎ বোরো ফসলি হাওর মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বড়দল গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণে বাঁধসংলগ্ন গো-চারণভূমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এতে মাটির সংকট তো হচ্ছেই, গো-চারণভূমির কোনো অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। পাউবো প্রতিবছর একই স্থানে মাটি কাটার ফলে এমন দুরবস্থা হয়েছে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণে তিনি জানান, প্রতিবছর পাউবো যদি স্থায়ী বাঁধের চিন্তাভাবনা করে, তাহলে আগামী ৫ বছর লাগাতার কাজ করলে হয়তো সমাধান পাওয়া যাবে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরে ২০১৭ সাল থেকে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (পিআইসি) মাধ্যমে হাওরের কান্দা কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়াও কান্দা কেটে হাওরপাড়রের লোকজন নতুন বাড়ি তৈরি ও মাটি ভরাট করে। এভাবে ধারাবাহিক মাটির কাজ অতিবাহিত হওয়ার পর ২০২৫ সালে এসে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণেও মাটি সংকট দেখা দেয়। ভবিষ্যতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে কৃষকদের ধারণা।
হাওর অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে মিশে আছে কান্দা। এটি হাওরের প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা উঁচু জমি হিসেবে পরিচিত। কান্দা হাওরের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র। এটি স্থানীয় মানুষের গবাদি পশুর চারণভূমি, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ এবং মৌসুমি ফসল উৎপাদনের স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও বর্ষাকালে এগুলো জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কান্দা কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ক্রমশ তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতির প্রভাব পড়ছে।
হাওর অঞ্চলে বন্যা ও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই বাঁধ নির্মাণের কারণে হাওরের প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। 
বাঁধের মাধ্যমে পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও ভূপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাঁধের নির্মাণকাজে কান্দাগুলো কেটে সমান করে ফেলা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক জলাবদ্ধতা রোধের ক্ষমতা নষ্ট করছে।
পরিবেশকর্মীরা জানান, কান্দাগুলোতে হাওরের প্রচুর প্রজাতির পাখি, মাছ এবং উদ্ভিদের বাসস্থান। এগুলো বিলুপ্ত হওয়ার ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বন্যা ও বর্ষার সময় মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কান্দাগুলো বিলুপ্ত হলে মাছের প্রজাতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। কান্দাগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবিকার একটি অংশ। কান্দাগুলোর ক্ষয় এবং বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক কৃষক জমি হারাচ্ছেন। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
মহালিয়া হাওরপারের বাসিন্দা সুলেমানপুর গ্রামের হাবুল মিয়া  বলেন, হাওরে এক সময় বড় বড় কান্দা ছিল। এসব কান্দায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠত নানা প্রজাতির গাছপালা। এখান থেকে গবাদি পশুর খাদ্য ও জ্বালানি সংগ্রহ করা হতো।
তাহিরপুরে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, এ বছর হাওরে মাটি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা করে দূর থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এতে তাদের তিন গুণ টাকা খরচ হয়েছে। সামনের বছর এসব হাওরে বাঁধ নির্মাণ করতে মাটির কারণে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে। এমনও হতে পারে, পিআইসির জন্য কৃষকরা আগ্রহী হবেন না। 
সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স সার্ভিসের (সিএনআরএস) সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, কান্দা থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কারণে প্রতিবছর গো-চারণভূমি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এতে প্রাকৃতিক ক্ষেত্র থেকে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া কান্দার পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন জলজ বন যেমন চাইল্যা, বউল্যা, মটমঠিয়া, নল খাগড়া, বিন্না, বনতুলসী, গুজাকাটা জাতীয় জলজ বন সংকটাপন্ন, এমনকি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, কান্দাগুলো হাওরের প্রতিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। হাওরের অর্থনীতিতে এসব কান্দা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, কান্দা বিলীন হওয়ার কারণে মাটি সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে নজর দিতে হবে। পিআইসির সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা হচ্ছে এ ব্যাপারে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ওর র প র চ রণভ ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকাশ্যে ২৬ সেকেন্ডের ভিডিও, চমক নিয়ে হাজির শাকিব

দেশসেরা চিত্রনায়ক শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ সিনেমা ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাবে। আগেই জানা যায়, সিনেমাটির আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত জাহান। এবার শাকিবের সঙ্গে দেখা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের এই তারকা।

বুধবার (২৬ মার্চ) মুক্তি পেয়েছে ‘বরবাদ’ সিনেমার আইটেম গান ‘চাঁদ মামা’র টিজার। ২৬ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই টিজারে শাকিবের সঙ্গে দেখা যায় নুসরাত জাহানকে।

শাকিবের লুক, কস্টিউম, সেট ডিজাইনের সঙ্গে নুসরাতের আবেদনময় উপস্থিতি দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে। কেউ কেউ বলিউডের গানের সঙ্গে তুলনা করছেন! বলছেন, এটি হতে পারে বছরের অন্যতম হাই ভোল্টেজ গান।

আরো পড়ুন:

অনিশ্চয়তা বরবাদ করে ঈদে আসছে শাকিবের ‘বরবাদ’

মুক্তির মিছিলে শাকিবের ‘অন্তরাত্মা’, সার্টিফিকেশন বোর্ডে ‘বরবাদ’

কেউ কেউ আবার ফেসবুকে লিখেছেন, “মিমির সঙ্গে শাকিবের ‘লাগে উরাধুরা’ গানটি ছাড়িয়ে যেতে পারে ‘চাঁদ মামা’!” টিজারটি প্রকাশের ১০ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে ৩ মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে।

এর আগে শাকিবের সঙ্গে ‘নাকাব’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নুসরাত। এবার দেখা যাবে আইটেম গানে। গানটির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পর আবার আইটেম গানে দেখা গেল নুসরাতকে।

এক ভিডিও বার্তায় নুসরাত জাহান বলেন, “চাঁদ মামা’ শব্দটি শুনলেই ছোটবেলার নস্টালজিয়া ফিলিং হয়। কিন্তু এই ‘চাঁদ মামা’ পুরোপুরি ড্যান্স নাম্বার। সবাই খুব এনজয় করবেন।”

‘চাঁদ মামা’ গান রচনা, সুর, সংগীতায়োজন করেছেন প্রীতম হাসান, কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম ও দোলা। সম্পূর্ণ গানটি ২৮ মার্চ শাকিবের জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তি পাবে রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশনের ইউটিউব চ্যানেলে।

শাহরিন আক্তার সুমির প্রযোজনায় ‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল, যীশু সেনগুপ্ত, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ