ঈদ ঘিরে ব্যস্ত দর্জিপাড়া কারিগর সংকট
Published: 24th, March 2025 GMT
গ্রাহকের মাপজোখ নিয়ে সুনিপুণ হাতে কাপড় কাটছেন কাটিং মাস্টার। কাটা টুকরো সেলাই করে পছন্দের পোশাক তৈরি করছেন কারিগররা। কেউবা করছেন ইস্ত্রি। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এমনই ব্যস্ততা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দর্জিপাড়ায়। গতকাল সোমবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি, গণমোড় ও পাবলিক লাইব্রেরি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
আসন্ন ঈদ ঘিরে খুব সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন দর্জিরা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। মাস্টার ও কারিগরদের এমন ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
কথা হয় নিউ ঢাকা টেইলার্সের মাস্টার অমল চন্দ্র শর্মার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, প্রথম দিকে তেমন কাজ ছিল না। ১০ রোজার পর থেকে ভিড় বেড়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক অর্ডার জমা পড়েছে। প্রতিটি থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি তৈরিতে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতিটি শার্টে ৪০০, আর প্যান্ট তৈরিতে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, আগের মতো আর কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না এ কাজে।
১১ মাস পর কাজের চাপ বেড়েছে। চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। হেঁসে হেঁসে কথাগুলো বলেন নিউ ঢাকা টেইলার্সের কারিগর কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করছি। দিনে ৪ থেকে ৬টি শার্ট (জামা) বা প্যান্ট তৈরি করা যাচ্ছে।’ তাঁর ভাষ্য, রমজান চলে গেলেই কাজ কমে যাবে। তখন অনেক দিন একটাও কাজ থাকে না। অনেকেই দর্জির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।
বাজারে তুলনামূলক স্বল্প মূল্যের তৈরি পোশাকে সয়লাব। দর্জির মজুরির টাকায় বস্ত্রালয়ে পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। সে জন্য দিনে দিনে পোশাক তৈরিতে আগ্রহ কমছে মানুষের। রমজান ব্যতীত অন্য সময় দর্জিদের তেমন একটা কাজ থাকে না। আবার দর্জির কাজ শিখতে সময় লাগে বেশি। এসব কারণে এ কাজে নতুন লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সংসারের খরচ মেটাতে দর্জির কাজ ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন কেউ কেউ। এসব তথ্য জানিয়েছেন কাটিং মাস্টার ও কারিগররা।
শুধু শহর নয়, গ্রাম-গঞ্জের দর্জিপাড়ায়ও ব্যস্ততা বেড়েছে। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রার জয় বাংলা বাজার, চৌরঙ্গী, পান্টি, চাপড়া, বাগুলাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কারিগরদের ব্যস্ততা।
দর্জিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোনো উৎসব বা ঈদে মানুষ সাধারণত দুই ধরনের পোশাক পছন্দ করে। একটি হলো তৈরি পোশাক, অন্যটি নিজের ইচ্ছে মতো ডিজাইন ও রুচিশীল পিস বা সিট কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে বানানো পোশাক।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় দর্জিপাড়ায় সেকালের খটখট শব্দ আর শোনা যায় না। ১০-১২ বছর আগে কুমারখালী শহরে ৮-১০টি দর্জির দোকানে কাজ করতেন ৪০ থেকে ৫০ জন দর্জি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই শহরে দোকান বেড়ে হয়েছে ১৫ থেকে ১৮টি। কিন্তু দোকান বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি দর্জির সংখ্যা। বর্তমানে কাজ করছেন ৪৫ থেকে ৬০ জন দর্জি। এ বছর প্রতিটি প্যান্ট তৈরির মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা, শার্ট তৈরিতে ৪০০-৪৫০, পাঞ্জাবিতে ৫০০-৫৫০ এবং থ্রিপিস ও টুপিসের মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা।
৪৭ বছর ধরে পোশাক তৈরি করছেন কুমারখালী পৌরসভার গণমোড় এলাকার ঢাকা ট্রেইলার্সের কাটিং মাস্টার কমল শর্মা। তিনি জানান, পাঁচ বছর আগেও দোকানে ১২ জন কারিগর ছিলেন। এখন আছেন মাত্র তিনজন। আগের চেয়ে আয় বেড়েছে, তবে কারিগর বাড়েনি। তাঁর ভাষ্য, বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ থাকে না। সে সময় কারিগরদের সংসার চলে না। তাই অনেকেই দর্জি পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ৬ মাস আগে মিজানুর রহমান নামে তাঁর এক কারিগর পেশা বদল করে ভ্যান চালাচ্ছেন।
পেশা বদল করা মিজানুর রহমান শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রামের বাসিন্দা। ফোনে তিনি বলেন, দর্জির মজুরির টাকায় এখন বাজারে ভালো পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। মানুষ আর আগের মতো পোশাক বানাতে চায় না। দর্জির কাজ করে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই এখন ঋণের টাকায় ভ্যান তৈরি করে চালাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা আয় হচ্ছে।
একই এলাকার দর্জি গোলাম মোস্তফা জানান, রমজানের পরে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন তিনি। কখনওবা খরচ জোগাতে ঢাকায় যেতে হয় তাঁকে।
কাজ শিখতে সময় বেশি লাগা, তৈরি পোশাকের দাপট, বছরের অন্যান্য সময়ে কাজ না থাকাসহ নানা কারণে কারিগরের সংকটের কথা জানালেন কুমারখালী দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অল্প দিনে কাজ শেখানোর ব্যবস্থা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে কারিগর বাড়ানো সম্ভব হতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামের ভাষ্য, পোশাক তৈরির প্রাচীন এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দর জ র ক জ দর জ প ড় র দর জ ক জ কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মামা খুন, ভাগনেসহ গ্রেপ্তার ৩
রাজশাহীতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মামাকে খুনের অভিযোগে ভাগনেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার বিকেলে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব রাজশাহী ও মাদারীপুর ক্যাম্পের সদস্যরা যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করেন।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের ঘোড়া চত্বর এলাকায় সুরুজ আলীকে (৪৫) মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই নিহত ব্যক্তির বাবা রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকার মৃত আনিচুর রহমানের ছেলে মো. হিরো (৪০) ও আশরাফ আলী (৪৫) এবং তাঁদের মা জাহানারা বেগম (৬০)।
নিহত ব্যক্তির নাম সুরুজ আলী (৪৫)। তিনি নগরের নতুন বিলসিমলা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। সুরুজ পেশায় একজন মাইক্রোবাসচালক ছিলেন।
র্যাব জানিয়েছে, নিহত সুরুজ আলীর সঙ্গে আসামিদের জমিসংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় সুরুজসহ চারজন অটোরিকশায় লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে নতুন বিলসিমলার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ঘোড়া চত্বর এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা তাঁদের পথ রোধ করেন। সেখানে জমি নিয়ে কথা–কাটাকাটি ও বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফ আলীর নির্দেশে হিরো ইট দিয়ে সুরুজের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে আসামিরা তাঁর বুক, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মারেন। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যান।
পরে আহত সুরুজকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে র্যাব রাজশাহী সিপিসি-১-এর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনার পর মামলা হলে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের রাজপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।