বাড়ির ভেতর থেকে আসছিল কান্নার আওয়াজ, সেদিকে তাক করে পরপর গুলি
Published: 24th, March 2025 GMT
বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছিল নারীদের কান্নার আওয়াজ। বাড়ির সীমানার বেড়ার বাইরে লাঠি, বন্দুক ও পাথর হাতে দাঁড়িয়ে একদল লোক। এরপর ওই বাড়িটি লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছোড়া হলো।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের রুপালি বাজারপাড়া এলাকায় এমন সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সোমবার সকালে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ আছেন। লবণের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই সংঘর্ষ ঘটেছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় একটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন রুপালি বাজারপাড়া এলাকার হামিদা বেগম (৩২), মো.
স্থানীয় লোকজন জানান, রুপালি বাজারপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে মালেকপাড়ার ফরহাদ ইকবালের সাড়ে ১০ একর লবণের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। আজ সকালে ফরহাদ ইকবালের লোকজন জমিতে কাজ করতে গেলে মিজানুর রহমানের পক্ষের লোকজন বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মালেকপাড়া থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে রুপালি বাজারপাড়া এলাকায় বসতবাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলা শেষে একটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মিজানুর রহমানের ভাই মিনহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাড়ে ১০ একর জমির মালিক আমরা ৬০ পরিবার। এসব পরিবারকে উচ্ছেদ ও জমি দখল করতে হামলা করা হয়েছে।’
হামলার ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ফরহাদ ইকবালের পক্ষের মো. সাইফুল্লাহ ও গোলাম মোস্তফা অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে গুলি ছুড়ছেন। তাঁরা অন্তত ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন। এই দুজনের সঙ্গে আরও ১৫-২০ জন দা, কিরিচ ও লাঠি হাতে হামলা করেন। হামলাকারীরা সবাই মাস্ক পরা ছিলেন।
অস্ত্রধারী সাইফুল্লাহ ও গোলাম মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফরহাদ ইকবালও ঘটনার পর থেকে পলাতক।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘লবণের জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। ভিডিওতে দুটি অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। অস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আকত র
এছাড়াও পড়ুন:
পরপর তিন মেয়ের পর এক ছেলে, তাদের পর এলো জমজ
ছেলের আশায় পরপর তিনটি মেয়ে হয়েছে তানিয়া বেগমের। পরবর্তীতে ছেলেও হয়েছে। সেই ছেলের বয়স এখন তিন। ইচ্ছাপূরণের পর দরিদ্র স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা বা তানিয়া– কারোই আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তবে বিধির লীলা বোঝা বড়ই ভার। তানিয়া নতুন করে যখন সন্তানসম্ভবা হন, তখন ভরসা রাখেন আল্লাহর ওপর। নড়াইলের এই গৃহবধূ সোমবার সকালে জন্ম দিয়েছেন জমজ ছেলের।
নড়াইল শহরের বেসরকারি মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই ছেলের জন্ম দেন তানিয়া। তাঁর স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ভ্যানচালক তিনি। ছেলেদের জন্মের পর মা তানিয়া তাদের নাম রেখেছেন– মোহাম্মদ ও আহম্মদ।
সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে নিয়মিত নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান শিশুদের দাদি রেবেকা খাতুন। তিনি বলেন, তারা দরিদ্র মানুষ। ইচ্ছা ছিল স্বাভাবিকভাবেই প্রসব করানোর। কিন্তু সোমবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই পুত্রবধূর ব্যথা ওঠে। তখন বাড়ি থেকে আসার সুবিধার কারণে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন তানিয়াকে।
রেবেকার ভাষ্য, ‘পুতা (সন্তানের ছেলে) জন্ম হওয়ার পর প্রথমজনকে আমি কোলে নিই, আরেকজনকে কোলে নেয় বৌমার মা (শিশুদের নানি) তসলিমা বেগম।’ শিশুদের জন্মের সময় নববর্ষের দিনে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে কেউই জানতেন না। তাদের কোলে নেওয়ার পর দাদি-নানিই তাদের কানে আজান দেন। তাদের বাবা বাড়িতে গিয়ে ওজু-গোসল সেরে আজান দিয়েছেন।
প্রতিটি শিশুর ওজনই দুই কেজি ৭০০ গ্রাম করে হয়েছে জানিয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘বাচ্চারা এখনো ঠিকমতো মায়ের দুধ পাচ্ছে না। দুধ পাবার চেষ্টা করতিছি।’
১৮ বছর আগে নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের ইস্রাফিল মোল্যার সঙ্গে বিয়ে হয় সদরের বাঁশগ্রামের কিশোরী তানিয়া বেগমের। তখন তানিয়ার বয়স ছিল ১৩ বছর। প্রথম সন্তান মারিয়ার জন্ম হয় এর তিন বছর পর। সেই মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তো। ঈদুল ফিতরের তিনদিন পর বিয়ে হয়েছে এই কিশোরীর। তার স্বামীই জমজ শ্যালকদের জন্য সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি কিনে দিয়েছে বলে জানান ইস্রাফিল মোল্লা। তিনি বলেন, তাঁর মেঝ মেয়ে মরিয়ম (১০) ও ছোট মেয়ে হাবিবা (৮) বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছেলে আব্দুর রহমানের বয়স ৩ বছর। ইস্রাফিলের ভাষ্য, ‘৬ সন্তান হলেও আমরা খুশি, আনন্দিত। এ সন্তান আল্লাহর দান।’
মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে তানিয়ার অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার। তিনি বলেন, ‘প্রসূতিকে সোমবার সকালে জরুরি অবস্থায় ভর্তি করা হয়। সবাই তাদের বিষয়ে আন্তরিক ছিলাম। নবজাতক ও তাদের মা সুস্থ আছে। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।’