জামালপুরে ‘ডিবি পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে’ আসামির মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় পরিবার
Published: 24th, March 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের পলিশা এলাকায় ‘গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে’ মো. শাহীন আলম (৪৩) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে পরিবার। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর আগে গরু চুরির অভিযোগে ডিবি পুলিশ একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে হুমকি ও হয়রানি করেছে বলে দাবি ওই পরিবারের। আজ সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই ব্যক্তির পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছিল, ১৭ মার্চ রাত তিনটার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দলকে দেখে শাহীন আলম পালাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে মারা যেতে পারেন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি গরুচোর চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। তবে শাহীন আলমের স্ত্রী জরিনা বেগমের দাবি, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য তিনি হত্যা মামলা করেছেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা প্রকাশ করা হোক।
এই দাবিতে আজ দুপুরে প্রথমে জামালপুর শহরের নাছিরপুর এলাকার বোর্ডঘর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী অংশ নেন। পরে নিহত ব্যক্তির বাড়ির পাশের একটি গোডাউনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ১০ থেকে ১২ বছর আগে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। তখন কিছু লোক মনে করতেন, আমার স্বামী চুরি করা গরু কিনে ব্যবসা করেন। ফলে কোথাও গরু হারানো গেলেই লোকজন বলত আমার স্বামী জড়িত। এভাবেই আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হতো। যার কারণে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করত। এরই মধ্যে বেশির ভাগ মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। এতে প্রমাণিত আমার স্বামী চোর ছিল না। এসব কারণে আমার স্বামী ৪ থেকে ৫ বছর আগে মাংসের ব্যবসাও ছেড়ে দেন। এর পর থেকে দুই ছেলে ও আমার স্বামী নিজস্ব গাড়ি (পিকআপ ভ্যান) চালান।’
জরিনা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ ৫ মাস আগে পাশের লাঙ্গলজোড়া এলাকায় দুটি গরু চুরি হয়। যাঁদের গরু চুরি হয়, তাঁরা বিত্তবান ও প্রভাবশালী। তাঁদের পরিবারের একজন পুলিশে চাকরি করেন। ফলে জোর খাটিয়ে দুই থেকে তিনজন ডিবির সমন্বয়ে তাঁরা ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা করেন। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই হামলা করা হয়েছিল। এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে স্বামীকে কয়েক দিন বাড়ির বাইরে থাকতে বলি। ওই গরু চুরির বিষয়ে আমি অভিযোগকারীদের (গরুর মালিক) সঙ্গেও কথা বলি। আমার স্বামী এলাকায় এলে তাঁদের সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে তাঁরা জানান। অন্যথায় এলাকায় এলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলবেন তাঁরা।’
নিহত শাহীন আলমের স্ত্রী জরিনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে কোনো মামলা না হলেও বারবার ডিবি পুলিশ বাড়িতে আসত। তারা (ডিবি) নানা সময় আমাদের বাড়িতে হুমকি দিয়ে যেত যে আমার স্বামীকে পেলে তারা (ডিবি) মেরে ফেলবে। চুরি না করা সত্ত্বেও তারা বিত্তবান এবং তাদের কাছে প্রশাসনিক পাওয়ার থাকার কারণে আমাদের এভাবে নির্যাতন করে আসছিল।’
চুরি না করা সত্ত্বেও ডিবি পুলিশের হয়রানি এবং হারিয়ে যাওয়া গরুর মালিকদের হুমকির কারণে ৪ থেকে ৫ মাস ধরে শাহীন আলম ঢাকায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘১৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে ফোন দিয়ে আমাদের খোঁজখবর নেন। এটাই ছিল আমার সঙ্গে শেষ কথা। পরদিন সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। তার লাশ মাদারগঞ্জে আছে। দ্রুত থানায় গিয়ে আমার স্বামীর বীভৎস লাশ দেখতে পাই। তার মুখে এবং শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা দেখে আমি বুঝতে পারি, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে কেউ হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওই দিন প্রথমে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কথার কোনো মিল ছিল না। ফলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ওই ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত দাবি করি।’
নিহত শাহীন আলম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ র ব ভ গ য় তদন ত আম র স ব ম ক শ হ ন আলম পর ব র আম দ র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
পুড়ে যাওয়া মার্কেটের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন যুবদল নেতা, অডিও ভাইরাল
খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে পুড়ে যাওয়া অস্থায়ী মার্কেটের মালিক রাসেল মিয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা সাগরের চাঁদা চাওয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৯ মার্চ আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট পুড়ে যায়। ফোনালাপটি এর কয়েকদিন আগের। সাগর খুলনা মহানগর যুবদলের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। যুবদলের ওই কমিটির সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু গত ২৩ মার্চ রাতে মুক্তিপণের দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ফোনালাপের শুরুতে মার্কেট মালিক রাসেলকে সাগর বলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছো না, এটা কি ঠিক হচ্ছে তোমার?’
জবাবে রাসেল বলেন, ‘ভাই, আমি আছি খুব বিপদে।’
তখন সাগর বলেন, ‘তুমি আমারে বলছো টাকা দিয়ে যাবা, তুমি পাঁচ মাসেও আমার সঙ্গে যোগাযোগই করলে না। এটা তোমার কাছে আমি প্রত্যাশা করি?’
রাসেল বলেন, ‘ভাই টাকা ইনকাম করাই এখন কঠিন হয়ে গেছে।’
উত্তরে সাগর বলেন, ‘কেন ইনকাম কঠিন হয়ে গেল কেন? তুমি আমারে প্রথমে বললা ৫০ হাজার করে দিবা পিকচার প্যালেস থেকে। সেদিন বললা না ভাই ৩০ হাজার করে দিব। একটা টাকাও দিলা না। তুমি তো মেলাটেলা করতেছো।’
মার্কেট মালিক বলেন, ‘আমি মেলা করছি না। মন্টুর মেলায় কয়েকটি স্টল দিয়েছি।’ এরপর আরও কিছু কথা হয় দু’জনের মধ্যে।
শেষে যুবদল নেতা বলেন, ‘যাই হোক তুমি আমার সঙ্গে যে কমিটমেন্ট করেছো সেটা কি রাখবা, না রাখবা না ? সেটা বললেই হয়ে যায়।’
মার্কেট মালিক বলেন, ‘এখন পিকচার প্যালেসের যে অবস্থা, আছি খুব বিপদে। দোকানদারদের বেচাকেনা কম। টাকা-পয়সা ঠিকমতো দিতে পারছে না। আমিও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেছি না।’
ব্যবসায়ীর বক্তব্য শেষে কিছুটা সময় চুপ করে রূঢ় কণ্ঠে সাগরকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করব না।’
এ বিষয়ে রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। পথে বইসে গেছি। আমারে আর শেষ কইরেন না’।
আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের ৪৪টি দোকান পুড়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের জায়গা ভাড়া নিয়ে এক বছর আগে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করেন ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া। তিনি শহরে মেলা রাসেল নামে পরিচিত।