রমজান মাসে ইফতার খাইয়ে তৃপ্তি পান দিল্লির হিন্দু তরুণী নেহা
Published: 24th, March 2025 GMT
ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদে অত্যন্ত নিঃশব্দে প্রশংসিত কাজ করে চলেছেন সনাতন ধর্মের এক তরুণী। রমজান মাসে প্রতি সন্ধ্যায় রোজাদারদের জন্য ইফতারের খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিতরণও করছেন নেহা ভারতী নামে ওই তরুণী।
মাথায় দোপাট্টা ও সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পরিহিত নেহা অন্য সব ধর্মের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তরিকতার সাথে খাবার বিতরণ করছেন। হাসিমুখে নেহা বলছেন, ‘‘আমি এটাকে দান-খয়রাত হিসেবে দেখি না। এভাবেই আমি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই। হিন্দুরা মুসলমানদের সাহায্য করতে পারে, আবার মুসলমানরাও পারেন। ভারতে এটাই আমি বিশ্বাস করি।’’
গত তিন বছর ধরে নেহা প্রতিদিন সন্ধ্যায় জামে মসজিদে খাবারের প্যাকেট ও শরবত নিয়ে আসছেন। প্রথমে মাত্র কয়েক খাবারের প্যাকেট দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার উদ্যোগে গতি আসে। এখন প্রতিদিন প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেন।
পুরাতন দিল্লির বাসিন্দা এবং ‘রাহ্’ নামক একটি এনজিও-র প্রতিষ্ঠাতা নেহা এমন একটি পরিবারে বেড়ে ওঠেন, যারা কখনও হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বৈষম্য করে না। তিনি যখন প্রথম লক্ষ্য করেন যে, কীভাবে রোজাদাররা ইফতারের খাবারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, তখনই নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন।
নেহা বলেন, ‘‘তিন বছর আগে আমি দেখেছিলাম যে বহু রোজাদার খাবার ছাড়াই জামে মসজিদে ইফতার করতে আসছেন। তখন আমি ভেবেছিলাম, কেন তাদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা শুরু করা হবে না? প্রাথমিকভাবে, আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল। কিন্তু বন্ধুবান্ধব ও সোশ্যাল মিডিয়ার সহায়তায় আমি এই কর্মকাণ্ড আরো প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমরা রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের খাবার পরিবেশন করি।’’
আর নেহার প্রচেষ্টাই তাকে জামে মসজিদে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি ওই মসজিদে যেসব দর্শনার্থী আসেন তারা সকলেই নেহার সঙ্গে সেলফি তোলার পাশাপাশি তার কাজের প্রশংসা করছেন।
বর্তমান প্রেক্ষিতে যেখানে প্রায়শই ধর্মীয় বিভাজন তুলে ধরা হয়, সেখানে নেহার এই উদ্যোগ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার দিকটি সুকৌশলে তুলে ধরছেন নতুন প্রজন্মের নেহা।
তার অভিমত, আজকাল চারিদিকে যে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে, তা আমাকে খুবই পীড়া দেয়। আমি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদের আগের ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে চাই। ভারত তার ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। আমি সেই চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
ইতোমধ্যেই নেহার এই ‘মিশন’ বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। নেহার এই উদ্যোগ যাদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে তার মধ্যে অন্যতম উত্তর প্রদেশের বেরিলির বাসিন্দা গুলাব বানো। ইফতারের জন্য প্রতিদিন জামা মসজিদে আসা গুলাব জানান, এই উত্তেজনার মুহূর্তে একজন হিন্দু নারীকে মুসলমানদের ইফতারের খাবার দিতে দেখাটা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একটা মানুষ কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারেন নেহা সেটা দেখিয়েছেন। জামা মসজিদে দাঁড়িয়ে তিনি একা রোজাদারদের ইফতারি দিয়ে যাচ্ছেন।
গাজিয়াবাদে কর্মরত মুজাফফরনগরের ৩৫ বছর বয়সী নওশাদও নেহার এই নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘একটা ছোট কোণে আমি একজন মহিলাকে খাবার বিতরণ করতে দেখেছিলাম। প্রথমে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। আবার যখন জানতে পারি যে সে একজন হিন্দু, তখন আমি আরো বেশি অবাক হয়েছিলাম। আজকের সময়ে, যেখানে এত ঘৃণা ও বিদ্বেষ সেখানে নেহা ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এমন একটা কাজ করছেন, যা অনেকেই করার সাহস করে না।’’
নেহার এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে উভয় সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবকরাই তার এই মিশনে যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছেন। অনেকেই এখন ইফতারের খাদ্য বিতরণের জন্য আর্থিক অনুদান বা অন্য সহায়তা প্রদানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তবে নেহার দৃষ্টিভঙ্গি আরো বিস্তৃত। তার মূল স্বপ্ন, জামা মসজিদের আশপাশে যারা গৃহহীন ও জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম খোলা।
সে বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমি বয়স্কদের রাস্তায় ঘুমাতে দেখি। আমার স্বপ্ন হল তাদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করা। এমন একটা জায়গা হবে যেখানে তারা মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে। এটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য।’’
ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইফত র র খ ব র দ র জন য ন হ র এই করছ ন মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, হল খুলে না দেওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মার্চ ফর কুয়েট’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
আরো পড়ুন:
হাসপাতালে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
দাবিতে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ সিন্ডিকেট সভার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সভায় উপস্থাপন করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।”
তিসি আরো বলেন, “সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে থেকে শুরু করার এবং সব আবাসিক হলসমূহ আগামী ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন শিক্ষার্থী সোমবার রাতে জানান, তারা সবাই সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত জানার জন্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষা করেন। তারা আশাবাদী ছিলেন, সিন্ডিকেট মেম্বাররা মিটিং শেষে তাদের আপডেট জানাবেন। মিটিং শেষ হলে তারা আপডেট জানতে চান শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু, তারা কোনো সাড়া পাননি। এ কারণে পূর্বঘষিত কর্মসূচি অনুসারে হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যতক্ষণ পর্যন্ত হল খোলা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তারা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ