সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উদযাপনে প্রস্তুতি সভা করেছে বন্দর উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে এ আয়োজন করা হয়।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন এনএসআই এর পরিচালক হাফিজুর রহমান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপনে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের উপদেষ্টা সরোজ কুমার সাহা, শিখন সরকার শিপন, জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি, শঙ্কর সাহা, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দপ্তর সম্পাদক অভিরাজ সেন সজল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সদস্য সচিব খোকন সাহা, ঋষিকেশ মন্ডল মিঠু, রিপন দাসসহ লাঙ্গলবন্দ স্নান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবা ক্যাম্পের প্রতিনিধি এবং সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ।

প্রস্তুতি সভায় মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উদযাপনে প্রয়োজনীয় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনার করা হয়। বিশেষ করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক পুন্যার্থীর আগমন এবং নির্গমন নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর এবং সেবা ক্যাম্পের প্রতিনিধিদের করণীয় শীর্ষক দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা করা হয়।

স্নান চলাকালীন সময়ে পূর্র্ণথীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এবং সেনিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে, ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় গভীরতা নির্ধারণ করতে, নির্ধারিত সময় গুলোতে বালুবাহী বাল্ব হেড চলাচল বন্ধ রাখতে, প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং তাদের নাম এবং মোবাইল নাম্বার সরবরাহ করতে, পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে, ভাঙা সড়কগুলো মেরামত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

এ সময় জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের উপদেষ্টা শিখন সরকার শিপন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান আয়োজনের লক্ষ্যে যেসব প্রতিবন্ধকতা গুলো আছে তা লিখিত আকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ উপজ ল কর মকর ত প রস ত ত উপদ ষ ট ব যবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ