দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবার ট্রেজারি বন্ডের লেনদেনে হঠাৎ করে বড় চমক দেখা গেছে। এদিন ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ২০ বছর মেয়াদি একটি ট্রেজারি বন্ড। হঠাৎ করে একটি ট্রেজারি বন্ডের বিপুল এই লেনদেন বাজারে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি ট্রেজারি বন্ডের খুব বেশি লেনদেন হয় না। এর মধ্যে আজ হঠাৎ করে একটি বন্ড লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসায় সবার মধ্যে একধরনের কৌতূহল তৈরি হয়। কারা এই বন্ড কিনেছেন বা কারা বিক্রি করল, এ নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একে অপরের কাছ থেকে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আজ ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ২০ বছর মেয়াদি টিবি (ট্রেজারি বন্ড) ০৭৪৪ বন্ডটি। এদিন এক লেনদেনেই এই বন্ডের ৪ লাখ ইউনিটের হাতবদল হয়। মাত্র একটি আদেশে (ট্রেড) এই লেনদেন সম্পন্ন হয়। যার বাজারমূল্য ছিল ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তাতে এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয় এটি। অর্থাৎ একজনমাত্র বিক্রেতা বন্ডটির চার লাখ ইউনিট বিক্রি করেছেন। আর একজন ক্রেতা তা কিনেছেন।

হঠাৎ করে একটি ট্রেজারি বন্ডের বিপুল লেনদেনের কৌতূহল থেকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। তাতে জানা যায়, লেনদেনটি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবির সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে। আইসিবিরই নিজস্ব দুটি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে এই লেনদেন হয়। অর্থাৎ এক তহবিল থেকে বিক্রি করা হয়, অন্য তহবিল থেকে তা কিনে নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানির উপপ্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান এ লেনদেনের সত্যতা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আইসিবির একটি তহবিল থেকে এই বন্ড বিক্রি করা হয়েছে আর অন্য আরেকটি থেকে তা কেনা হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছর মেয়াদি এ বন্ড গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বন্ডটি ইস্যু করা হয় গত বছরের ২৮ জুলাই। এটির মেয়াদ শেষ হবে ২০৪৪ সালের ২৮ জুলাই। বন্ডটির মেয়াদ রয়েছে ১৯ বছর ৪ মাস ৪ দিন। বর্তমানে এটির কুপন রেট বা সুদহার ১২ দশমিক ৭৫। বন্ডটির অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া বন্ডটির ইউনিটের দাম ১ টাকা ৩১ পয়সা বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা ৮৮ পয়সায়। এ দামেই ৪ লাখ ইউনিটের হাতবদল হয়। বন্ডটির মোট ইউনিটের সংখ্যা ২১ কোটি ৬৬ লাখ ৮২ হাজার। সরকারের পক্ষে বন্ডটি ইস্যু করে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন র শ র ষ শ য় রব জ র ইউন ট র ক ত হল বন ড র আইস ব

এছাড়াও পড়ুন:

এক মাসে দ্বিগুণ শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দাম

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকস। আগের তিন সপ্তাহেও এটির শেয়ারদর বেড়েছে। গত এক মাসে সিরামিক খাতের এই লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাজারে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর টানা মূল্যবৃদ্ধিতে গত বৃহস্পতিবার এটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা ২০ পয়সায়। সেই হিসাবে এক মাসে এটির দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ১২১ শতাংশ।

শেয়ারবাজারে হুহু করে শেয়ারের দাম বাড়লেও কোম্পানিটি কিন্তু লোকসানি। সর্বশেষ গত জুলাই–ডিসেম্বরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ২১ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। তাতে এটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৫ পয়সা ঋণাত্মক। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত এক মাস ধরে বেড়েই চলেছে। যদিও মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানেন না বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা মনে করেন, গুজব ছড়িয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দাম বাড়ানো হচ্ছে।

গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা হয়েছিল উপদেষ্টা কমিটি। ওই কমিটি শাইনপুকুর সিরামিকসসহ বেক্সিমকোর বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ায় সরকার শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যায়। এর বদলে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে বেক্সিমকোর বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল শাইনপুকুর সিরাকিমস। সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকা। বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। শুধু লেনদেন নয়, গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সা বা ২৬ শতাংশের বেশি।

হঠাৎ এক মাস ধরে শেয়ারবাজারে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের এমন দাপুটে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারগুলো নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ নানা কারণে এগুলোর আয় ও মুনাফাকে নানাভাবে কমিয়ে দেখাত। এ ছাড়া বেক্সিমকোর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানা বদল নিয়েও নানা জল্পনাকল্পনা রয়েছে। এসব প্রচারণাকে কাজে লাগিয়ে কারসাজিকারকদের একটি অংশ এই শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটাচ্ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজারে বেক্সিমকোর মালিকানাধীন কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। এর আগে ৯ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৮ টাকা। টানা দরপতনে গত ২৭ অক্টোবর সেই দাম নেমে আসে ১০ টাকায়। অর্থাৎ আড়াই মাসে এটির শেয়ারের দাম প্রায় চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। সেখান থেকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে।

২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকস। সর্বশেষ গত বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর শেয়ারের ৫০ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। এটি শেয়ারবাজারে মাঝারি মানের ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্রদল নেতা ইমরানের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান
  • ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে ইস্টার্ণ ব্যাংক
  • এক মাসে দ্বিগুণ শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দাম