হাসপাতালের গেইটে গাড়ি থেকে নেমেই ছুটলেন তামিম ইকবাল পত্নী। অচেনা এক হাসপাতাল, কোন দিকে যাবেন, লিফট কিংবা সিঁড়ি; দিগ্বিদিক ছুটছিলেন আয়েশা। মুহূর্তের মধ্যেই যেন সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায় খান পরিবারের। 

ঘটনার শুরু সোমবার সকাল থেকে। বরাবরের মতো সাভারের বিকেএসপিতে যান মোহামেডান অধিনায়ক। যথাসময়ে টসও করেন। খেলা শুরু হয়। এরপর ঘটতে থাকে ঘটনা, অসুস্থ হতে থাকেন তামিম। তীব্র বুকে ব্যথা থেকে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তামিম। 

হাসপাতালে বিসিবির প্রধান চিকিৎসকের সঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজন

আরো পড়ুন:

তামিমের সুস্থতা প্রার্থনায় গোটা দেশ

তামিমের জন্য কেকেআরের প্রার্থনা

বুকে ব্যথার পর তামিমকে আনা হয় সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে। নিজের গাড়িতে করেই হাসপাতালে আসেন। ইসিজিসহ চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন হাসপাতালেই থাকতে। 

কিন্তু তামিম এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আসতে চান। সবকিছুর ব্যবস্থা হয়, বিকেএসপিতে তামিমের জন্য হেলিকপ্টারও পৌঁছে যায়। কিন্তু তামিমের অবস্থা যেতে থাকে খারাপের দিকে। এক পর্যায়ে মুখের ফেনা বের হতে থাকে, পালস্ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবস্থা এমন বেগতিক হেলিকপ্টারে তোলার মতো অবস্থা ছিল না। হেলিকপ্টারে না ওঠাই যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে তামিমের জন্য। এই সময় তাকে সিপিআর দেওয়া হয়, হাসপাতালে আনার পর দেওয়া হয় ডিসি শক। তাতেই যেন রক্ষা! 

ছুটে এলেন মুশফিকুর রহিম

সেই সময় তামিমের সঙ্গে ছিলেন মোহামেডান-শাইনপুকুর ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল। তিনি বলেন, “আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, ব্যাপারটা কিন্তু অকল্পনীয়। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন কাজ করি, নিজেও ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু আজকের ঘটনা ক্যারিয়ারে এরকম হয়নি।” 

“আমরা যখন কাছে গেলাম, তামিম কোনো কথা তো নেই, অচেতন অবস্থায়। তখন আমরা ভয় পেয়ে গেছি। আমরা কী হেলিকপ্টারে তুলব বা গাড়িতে রেখে কী করব! ডাক্তারকে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম। ডালিম পাঞ্চ করতেছে ওকে, মুখ দিয়ে ফেনা পড়তেছে—পালস্ নেই এমন একটা অবস্থা। ডাক্তার বলল হেলিকপ্টারে নিলে সে চিকিৎসা বঞ্চিত হতে পারে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই সে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, জ্যামও ছিল না। ৪/৫ মিনিটের মধ্যে এলাম। এসে দেখলাম ডাক্তারদের পুরো একটা গ্রুপ রেডি হয়ে আছে। ওখানে সম্ভবত লাইফ সাপোর্টেও নিয়ে গেল।’’ 

দেখতে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

দ্বিতীয়বার হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করানো হলে ‘লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি’তে শতভাগ ব্লক ধরা পড়ে। এরপর দ্রুত রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তখনো হাসপাতালে তামিমের পরিবারের সদস্যরা না আসায় চিকিৎসার সম্মতি দেন দেবব্রত পাল। কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তামিমের রক্তনালীর ওই ব্লকে সফলভাবে রিং পরানো হয়। 

তামিমকে রাখা হয় কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে। এরপর হাসপাতালে উপস্থিত হয় তামিমের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। বড় ভাই নাফিস ইকবালও উপস্থিত হন। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফেরে তামিমের, কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। 

বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ, চাচা বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, মাহবুব আনাম, মনজুর আলম, প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী আসেন হাসপাতালে। তবে কেউ কোনো কথা বলেননি। 

হাসপাতালের লবিতে ভক্তরা

মোহামেডানের খেলা শেষ হলে আসেন সতীর্থরা। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরা তামিমকে দেখতে আসেন। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ তামিমের সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পান। 

কেপিজের মেডিকেল ডিরেক্টর ডাক্তার রাজিব বলেন, “এখন ওই ব্লকটা পুরোপুরি চলে গেছে। আমরা যেমনটা বলছিলাম, একটু ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে ছিল, স্টেন্টিংয়ের পর এখন পর্যবেক্ষণে আছেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা এখনও কাটেনি। একটু সময় লাগবে। আমরা সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছি।”
 
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, “তামিমের অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। তবে ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর আগে কিছুই বলা যাবে না।”  

তামিমকে দেশের বাইরে নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নে দেবাশীষ বলেন, “আগে ২৪ ঘণ্টা পার হোক, তারপর বলা যাবে, চিকিৎসকরা বলে দেবেন কী করতে হবে।”

তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল

সময় গড়ানোর সঙ্গে হাসপাতালে ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাকা থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও তামিম ভক্তরা হাজির হচ্ছিলেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ বিসিবি থেকে অনুরোধ করা হয় ভিড় না বাড়ানোর জন্য। 

২২ গজে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে লড়েছেন দেশ সেরা ওপেনার তামিম, এক হাত দিয়ে ব্যাটিং করে বিশ্বভুবনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন, এবার তামিমের লড়াই যেন নিজের সঙ্গেই। আবার কবে পুরোনো তামিমকে দেখা যাবে? জানার জন্য অন্তত ২৪ ঘণ্টা তো অপেক্ষা করতেই হবে। 

ঢাকা/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম ম ইকব ল পর ব র র র জন য অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম

সন্তান জন্মদানের যে তারিখ চিকিৎসকরা দিয়েছিলেন, এর তিন রাত আগেই প্রসব ব্যথা শুরু হয় ময়না বেগমের। প্রথম দুই সন্তানের জন্মও হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সেলাইয়ের জায়গায়ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই অস্ত্রোপচারে দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। অবশেষে সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুরের আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ময়না। পহেলা বৈশাখের সকালে জন্ম বলেই দাদি-নানির সম্মতিতে এই শিশুর নাম রাখা হয় ‘পহেলা’।

ময়না বেগম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের খালেক আকনের মেয়ে। সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের চরপুটিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন মোড়লের ইতালিপ্রবাসী ছেলে লুৎফর মোড়লের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় আট বছর আগে। লুৎফর-ময়না দম্পতির আগেই দুই ছেলেমেয়ে হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রহমানের বয়স ৭, রুকাইয়া মোড়লের বয়স ৪ বছর। 

চিকিৎসাধীন ময়না জানান, তাঁর সন্তান প্রসবের জন্য ১৬ এপ্রিল দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে ব্যথা ওঠে। ৯ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে দ্রুত তাঁকে এনে ভর্তি করা হয় আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তানের জন্ম দেবেন– এমনটি কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। প্রথম দুই সন্তানও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি। সেলাইয়ের দুটি জায়গায় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাই বেশি দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। 

প্রসূতি ময়নার ভাষ্য, স্বামী প্রবাসে। কিন্তু নিয়মিত খোঁজ রাখেন। প্রসব ব্যথা বাড়তে থাকায় তাঁর মনে শঙ্কা ভর করেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের আশ্বাস ও আন্তরিকতায় কিছুটা সাহস পান। সন্তান জন্মের পর নববর্ষের শুভেচ্ছা শুরুতে কেউ জানাননি। তবে এক স্বজন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর বিষয়টি বুঝতে পারেন।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অতিথিকে কোলে নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হয় স্বজনদের। এদিনই দাদি-নানির সম্মতিতে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘পহেলা’। জন্মের পরপর তার ওজন হয় দুই কেজি ৭০০ গ্রাম। গর্ভে থাকার সময় সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা চিন্তা ছিল ময়নার। তাই কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেননি। ময়না বলেন, দূর থেকে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছেন প্রবাসী স্বামী লুৎফর। পাশাপাশি স্বজনরাও তাঁকে কোনো ভারী কাজ করতে দেননি। মেয়েকে তারা মাদ্রাসায় পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ রাজীব হোসেন বলেন, বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ। এমন দিনের সুন্দর সকালে শিশুটির জন্ম হয়েছে। নামও রাখা হয়েছে ‘পহেলা’। শিশুটির জীবনের দুটি আনন্দের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেবে সমকাল। 

সোমবার সকাল ৯টার দিকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান আলো দেখে পৃথিবীর। এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, সুন্দরভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে শিশুটির জন্ম, এটা খুবই আনন্দের। দুটি আনন্দ একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ হবে শিশুটি ও পরিবারের।

শিশুটি জন্মের পর আত্মীয়স্বজন বাহারি রঙের পোশাক নিয়ে এসেছেন। নববর্ষের প্রথম দিন ভাগনির মেয়ে হওয়ার সংবাদে ছুটে আসেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সমকালের প্রজন্ম বরণের বিষয়টি শুনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানান। এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী জানিয়ে প্রশংসা করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী আকবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটুয়াখালী মেডিকেলের বহির্বিভাগে তালা, চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
  • পবিপ্রবির শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বলছেন চিকিৎসকরা
  • দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম