বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের তদন্ত চলছে। বিট্রিশ এমপিদের সন্দেহ, এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তাকে নিয়ে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের মাঝে কুতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্রিটিশ এমপিদের কাছে কিছু ইমেইল পাঠানো হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ তিনি। বাংলাদেশ থেকে পাচার কথা অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে এক সফরে আছেন। এ সফরে ‘কালো ছায়া’ ফেলেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির অভিযোগ।
 
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে লেবার মন্ত্রিসভার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান টিউলিপ। ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের ব্যয় থেকে প্রায় ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।

এমন সময়ে যুক্তরাজ্যের এমপিদের কাছে আহসান এইচ মনসুরকে নিয়ে কুতথ্যে ভরা ইমেইল আসছে। এদিকে সোমবার তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) অন রেস্পন্সিবল ট্যাক্স অ্যান্ড করাপশনের এমপিদের। তার আগে এসব ইমেইল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা। 

সাংবাদিক দাবি করা এক ব্যক্তি এসব ইমেইল পাঠান। এগুলোতে 'ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট' নামের এক ওয়েবসাইটের লিঙ্ক সংযুক্ত করা হয়। যেসব লিংকে এমন কিছু প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে আহসান এইচ মনসুরের মেয়ের সম্পত্তির ফিরিস্তি এবং এসব সম্পত্তির উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
 
কিন্তু এসব সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতিবেদক সম্পর্কে অন্য কোথাও তথ্য পাওয়া যায়নি। দ্য গার্ডিয়ান যাচাই করেছে, এসব ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া স্টক ইমেজ।
 
আহসান এইচ মনসুর এবং এমপিদের ওই কমিটির আশঙ্কা, পরিকল্পিত অপপ্রচারের অংশ হিসেবে ওই ইমেইলগুলো পাঠানো হচ্ছে। 
আহসান এইচ মনসুরের মতে, অর্থ পাচারের জন্য যাদের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তারাই এসব কুতথ্য ছড়িয়ে তার সম্মানহানির  অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তার মেয়ে যুক্তরাষ্টের একজন নাগরিক, তার সঙ্গে বাংলাদেশের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান আহসান এইচ মনসুর।
 
যুক্তরাজ্যের এমপিদের ওই কমিটির এক সদস্য রুপা হক একটি ইমেইল পান। সেই ইমেইলটি পাঠানো হয়ে প্যালাটিন কমিউনিকেশনস নামের একটি স্থানীয় পাবলিক রিলেশনস ফার্ম থেকে। সেখানেও ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট ওয়েবসাইটের লিংকগুলো পাঠানো হয়। 

ইমেইলটিতে বলা হয়, আহসান এইচ মনসুর যদি 'টিউলিপ সিদ্দিকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন' তবে তার এবং তার পরিবারকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আসা উচিত।
 
আহসান এইচ মনসুর দাবি করেন, তিনি কখনওই টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এপিপিজির সদস্যরা এসব ইমেইল পাঠিয়েছেন পার্লামেন্টারি ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি এবং পার্লামেন্টারি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারদের কাছে। সেখানে কুতথ্য নিয়ে তদন্ত চলছে।
 
কমিটির সদস্য ফিল ব্রিকেল বলেন, ‘এসব যোগাযোগ (ইমেইল) যদি গুরুতর একটি দুর্নীতির ব্যাপারে ব্রিটিশ এমপিদের মাঝে অপপ্রচারের প্রচেষ্টা হয়ে থাকে, তবে তা নিয়ে আমাদের অবশ্যই চিন্তিত হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে প্যালাটিন কমিউনিকেশনসের এক মুখপাত্র বলেন, ওই ইমেইলের টেক্সটের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না এবং তাকে সত্যি বলেও তারা দাবি করেন না। অনেক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের মতো এগুলোও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে কিছু প্রশ্নের অবতারনা করে এবং আমরা মনে করে এগুলো এমপিদের বিবেচনা করা উচিত।’

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের এক মুখপাত্র বলেন, এসব প্রতিবেদনে লেখক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। 

ওয়েবসাইটটির মুখপাত্র এও বলেন যে, এসব প্রতিবেদন কমবেশি সঠিক বলেই তাদের বিশ্বাস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত এমপ আহস ন এইচ মনস র ব র ট শ এমপ শ এমপ দ র ট উল প সদস য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আদালতের ভেতরে পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক

পাবনায় আদালতের ভেতরে শুনানি চলাকালে ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

আটককৃতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের ফতে মোহাম্মদপুর নিউ কলোনী এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আওয়াল কবির (৩৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে সরোয়ার জাহান শিশির (৩৩), দাশুড়িয়া গ্রামের মৃত আমজাদ খানের ছেলে কালাম খান (৪০), এম এস কলোনী এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), লোকোসেড গাউছিয়া মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সবুজ হোসেন (৩৫) এবং ভাঁড়ইমারী বাঁশেরবাদা গ্রামের মৃত আব্দুল গাফফার সরদারের জহুরুল ইসলাম (৩৫)।

তাদের মধ্যে আওয়াল কবির ঈশ্বরদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, সরোয়ার জাহান শিশির পৌর ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী, কালাম খান দাশুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রুবেল হোসেন পৌর ৪নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জহুরুল ইসলাম ডালিম সলিমপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর ঈশ্বরদীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময় নাশকতা একটি মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় আটককৃতরা হাজিরা দিতে এসেছিলেন। হাজিরা চলা অবস্থায় তারা এজলাসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকেন। এসময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্য শাহ আলম তাদের ছবি তুলতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ‌ সদস্যকে মারধর করেন ওইসব নেতাকর্মীরা। 

এসময় আদালতের আইনজীবী ও উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আদালতের শুনানি শেষে তাদের আটক করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিদর্শক ( কোর্ট ইন্সপেক্টর) রাশেদুল ইসলাম জানান, সঙ্গে সঙ্গে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, “আদালতের এসলাসে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। বিএনপির কেউ যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ