ভোর ছয়টায় টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস থেকে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। বদর ভাই তখন রানিং শুরু করে দিয়েছে, আমাদের দাঁড়াতে বললেন। ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অটোতে করে নগর জালফৈ বাইপাসে এলাম, গতকালের শেষ হাঁটার স্থান থেকে আজকের হাঁটা আরম্ভ হলো।

সকালের আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। পথেও গাছগাছালি রয়েছে অনেক। শহরের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছি। একেবারে ১০কিমি হাঁটার পর বিরতি নিলাম গপ্পের বাজারে। ভোরের দিকে হাঁটা শুরু করলে অনেক দূর খুব সহজে চলে যাওয়া যায়। বাঘিল এসে দেখা হলো সমুদ্র ভাই, ডাক্তার শাহানাজ আর শামীমের সঙ্গে। তারা ঢাকা থেকে আমাদের সাঁতারের সঙ্গী হতে এসেছে। সমুদ্র ভাই ড্রোন শট নেবে। ‘প্রাণ' এই যাত্রায় শাকিলের টাইটেল স্পন্সর তাই তাদের পক্ষ থেকে সমুদ্র ভাই ডকুমেন্টেশন করবে। আর ডাক্তার শাহানা আমাদের সঙ্গে সাঁতার কাটবে। শামীম কিছুদূর হেঁটে ঢাকায় চলে যাবে। ওমরপুরে বড় ব্রিজ পার হয়ে ডান দিকে গ্রামের সরু পথে পা বাড়ালাম কাকুয়া বাজার অবদি। গ্রামের ধুলোমাখা পথ, চারিদিকে সবুজ ধান আর ভুট্টা ক্ষেত। হীম শীতল বাতাস বইছে, ধানের সবুজ শীষগুলো হেলেদুলে নাচছে। স্নিগ্ধ এক অনুভূতি! যেন ঠিক জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’। 

আলীপুর গ্রাম দিয়ে আমরা তিনজন যমুনা নদীর পাড়ে চলে এলাম। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে, হাওয়ার তোড়ে উত্তাল ঢেউ মনে শিহরণ জাগাচ্ছে। নান্দনিক দৃশ্য আর নদীর পাড় ধরে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে চলা আমাদের কিছুটা সজীব করলো। এই বিশাল যমুনার বুকে একটু পরেই নামতে হবে। শাকিল আর আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ শাকিল ভালো করে সাঁতার কাটতে পারে না এবং লম্বা দূরত্বে হেঁটে এসে সে ক্লান্ত। আজকেও আমাদের ২৫ কিলোমিটারের মতো হাঁটতে হয়েছে। যমুনা নদী পাড়ি দেওয়ার আগে আরো একটা নদী পার হতে হবে যা বংশী নদীর উৎস মুখ। যমুনার সাথে মিলিত হবার আগে এই নদী হয়েছে ধলেশ্বরী। এখানে পানি তেমন একটা নেই, খেয়া পারাপারের নৌকা আছে স্থানীয়দের জন্য। 

আমরা সাঁতারের পোষাক পরে জলে নেমে গেলাম। শাকিল ‘সি টু সামিট’ অভিযানে হাঁটার পথে কোনো যানবাহন ব্যবহার করবে না, তাই বাধ্য হয়ে নদী পথ সাঁতরে পাড়ি দিতে হবে। যমুনা পাড়ি দেওয়ার আগে এই ধলেশ্বরী একটা ওয়ার্মআপ বলা যায়। জলে নেমে তাকে কয়েকটা সাঁতারের টেকনিক শিখিয়ে দিলাম। দেখা যাক এই অল্প সময়ে আয়ত্তে আনতে পারে কিনা। নদীর জল হীম শীতল, কোথাও বেশি কোথাও কম। খুব অল্প সাঁতারে আমরা পাড়ে পৌঁছে গেলাম। বেড়িবাঁধ ধরে কিলো ২ গেলে দলিয়াপাড়া, পাথরঘাটা ঘাট। এখানে আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। নদীতে নামবো আমরা ২ জন, আর সহযোগী হিসেবে সাঁতার কাটবে টাঙ্গাইল থেকে হেলাল ভাই, শাকিল হাসান, সোনিয়া আপা, ডাক্তার শাহানাজ, মেরাজ ও সালমান।

ঘাটে পৌঁছানোর পরে হেলাল ভাই ও অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে হলো। ঘড়িতে বেলা ৩টা বেজে গেছে। সূর্য এর মধ্যে হেলে পড়তে শুরু করেছে। অপূর্বদা আমাদের জন্য গামছা নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে। সমুদ্র ভাই ড্রোন উড়িয়ে দিলো। আমাদের রেডি হওয়া, ফটোসেশান, নৌকা ঠিক করা এসব কাজ করতে করতে আরো এক ঘণ্টা চলে গেলো। এদিকে নৌকায় খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি নেওয়ার কথা কারো মাথায় আসলো না। নৌকায় ছিল টনি, সিজান ও তার বন্ধুরা, শাকিল হাসানের কয়েকজন ছোটভাই আর অপূর্বদা। প্রথম অংশের দূরত্ব অল্পখানি। সাঁতার কেটে প্যাচপ্যাচে কাদায় পা ডুবিয়ে চরের ধান ক্ষেতে উঠে এলাম সবাই। শাকিলকে আমি আর হেলাল ভাই কাছাকাছি রেখে পাড়ে নিয়ে আসলাম। 

এরপর লম্বা পথ খালি পায়ে বালু চরে হেঁটে হেঁটে যমুনা সেতুর কাছে চলে এলাম। চরে বাদাম, আলু, পেঁয়াজ চাষ হয়। খালি পায়ে বালুর মধ্যে গতি ধীর হয়। ব্রীজের কাছাকাছি এসে বুক ভরে দম নিয়ে নিলাম। বেশ খানিকটা দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। কয়েকটা স্ট্রোক দেওয়ার পর বুঝলাম নদীতে বেশ স্রোত আছে। একটু বিরাম দিলেই অনেকটুুকু পিছিয়ে যাচ্ছি। শাকিলের কাছে একবার হেলাল ভাই আরেকবার আমি পালা করে সাঁতার কাটছি। শাকিল প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাত পা ছুড়তে। এদিকে সোনিয়া আপার চোখ দেখে আমি একটু ভয় পেলাম। এমন ঢেউয়ের মধ্যে শাকিলকে সামলানই কঠিন হয়ে পড়েছে, এর মধ্যে অন্য কাউকে রেস্কিউ করার প্রয়োজন হলে আমাদের মিশনটাই ভেস্তে যাবে! আমাদের  দেশে অনেকেই বলে ‘গ্রামে বড় হয়েছি, সাঁতার জানি’। কিন্তু সঠিক টেকনিক আর অনুশীলন না থাকলে নদী-খাল বা সাগরে লম্বা সময় টিকে থাকা চারটিখানি কথা নয়। সাধুবাদ জানাই তারা যমুনার উত্তাল ঢেউয়ে নামার সাহস দেখিয়েছেন, তবে এই মিশনে আমাদের যমুনা পাড়ি দেবার থেকে শাকিলকে সহিসালামতে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া মূল লক্ষ্য। 

লাইফজ্যাকেট দিয়ে সোনিয়া আপাকে একটু সামলে নিলাম। তারপর শাকিলকে হোসেনের হাওলায় দিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। বাকিরা সাধ্য মতো চেষ্টা করে এগিয়ে গেলো। হেলাল ভাই ও শাকিল হোসেন এর আগেও এই অংশে সাঁতার কেটেছে তাই তাদের উপরই আমাদের ভরসা করতে হবে। ভালোভাবে এই অংশটা পাড়ি দিয়ে চরে উঠে গেলাম। এতো শুধু চর নয় এক বিস্তীর্ণ বিরাণভূমি। বিশাল জায়গাজুড়ে নদীর বুকে চর জেগেছে, এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আমাদের হেঁটে যেতে হবে। ব্রিজের নিচ থেকে অস্তমিত রক্তিম সূর্যকে অপার্থিব মনে হচ্ছিল। তবে প্রকৃতি দেখা বা সাহিত্য কপচানোর থেকে আমরা কখন নদী পার হবো তার টেনশনে কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাদের পায়ে নানা কিছু বিঁধে যাচ্ছে। শাকিল, হেলাল ভাই অনেকটুকু এগিয়ে গেলো। আমি সোনিয়া আর শাহনাজ একটু দূরেই বলা যায়। আমি তাদের কিছুটা কাউন্সিলিং করছিলাম এইটুকু পথ আপনারা নৌকায় উঠে যান। এদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এই পথের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। শাহনাজকে সাহসী মেয়ে বলতে হবে, শটকার্ট দেখে সে বদ্ধ খালে নেমে গেলো যেখানে দুজন মাঝি জাল ফেলছিল। তারা জলদি আমদের দিকে তেড়ে এলো। শাহানাজকে একজন জিজ্ঞেস করে বসল- ‘'আপনারা কি টেরোরিস্ট?’ 

এই বিরাণভূমির মধ্যে এমনভাবে দুইজন মেয়ে মানুষ কীভাবে ঢুকে পড়লো সেই ভাবনায় তাদের মনজগত উলটপালট হয়ে গেছে। শাহানাজকে দমাতে না পেরে পেছন থেকে বলল, আমাদের নাকি শেয়ালে খাবে। আমরাও হাসলাম, এরা কি বলতে চাইলো টুরিস্ট নাকি টেরোরিস্ট! চরে হাঁটার সময় ব্রীজের উপর থেকে হয়তো আমাদের বাচ্চা ছেলেমেয়ে ভেবে এক ট্রাক ড্রাইভার চিৎকার করে বলে উঠল ‘অই তোরা বাড়ি যা, ইফতারের টাইম হইয়া গেছে, আর ঘুরিছ না’। খুব মজা পেলাম এই কথা শুনে। এতোদিন ব্রীজের উপর থেকে এই নদীকে দেখছি, এবার আমরা ব্রীজের তলদেশে হেঁটে চলেছি বিন্দু হয়ে। সকালের দিকে টাঙ্গাইল শহর পেরিয়েছি, তখন একজন জিজ্ঞেস করেছিল ‘ভাই আপনারা কোন কম্পানির লোক?’ আমি উত্তর দিয়ে দিয়েছিলাম ‘টো টো কোম্পানি’। 

ইফতারের সময় এখন। নৌকায় অনেকে রোজা। দুই বোতল পানি সবাই মিলেমিশে শেষ হয়ে গেলো। আঁধার ঘনিয়ে এলেও আপারা মানলেন না, নদীতে নেমে গেলেন।  সুইমিং গগলস ভেদ করে কিছু দেখতে পারছি না। আমরা ব্রিজের থেকে অনেকটা দূরে ডান দিকে সরে এসে জলে নামলাম যেনো স্রোত আমাদের বামে পাড়ের দিকে নিয়ে যায়। এখন ভাটার সময়, যত ব্রীজের কাছাকাছি যাবো তত বিপদের মুখোমুখি হবো। কারণ সেখানে জলের ঘুর্নায়মান অংশ। একবার সেদিকে চলে গেলে শক্তি দিয়ে আর এগোনোর উপায় থাকবে না। এই অংশে দূরত্ব আগের অংশের চেয়ে আরো বেশি। তার উপর ভাটার স্রোত আরো তীব্রতর হয়েছে, সঙ্গ অন্ধকার। নৌকায় মাঝির কাছে বা রিস্কিউ টিমের কাছে কোনো বাতি নাই। এদিকে আমরা নদীর মাঝখানে এগিয়ে যাচ্ছি আর বালুর নৌকা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। হেলাল ভাই নদী থেকে আমাদের বোটকে ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে গেছেন। মাঝি স্রোতের তোড়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। এদিকে সোনিয়া আপা নদীর মাঝ বরাবর এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌকায় উঠে যাবে। ফলে নৌকা আবার তাকে তুলতে ব্যস্ত। এদিকে আমরা শাকিলকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। শাহানাজ ছিল শাকিল হোসেনের সঙ্গে, কিন্তু তাদেরও অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না। এক মুহূর্তের জন্য পুরো ঘটনাটা একটু ভেবে দেখুন কি অবস্থায় পানিতে খাবি খাচ্ছি আমরা কয়েকজন!

মিরাজ, আমি আর হেলাল ভাই শাকিলকে ধরে রেখেছি, হঠাৎ হেলাল ভাইয়ের মাসল ক্র্যাম করলো। তিনি শাকিলকে ছেড়ে দিলেন। এবার আমি শাকিলকে যতদূর পারলাম সাঁতরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালাম। মনে হলো এক জায়গাতেই রয়ে গেছি। নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছি না এই স্রোতের মধ্যে। এর মধ্যে আমরা লোহার ব্রিজ অর্থাৎ যেখান দিয়ে ট্রেন যায় এবং কংক্রিটের ব্রিজ পার হয়ে বামে চলে এসেছি। নৌকা আমাদের কাছে চলে এসেছে, এবার একটু মানসিক শক্তি পেলাম। হেলাল ভাইও মনে হলো একটু ঠিক হয়েছেন। তিনি শাকিলকে ধরে বাম বরাবর একটা বাতির আলো ফলো করে এগোতে লাগলেন। বাংলা চ্যানেলে সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি আসলে একটা বিন্দু দেখা যায়। মনে হয় খুব কাছে চলে এসেছি, কিন্তু তখনো আরো ৫ কিলোমিটার বাকি। এখানেও একই রকম অবস্থা অনুমেয় হলো। এতো এনার্জি কোথা থেকে এলো জানি না, প্রাণপণ সাঁতার কাটা শুরু করলাম। বুঝতে পারছিলাম স্রোত আমাকে টেনে ধরে রেখেছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আমাকে পারতেই হবে। 

নৌকা থেকে বলা হচ্ছে ডান দিকে সাঁতার কাটার জন্য। এখানেও বাংলা চ্যানেলের শিক্ষা কাজে লাগালাম, নৌকা থেকে তারা দেখতে পায় আমরা পানিতে থেকে দেখি না, তাই তাদের নির্দেশনা শুনতে হবে। পায়ে মনে হলো প্রপেলার লাগানো আমার। দুই পায়ের পাতা চলছে আর ডানে এবং বামে সর্বশক্তি দিয়ে স্ট্রোক দিয়ে যাচ্ছি। বাঁচা মরার যুদ্ধ। শাকিলদের দিকে দেখলাম তারা একটু দূরে সরে যাচ্ছে, নৌকা তাদের সাথে আছে। তবে তারা স্রোতের ঘুর্নিতে পড়েছে। ব্রীজের আলোতে নদীর পাড় দেখা যাচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে যোজন যোজন দূরে। গতি ধীর হলেই পিছিয়ে যাচ্ছি। মাসল ক্র‍্যাম হবার আশঙ্কাও ছিল। যাই হোক, ভাগ্য সহায় হলো, যমুনার বালুতে পা ঠেকালাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে শুয়ে পড়লাম বালুতে। একটু পর শাহানাজ আর শাকিল হোসেন আমার কাছে এসে বসলো। হেলাল ভাই, মিরাজ আর শাকিলও উঠে এসেছে একটু পরে। তবে ঠান্ডায় তার হাইপোথার্মিয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। সবাই গায়ে জামাকাপড় চাপিয়ে নৌকা থেকে নেমে এলাম। এ এক অন্য রকম মিশ্র অনুভূতি। ক্লান্তি, রাগ, অভিমান সবকিছু একসাথে মিশ্রিত। 

নৌকায় থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা উল্লাস করছে আমাদের নিয়ে। সম্মিলিত ছবি তোলা হলো। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শাকিলের চোখে পানি এলো। অন্ধকারের উম্মাদ যমুনায় সত্যি ছেলেটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এভারেস্ট হয়ত তার কাছে এই নদী পার করা থেকে সহজ হবে। এবং আশাকরি সে সেটা করেও দেখাবে। মাউন্ট এভারেস্ট চড়তে যেমন শেরপা লাগে, শাকিল আমাদের ‘নদী পারাপারের শেরপা’ বলে আখ্যায়িত করলো। প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে জীবনের শিক্ষা হিসেবে দেখলে পথ চলায় অনেক সহজ হয়।

ঢাকা থেকে শাকিল আর টনির সঙ্গে আমি হেঁটেছি ১০০ কিলোমিটারেরও অধিক পথ। সাঁতার কেটেছি প্রায় ৩ কিলোমিটার আর চরের রুক্ষ পথে হেঁটেছি প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ। নদী পার হয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে এসে আমরা মিষ্টিমুখ করলাম। এ বিজয় এবং আনন্দ এখন শুধু শাকিলের নয়, আমাদের সবার। সি টু সামিটের সঙ্গী হয়ে দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা, মায়া আর ভালোবাসা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা, অবিরাম শুভকামনা এবং শুভ কাজের জয় হবেই।

ভ্রমণ লেখক, আয়রনম্যান৭০.

৩ ও বাংলা চ্যানেল ফিনিসার
 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

পুড়ে যাওয়া মার্কেটের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন যুবদল নেতা, অডিও ভাইরাল

খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে পুড়ে যাওয়া অস্থায়ী মার্কেটের মালিক রাসেল মিয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা সাগরের চাঁদা চাওয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

গত ১৯ মার্চ আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট পুড়ে যায়। ফোনালাপটি এর কয়েকদিন আগের। সাগর খুলনা মহানগর যুবদলের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। যুবদলের ওই কমিটির সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু গত ২৩ মার্চ রাতে মুক্তিপণের দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ফোনালাপের শুরুতে মার্কেট মালিক রাসেলকে সাগর বলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছো না, এটা কি ঠিক হচ্ছে তোমার?’

জবাবে রাসেল বলেন, ‘ভাই, আমি আছি খুব বিপদে।’

তখন সাগর বলেন, ‘তুমি আমারে বলছো টাকা দিয়ে যাবা, তুমি পাঁচ মাসেও আমার সঙ্গে যোগাযোগই করলে না। এটা তোমার কাছে আমি প্রত্যাশা করি?’

রাসেল বলেন, ‘ভাই টাকা ইনকাম করাই এখন কঠিন হয়ে গেছে।’

উত্তরে সাগর বলেন, ‘কেন ইনকাম কঠিন হয়ে গেল কেন? তুমি আমারে প্রথমে বললা ৫০ হাজার করে দিবা পিকচার প্যালেস থেকে। সেদিন বললা না ভাই ৩০ হাজার করে দিব। একটা টাকাও দিলা না। তুমি তো মেলাটেলা করতেছো।’

মার্কেট মালিক বলেন, ‘আমি মেলা করছি না। মন্টুর মেলায় কয়েকটি স্টল দিয়েছি।’ এরপর আরও কিছু কথা হয় দু’জনের মধ্যে।

শেষে যুবদল নেতা বলেন, ‘যাই হোক তুমি আমার সঙ্গে যে কমিটমেন্ট করেছো সেটা কি রাখবা, না রাখবা না ? সেটা বললেই হয়ে যায়।’

মার্কেট মালিক বলেন, ‘এখন পিকচার প্যালেসের যে অবস্থা, আছি খুব বিপদে। দোকানদারদের বেচাকেনা কম। টাকা-পয়সা ঠিকমতো দিতে পারছে না। আমিও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেছি না।’

ব্যবসায়ীর বক্তব্য শেষে কিছুটা সময় চুপ করে রূঢ় কণ্ঠে সাগরকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করব না।’ 

এ বিষয়ে রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। পথে বইসে গেছি। আমারে আর শেষ কইরেন না’।

আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের ৪৪টি দোকান পুড়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের জায়গা ভাড়া নিয়ে এক বছর আগে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করেন ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া। তিনি শহরে মেলা রাসেল নামে পরিচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ