ইন্টারনেটের দাম কমার সুফল কম পাবে গ্রাহক
Published: 24th, March 2025 GMT
সরকারি প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড সেবার দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সরকার। কিন্তু মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানিগুলো বলছে, ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও তা গ্রাহকের ইন্টারনেটের দামে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই মূল্য হ্রাসে কোম্পানিগুলোর সার্বিক ব্যয় তেমন কমবে না। কর ও পরিবহন খরচ না কমালে ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর সুফল গ্রাহক তেমন পাবে না।
গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিএসসিসিএলের বোর্ড সভায় ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, মানুষ যেন সাশ্রয়ে ইন্টারনেট পায় সেজন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম কমানো তার মধ্যে অন্যতম। এ সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে সব ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমবে। টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তবে মোবাইল অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্যান্ডউইথের দাম তাদের মোট খরচের তুলনায় একেবারে নগণ্য। ফলে এখানে দাম কমিয়ে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা দেওয়া যায় না।
রোববার রাতে দুটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সমকালের কথা হয়। তারা বলেন, ব্যান্ডউইথ কিনতে যে টাকা লাগে, তা তাদের মোট খরচের মাত্র দুই শতাংশ। ফলে চাইলেও গ্রাহককে খুব বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া বর্তমানে ইন্টারনেটের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কমেছে, যা দিয়ে পরিচালন খরচই উঠছে না। ফলে মানসম্মত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহককে দাম কমানোর সুবিধা দিতে চাইলে কর কমাতে হবে। পরিচালন পর্যায়ে খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১০০ টাকা আয় করলে কর ও অন্যান্য খরচসহ ৫৬ টাকা সরকারকে দিতে হয়। ২৮ টাকা খরচ হয় বিভিন্ন গেটওয়ের চার্জ দিতে। এর পর রয়েছে বিনিয়োগ, পরিচালন ব্যয়। তাই শুধু ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে ইন্টারনেটের খরচ কমানো যাবে না।
তারা জানান, বিএসসিসিএল থেকে প্রতি এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ কিনতে এখন স্ল্যাব অনুসারে গড়ে ১৮৫ থেকে ২১০ টাকা খরচ হয়।
গ্রাহক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, প্রথমত বিএসসিসিএল থেকে ব্যান্ডউইথ সরাসরি কেনে ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখান থেকে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো কেনে। ফলে ব্যান্ডউইথের দাম কমলে আইজিডব্লিউদের খরচ কমবে। এখন যদি তারা কম দামে ব্যান্ডউইথ দেয় তাহলে আইএসপির খরচ খানিকটা কমবে। কারণ ব্যান্ডউইথের দাম আইএসপির মোট খরচের ১০ থেকে ২০ শতাংশ। এই খরচ কমার হার এতই কম, গ্রাহক পর্যায়ে দাম খুব বেশি কমানো সম্ভব হয় না। ব্যান্ডউইথের দাম কমলে যেটা হবে– গ্রাহক মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা পাবে।
ইন্টারনেট অপারেটরগুলোর পরিবহন খরচ কামনোর বিষয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, এ পর্যায়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডব্লিউডিএম সুবিধা দেওয়ার কথা হচ্ছে। তাতে পরিবহন খরচ বাবদ কোম্পানিগুলোর খরচ ৩৯ শতাংশ কমে যাবে।
ডিডব্লিউডিএম হচ্ছে ডেনস ওয়েভ লেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং মেশিন, যা মোবাইল নেটওয়ার্ককে অপটিক্যাল ফাইবারে যুক্ত করে। শুরুতে ডিডব্লিউডিএম মেশিন নিয়ন্ত্রণ করত মোবাইল অপারেটররা। ২০২১ সালের পর তা ফাইবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনটিটিএন) দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ডিডব্লিউডিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ চেয়েছে মোবাইল অপারেটররা; যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ফাইবার প্রতিষ্ঠানগুলো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম ন র স দ ম কম ন খরচ কম পর য য় গ র হক সরক র র খরচ খরচ ক
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর সুবিধা গ্রাহক কতটা পাবেন
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি তার সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে দাম কমিয়েছে ১০ শতাংশ। তারা বলছে, এতে দেশে ইন্টারনেট–সেবার দাম কমে আসবে। টেলিকম খাতের বিভিন্ন অপারেটর বলছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের দাম কমে আসতে পারে। তবে সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি থেকে ব্যান্ডউইডথ নেওয়া অপারেটররা বলছে, গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।
গত শনিবার কোম্পানির বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইআইজি) পর্যায়ে সব ব্যান্ডউইডথের জন্য দাম ১০ শতাংশ কমে আসবে। এই সিদ্ধান্ত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
গ্রাহক যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ পেয়ে থাকেন, সেখানে ভলিউম হয়তো কিছু বাড়তে পারে। আর দামের প্রভাব মূলত বড় প্যাকেজের ওপর পড়তে পারে। ইমদাদুল হক, সভাপতি, আইএসপিএবিসরকারি প্রতিষ্ঠান তো দাম কমাল, কিন্তু গ্রাহক এর সুবিধা কতটা পাবেন, ইন্টারেনেটের দাম আসলেই কমে আসবে কি না—এসব নিয়ে আইআইজি, আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়।
বাংলাদেশে ব্যান্ডউইডথ আসে দুইভাবে। সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি সমুদ্রপথে ব্যান্ডউইডথ আমদানি করে। আর ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল কেব্ল (আইটিসি) ভারত থেকে আমদানি হয়। দেশে মাসে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা ৬ হাজার জিবিপিএস। যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ আসে আইটিসির মাধ্যমে। বাকিটা সাবমেরিন হয়ে। তবে সরকার মার্চ থেকে ব্যান্ডউইডথ আমদানি আইটিসির জন্য ৫০ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে।
সাবমেরিন বা আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইডথ নিয়ে থাকে আইআইজি অপারেটররা। যাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও মোবাইল অপারেটররা ব্যান্ডউইডথ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দেয়; অর্থাৎ সাবমেরিন কেব্লের ১০ শতাংশ দাম কমার প্রভাব সরাসরি আইআইজির কাছে যাবে। বিষয়টি নিয়ে আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, লাস্ট মাইল গ্রাহক এ সুবিধা পাবেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাবমেরিন কেব্লের ব্যান্ডউইডথ ভলিউমের ভেদে প্রতি এমবিপিএস ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করে, যা আইটিসি নেয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আবার সরকারের নতুন নীতি অনুযায়ী সাবমেরিনের ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার বাড়বে; অর্থাৎ বেশি দামে এখন তাদের ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে সাবমেরিন থেকে।
আইআইজিরা বলছেন, তাঁদের সব খরচের মাত্র ১০ শতাংশ যায় ব্যান্ডউইডথের পেছনে। ফলে সার্বিক দিক থেকে দাম না কমালে এবং সরকারের ভ্যাট–ট্যাক্স নীতির পরিবর্তন না হলে গ্রাহক পর্যায়ে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভলিউমের ওপর তাঁদের দাম কমবেশি হয়ে থাকে এবং ব্যান্ডউইডথের মান ভালো। এ ছাড়া ব্যান্ডউইডথের পাশাপাশি সব ধরনের সেবার দামও কমানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্রাহক এর সুফল পাবেন বলে তিনি জানান।
দেশের ইন্টারনেট গ্রাহক সবচেয়ে বেশি মুঠোফোন অপারেটরে। সাবমেরিনের দাম কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহক এর সুফল পাবেন। যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দাম কমার বিষয়টি আইআইজি পর্যায় থেকে হলে তা গ্রাহকের ওপর প্রভাব পড়বে বলে জানান আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহক যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ পেয়ে থাকেন, সেখানে ভলিউম হয়তো কিছু বাড়তে পারে। আর দামের প্রভাব মূলত বড় প্যাকেজের ওপর পড়তে পারে।