সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির (পূর্ব নাম আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড) ছয় বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বেশ কয়েকটি শর্ত নির্ধারণ করে এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ফারইস্ট নিটিংয়ের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়

সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো.

শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলাম।

বিএসইসির জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির গত ছয় বছরে এর বাস্তব চিত্র পরীক্ষা করা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানির ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কমিটিতে রাখ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে কমিশনে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা
২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের দেওয়া আপত্তি বা বিরূপ মতামত বিশ্লেষণ করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানির চলমান উদ্বেগ সম্পর্কিত বাস্তব অনিশ্চয়তাগুলো নির্ধারণ করবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একত্রীকরণ বা উল্লেখযোগ্য অন্যান্য লেনদেন থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা কোনো অযৌক্তিক সুবিধা নিয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা। সেই সাথে ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করে দেখবে গঠিত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৪৫) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.০৭ টাকা।

সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৩০ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.২৯ টাকা বা ২৯০০ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৪৪ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৩ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.৪১ টাকা বা ১৩৬৬.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১০.৪১ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ঋণে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির মোট ২৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে, যা কোম্পানির পরিশোধিত মুলধনের ৯০ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ ২২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ টাকা। দীর্ঘ পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নতুন নামে লেনদেন শুরু করে। এর আগে কোম্পানির নাম ছিল আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৯টি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৯৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ৩০ জ ন বছর র একই সময় তদন ত কর তদন ত ক ল ইসল ম ব এসইস ল নদ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

টিভির ‘ভৌতিক’ টিআরপি, পত্রিকার প্রচারসংখ্যায় দেওয়া হয় ‘গোলমেলে’ তথ্য

দেশের টেলিভিশন (টিভি) চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন পাওয়ার ক্ষেত্রে টার্গেট রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ কাজে ‘ভৌতিক’ টিআরপি হয় বলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে।

আর বিজ্ঞাপনের জন্য বাড়তি দর আদায় ও কম শুল্কে নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুবিধা পেতে ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের সংবাদপত্রগুলো প্রচারসংখ্যার ‘গোলমেলে’ তথ্য দেয় বলেও কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ জন্য টিভির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক টিআরপি নির্ণয়ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার করার সুপারিশ করেছে কমিশন।

সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন গত শনিবার তাদের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।

দর্শকদের বয়স, জেন্ডার, দেখার সময়, পছন্দের অনুষ্ঠান, আঞ্চলিক জনপ্রিয়তাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনদাতারা টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। টেলিভিশনের দর্শকদের এই প্রবণতাগুলো শনাক্ত করে তা বিশ্লেষণ ও সংকলনের পদ্ধতিই টিআরপি।

১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৫৩টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার শুরু করলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ৩৪টি। সাতটি চ্যানেল চালুর পর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। তবে সংবাদপত্রের মতো এই চ্যানেলগুলোয় সরকারি বিজ্ঞাপনের উপস্থিতি প্রায় নগণ্য। চ্যানেলগুলো পুরোপুরি বেসরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো দর্শকসংখ্যা। এই দর্শকসংখ্যা কেবল একটি সাধারণ সংখ্যা নয়, বরং এর মধ্যে জটিল অনেক বিষয় আছে। দর্শকদের বিভিন্ন প্রবণতা শনাক্ত করে বিশ্লেষণ ও সংকলনের পদ্ধতিই হলো টিআরপি। আগে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা টিআরপি নির্ধারণ করত। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) টিআরপি সেবা দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করে। অংশীজনদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টিআরপি সেবা দেওয়ার প্রস্তুতির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়, যেখানে ন্যূনতম ৫০০টি ‘সেট-টপ বক্স’ স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করার শর্ত দেওয়া হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তী সময়ে আরেকটি নির্দেশনা জারি হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিএসসিএল টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। শুরুতে ন্যূনতম দুই হাজার ডিভাইস (সেট-টপ বক্স) দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে ডিভাইসের সংখ্যা আট হাজারে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কমিশন অনুসন্ধানে জানতে পারে, বিএসসিএল তখন পর্যন্ত মাত্র ২০০টি ডিভাইস দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর চলতি বছরের মার্চে সেট-টপ বক্সের সংখ্যা হয় ৩০০।

‘ডিশ লাইন’ নামে পরিচিত কেব্‌ল অপারেটরদের সংযোগের মাধ্যমে আসা সিগন্যালকে ডিজিটালে রূপান্তর করা সেট-টপ বক্সের কাজ। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে বিএসসিএলের সম্পাদিত চুক্তির উদাহরণ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চুক্তির কপি তারা পরীক্ষা করেছে। দেখেছে, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ৫০০টি ডিভাইস দিয়ে সেবা শুরু করার প্রথম পর্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৬৮টি ডিভাইস স্থাপনের কথা চুক্তিতে বলা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায় কখন শুরু করা হবে, তার উল্লেখ চুক্তিতে নেই। স্পষ্টতই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০০টি ডিভাইস স্থাপন না করেই চুক্তিটি করা হয়েছে; চুক্তিতে অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিল গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন২২ মার্চ ২০২৫

কমিশনের মূল্যায়ন হলো, এত অল্প ডিভাইসের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উপরন্তু, বিএসসিএলের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, এই নগণ্য ডিভাইসের সব কটি সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে না। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য ফলাফল (টিআরপি) এই শিল্প ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাজে আসেনি। বরং নিম্নমানের ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি করা হয়েছে। এর জন্য সেবাগ্রহীতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।

এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ত্রুটিপূর্ণ টিআরপি–ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপনশিল্পের প্রতিনিধিদের কার্যকর উপায় নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন। কমিশন বলেছে, বর্তমান টিআরপি–ব্যবস্থায় যে অনিয়ম হয়েছে, এর জন্য দায়ী ব্যক্তি অথবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আর মিথ্যা টিআরপি প্রচারের কারণে যেসব মিডিয়া (টিভি চ্যানেল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণ চাইলে তা বিবেচনা করতে হবে।

টিআরপি তদারকি কার্যক্রমে টিভি চ্যানেলের মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ও বিজ্ঞাপন এজেন্সি থেকে একজন করে মোট তিনজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, টিআরপি নির্ধারণের প্রক্রিয়া বেসরকারিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে তা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। টিআরপি যথাযথ হচ্ছে কি না, তা তদারক করবে প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যম কমিশন’। সরকারি কোনো ঘোষণা ও বিজ্ঞাপন টিভি চ্যানেলে প্রচারের ক্ষেত্রে ফি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

আরও পড়ুন‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের২২ মার্চ ২০২৫প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো যেন নিয়ম

কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) ২০২৪ সালের নভেম্বরের তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকা ১ হাজার ৩৪০টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ৫৪৬টি। ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হয় ৭৯৪টি। একই বছরের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, নিবন্ধিত সাপ্তাহিক পত্রিকার মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৩৫৫টি। ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হয় ৮৬৩টি। এ ছাড়া কিছু পাক্ষিক, মাসিক, দ্বিমাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা দেশে রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে পত্রপত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ২৭০।

কমিশনের মূল্যায়ন হলো, এত বিপুলসংখ্যক পত্রপত্রিকার অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে অথবা অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এমন কিছু পত্রিকারও সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো শুধু পত্রিকার নাম বদল করে হুবহু একই কাঠামোয় ছাপানো হয়। আবার ডিএফপির তালিকাভুক্তি নিয়েও অনেক বিতর্ক ও অভিযোগ রয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, ডিএফপির মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিকের সংখ্যা ৫৮৪, যার মধ্যে ঢাকাকেন্দ্রিক ২৮৪টি। এই তালিকায় সাপ্তাহিক রয়েছে ৮৭টি, পাক্ষিক ১২টি, মাসিক ২৪টি ও ত্রৈমাসিক ১টি। ডিএফপির মিডিয়া তালিকাভুক্ত মোট পত্রপত্রিকা ৭০৮টি।

ঢাকায় সব ধরনের পত্রিকা যে দুটি হকার সমিতির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কমিশন দেখেছে, সেসব সমিতির রসিদে ৫৬টির বেশি নাম পাওয়া যায় না। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তবে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে ৫০টির মতো দৈনিক পত্রিকা পাঠক টাকা দিয়ে কেনে। অন্য কোনো পত্রিকা হকারদের বিক্রির তালিকায় নেই।

আরও পড়ুনসাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের মতো ও যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ২২ মার্চ ২০২৫

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পত্রিকার প্রচারসংখ্যা নিয়েও আছে ব্যাপক বিতর্ক। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা নিয়মে পরিণত হয়েছে। ইংরেজি পত্রিকার প্রচারসংখ্যার চিত্র অবিশ্বাস্য রকম গোলমেলে। ব্যতিক্রম কেবল সেসব পত্রিকা, যারা স্বেচ্ছায় প্রকৃত প্রচারসংখ্যা ঘোষণা করে।

প্রচারসংখ্যা কত বেশি দেখানো হয়, তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে কমিশন। মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্রিকাগুলোর ঘোষিত প্রচারসংখ্যার যোগফল দৈনিক প্রায় পৌনে দুই কোটি। ডিএফপির হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৫৭টি দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন এক লাখ করে বা তার বেশি কপি ছাপা হয়। অথচ ঢাকার দুটি হকার সমিতি এবং সারা দেশে বিতরণ করা পত্রিকা বিক্রির হিসাবে এই সংখ্যা দিনে ১০ লাখের বেশি নয়।

কমিশন বলেছে, সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা বাড়ানোর মূলে দুটি কারণ আছে। এগুলো হলো বিজ্ঞাপনের জন্য বাড়তি দর আদায় এবং কম শুল্কে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা।

আরও পড়ুনসাংবাদিকতার সুরক্ষায় আইন করার সুপারিশ ২২ মার্চ ২০২৫

এমন পরিস্থিতি তুলে ধরে কমিশন সুপারিশ করেছে, সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষার সংস্কার জরুরি। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থায় দুর্নীতি হচ্ছে। মিডিয়া তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যে শর্ত আছে, তাতে ন্যূনতম প্রচারসংখ্যা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু এটি প্রচারসংখ্যা না হয়ে বিক্রি হওয়া কপির সংখ্যা হওয়া উচিত, যা পরিশোধিত মূল্যের বিল যাচাই সাপেক্ষে হবে। কমিশন পত্রিকার বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোসহ আরও কিছু সুপারিশ করেছে।

টিআরপি ও প্রচারসংখ্যা নিয়ে বিদ্যমান এসব চর্চাকে অনৈতিক বলেন উল্লেখ করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসব অনৈতিক কাজ করে সুস্থ প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করা দরকার।

আরও পড়ুনসাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য সংবিধান ও আইন সংষ্কারের সুপারিশ ২২ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনবিটিভি, বেতার ও বাসসকে একীভূত করে একটি সংস্থা করার সুপারিশ২২ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনগণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে : প্রধান উপদেষ্টা২২ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনসংবাদপত্র ও প্রচারসংখ্যা নিয়ে ডিএফপির অবিশ্বাস্য তথ্য ২০ অক্টোবর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন মাসে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, বিচহ্যাচারির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ
  • টিভির ‘ভৌতিক’ টিআরপি, পত্রিকার প্রচারসংখ্যায় দেওয়া হয় ‘গোলমেলে’ তথ্য
  • জেমিনি সি ফুডের কারসাজি: এবাদুল পরিবারকে ৩.৮৫ কোটি টাকা দণ্ড
  • এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক
  • স্টক এক্সচেঞ্জ ‘না’ করলে আইপিও অনুমোদন নয়
  • আইপিওর খসড়া সুপারিশ জমা দিয়েছে পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের
  • ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
  • আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের কারসাজি: রাভী হাফিজকে ১৫ কোটি টাকা দণ্ড
  • শেয়ার কারসাজি: ১৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৯০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড