শার্প ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি
Published: 24th, March 2025 GMT
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির (পূর্ব নাম আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড) ছয় বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বেশ কয়েকটি শর্ত নির্ধারণ করে এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ফারইস্ট নিটিংয়ের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো.
বিএসইসির জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির গত ছয় বছরে এর বাস্তব চিত্র পরীক্ষা করা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানির ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কমিটিতে রাখ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে কমিশনে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা
২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের দেওয়া আপত্তি বা বিরূপ মতামত বিশ্লেষণ করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানির চলমান উদ্বেগ সম্পর্কিত বাস্তব অনিশ্চয়তাগুলো নির্ধারণ করবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একত্রীকরণ বা উল্লেখযোগ্য অন্যান্য লেনদেন থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা কোনো অযৌক্তিক সুবিধা নিয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা। সেই সাথে ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করে দেখবে গঠিত কমিটি।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৪৫) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.০৭ টাকা।
সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৩০ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.২৯ টাকা বা ২৯০০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৪৪ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৩ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.৪১ টাকা বা ১৩৬৬.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১০.৪১ টাকা।
ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ঋণে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির মোট ২৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে, যা কোম্পানির পরিশোধিত মুলধনের ৯০ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ ২২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ টাকা। দীর্ঘ পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নতুন নামে লেনদেন শুরু করে। এর আগে কোম্পানির নাম ছিল আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৯টি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৯৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ৩০ জ ন বছর র একই সময় তদন ত কর তদন ত ক ল ইসল ম ব এসইস ল নদ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প কি সত্য বলছেন, তাঁর চিন্তা কি পশ্চাৎপদ
রাজনীতিবিদেরা সাধারণত পুরো সত্য বলেন না। যেটুকু নিজের স্বার্থে কাজে আসে, সেটুকুই বলেন। এই বিষয়ক একটি রূপক ইংরেজিভাষী অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত। সেটা হলো ‘গ্লাস হাফ ফুল অর হাফ এম্পটি’। অর্থাৎ গ্লাসে অর্ধেক পানি থাকলে কেউ বলেন ‘গ্লাস হাফ ফুল’ আর কেউ বলেন ‘গ্লাস হাফ এম্পটি’। অর্থাৎ একই জিনিস দুজন দুভাবে বলেন। কেউ বলেন গ্লাসটা অর্ধেক ভরা, কেউ বলেন গ্লাসটা অর্ধেক খালি।
বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি আছে সত্য। কিন্তু সেই ঘাটতি মূলত পণ্য বাণিজ্যে। সেবা বাণিজ্যে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। সেখানে তাকে ধরাছোঁয়ার মতো কেউ নেই।
সিএনএনের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত ২৯৩ বিলিয়ন বা ২৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এই উদ্বৃত্ত বেড়েছে ৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মুডিস অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ হলো সেবা ব্যবসা। এটাই মার্কিন অর্থনীতির গোপন সূত্র। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণে সেবা রপ্তানি করে। যেসব দেশে এই সেবা রপ্তানি করা হয়, তারা আবার জানে, যুক্তরাষ্ট্র বেকায়দায় পড়লে তারা এসব আমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে পারবে, যেমন তারা বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি থেকে এসব সেবা আমদানির ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ডের শর্ত দিতে পারে।
সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৯১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের তুলনায় এই ঘাটতি বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
ঘাটতি মানেই খারাপ নয়।