টাকার বিনিময়েও মিলল না সিট, শিশুর মৃত্যুর খবরে দালালকে পিটুনি
Published: 24th, March 2025 GMT
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারে শিশুটির জন্মের পর প্রয়োজন দেখা দেয় এনআইসিইউ বা নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, সেখানে সিট খালি নেই। এ অবস্থায় মামুন আহমদ নামে এক যুবক সিট পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শিশুর স্বজনদের সঙ্গে ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। কিছু টাকা অগ্রিম নেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও সিট দিতে পারেননি তিনি মামুন। একপর্যায়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় নবজাতক।
রোববার রাতে ওসমানী হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে। নবজাতকের মৃত্যুর পর দালালের খপ্পরে পড়ার বিষয়টি জানতে পেরে রোগীর স্বজনসহ হাসপাতালের দর্শনার্থীরা যুবক মামুনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
মামুন আহমদ সিলেট সদর উপজেলার শিবের বাজারের মেগারগাও গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালাল চক্রের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আজ সোমবার মামুনকে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় আদালতে প্রেরণ করেছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার পুরানগাঁও গ্রামের নাম আবুল কাশেম তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে নিয়ে গত শনিবার ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হন। গত রোববার বিকেলে তাহমিনা আক্তার সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
নবজাতকের পিতা আবুল কাশেম জানান, এনআইসিইউর প্রয়োজন পড়লে হাসপাতাল থেকে সিট নেই বলে জানানো হয়। তখন মামুন নামের এক যুবক হাসপাতালের কর্মচারি দাবি করে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। সে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সিট দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু দিতে পারেননি। কিছু টাকাও নেন। এ অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তার সন্তান মারা যায়। আগেও তাদের দুটি সন্তান সিজারে জন্ম হলেও তারা মারা গিয়েছে বলে জানান তাহমিনা দম্পতি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একইভাবে দালালের খপ্পরে পড়ে মারা যায় বিয়ানীবাজারের আলীনগরের ফরহাদ হোসেনের নবজাতক ছেলে।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই পলাশ জানিয়েছেন নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামুন আহমদকে লোকজন হাসপাতালে মারধর করে। তাকে উদ্ধার করে রাতে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনাটি তিনি অবগত নয় উল্লেখ করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যার অস্বীকার ঠেকাতে আগে বিচার দরকার
ব্যক্তির স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ।
সহুল আহমদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। গণহত্যা বা এ ধরনের অপরাধের ঘটনার সত্যতার অস্বীকার ঠেকাতে সবার আগে দরকার বিচার।
এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম ও লেখক সারোয়ার তুষার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাতের পঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—গণহত্যার পক্ষগুলো সব সময় জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ১৯৭১–এর পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে একাত্তরের ২৫ মার্চ সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই–সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন।’
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।