দক্ষিন কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক–সু–কে আজ সোমবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিশংসন বাতিল করা হয়েছে। হান ডাক–সু যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাণিজ্যযুদ্ধের’ সময়ে এশিয়া চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মনোনিবেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

টানা কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর আদালতের এ আদেশ হান ডাক–সু–কে অবিলম্বে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। গত ডিসেম্বরে সামরিক আইন জারির পরিপ্রেক্ষিতে পার্লামেন্টে অভিশংসিত হয়েছিলেন ইউন সুক ইওল।

প্রতিক্রিয়ায় হান ডাক–সু বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দেশের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এটা খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রাজনীতিতে চরম সংঘাত বন্ধ হওয়া উচিত।’ এ ছাড়া ‘বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত’ নেওয়ায় আদালতকে এবং নিজে বরখাস্ত থাকার সময় ‘কঠোর পরিশ্রম’ করায় মন্ত্রিসভার প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

টেলিভিশনে প্রচারিত এক মন্তব্যে হান ডাক–সু বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের সময় জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় সব প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা নিয়োজিত করব।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বিভিন্ন ধরণের পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকির সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য নিজেকে তৈরি করছে দেশটি।

ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী মাসে দেশটি আরও পাল্টাপাল্টি মার্কিন শুল্ক থেকে অব্যাহতির উপায় খুঁজছে। এ মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে এককভাবে দায়ী করেছিলেন।

ইউন সুক ইওলের সামরিক আইন জারির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সামরিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দেয়। সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তার অভিশংসন, পদত্যাগ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে দায়েরের মধ্য দিয়ে দেশটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দেয়।

আরও পড়ুনএবার দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

হান ডাক–সু দুই সপ্তাহের কম সময় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। সাংবিধানিক আদালতে আরও তিনজন বিচারপতি নিয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়ে তিনি বিরোধী নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ২৭ ডিসেম্বর তাঁকে অভিশংসিত ও বরখাস্ত করা হয়।

সাংবিধানিক আদালতে আজ পক্ষে সাত এবং বিপক্ষে একটি মতের ভিত্তিতে অভিশংসনপ্রক্রিয়া বাতিল হয়।

আটজন বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন বলেন, অভিশংসন প্রস্তাবটি বৈধ ছিল। কিন্তু হান ডাক–সু সংবিধান কিংবা সামরিক আইনসংক্রান্ত আইনটির ধারা লঙ্ঘন করেননি বলে তাঁকে অভিশংসিত করার মতো পর্যাপ্ত কারণ ছিল না। দুজন বিচারপতি সিদ্ধান্ত দেন যে হানের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের প্রস্তাবটি গোড়া থেকেই অকেজো ছিল। কেননা পার্লামেন্টের দুই–তৃতীয়াংশ সদস্য এটা পাস করেননি। আর একজন বিচারপতি তাঁর অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

আরও পড়ুনদক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলেন পার্লামেন্ট সদস্যরা১৪ ডিসেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভায় এলেন মহিলা লীগ নেত্রী, দিলেন বক্তব্যও

শনিবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভানেত্রী ফাতেমা জহুরা আক্তারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি উপস্থিত হয়ে বক্তৃতাও দেন। তবে পরিচয় দিয়েছেন জেলা উইমেন চেম্বারের সভাপতি হিসেবে। উপস্থিত কয়েকজন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূমকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এ সভায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। হাসনাত কাইয়ূম এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তিনি ফাতেমা জহুরার এ পরিচয়টি জানতেন না। এর ব্যাখ্যা ফাতেমা জহুরাকে দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

ফাতেমা জহুরা মাইক নিয়ে ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমাকে একজন আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী হিসেবে মহিলা আওয়ামী লীগের পদে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমি কখনই সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে বা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যাইনি। আমাকে সংগঠন থেকে অনেকবার বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধও জানিয়েছিলাম। আমি মূলত জেলা উইমেন চেম্বারের সভাপতির পরিচয়টিই সর্বত্র দিয়ে থাকি। এক সময় বাম রাজনীতি করতাম। এখনও সেই মানসিকতা পোষণ করি।’ 

ফাতেমা জহুরা একবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তখনও তিনি এফবিসিসিআই কর্মকর্তা হিসেবে গিয়েছেন বলে জবাব দেন।

শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে ছাত্র, সাংবাদিক ও সুধীজনদের সঙ্গে ‘দেশ বাঁচাতে প্রয়োজন সংস্কার, সমঝোতা ও নির্বাচন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধান আলোচক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম ছাড়াও বক্তব্য দেন বাজিতপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিমল চন্দ্র সরকার, ফতেমা জহুরা আক্তার, মঠখলা কলেজের শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, সংগঠনের বাজিতপুর শাখার সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক একেএম মেজবাহ উদ্দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ