রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) জুড়ে ধূসর পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুনি ও গোলাপি রঙের কাঞ্চন ফুল। একটি-দুটি নয়, শত শত গাছে ফুটে থাকায় তৈরি হয়েছে কাঞ্চনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট, হলের পুকুরপাড়, শহীদ মিনার, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনসহ সব জায়গায় কাঞ্চনের উপস্থিতি প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরো দৃষ্টিনন্দন। সৌন্দর্য্যবর্ধন ছাড়াও হাঁপানি, ক্ষত এবং পেটের পীড়ায় গাছটির বিভিন্ন অংশ বেশ উপকারী।
রক্ত কাঞ্চন, দেব কাঞ্চন এবং শ্বেত কাঞ্চনসহ বহুল প্রচলিত প্রজাতিগুলোর পাশাপাশি ৫ বছর আগে থেকেই ক্যাম্পাসে বিরল প্রজাতির অর্কিড কাঞ্চন গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরো ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে এ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ রাবি শিক্ষার্থীদের
রাবির গবেষণা: মাটি ছাড়াই উৎপাদন হবে সবুজ পশুখাদ্য
কৃষি অনুষদের এ অধ্যাপক ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথমে মাত্র একটি গাছ থেকে চারা তৈরির উদ্যোগ নেন। পরে তা বৃহৎ পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দেন।
অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটি কাঞ্চন গাছ আমাদের এক অফিস সহকারী শহর থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। সেখানে দুটি গাছ জন্ম নেয় এবং পরপর তিন বছর ফুল দেয়। এ গাছের ফুল এতই সুন্দর যে, যে-ই দেখত, তাকিয়ে থাকত।”
তিনি বলেন, “এ কাঞ্চনের নাম অর্কিড কাঞ্চন। এটি লিগুমিনোসি (Leguminosae) পরিবারের উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম বাউহিনিয়া ব্ল্যাকিয়ানা (Bauhinia blakeana)। এ গাছের উৎপত্তি চীনে। সাধারণত বসন্তকালে ফুল দেয় এবং ফুলগুলো মাসব্যাপী থাকে। ফুল আসার আগে এর পাতাগুলো বেশির ভাগ সময় ঝরে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথম নজরে আসার পর প্রশাসন ফুলটির সৌন্দর্য লক্ষ্য করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের অধীনে আমি ব্যক্তিগতভাবে বীজ সংগ্রহ করি এবং ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন স্যারের সহযোগিতায় পাঁচ শতাধিক চারা তৈরি করি। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয়। এ গাছে প্রচুর ফুল হয়, রয়েছে ঔষধি গুণও।”
অর্কিড কাঞ্চন বাংলাদেশে অভিযোজিত একটি নতুন উদ্ভিদ। গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার পর্যন্ত হয়। এর ফুলের প্রস্ফুটনকাল নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বিরল প্রজাতির রক্ত কাঞ্চন ফুলপ্রেমী সবার কাছে একটি পরিচিত নাম। দেব কাঞ্চন, শ্বেত কাঞ্চন ও রক্ত কাঞ্চন—এ ফুলের উল্লেখযোগ্য প্রজাতি। তবে কাঞ্চনের মধ্যে রক্ত কাঞ্চনই শীর্ষে স্থান পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তো বটেই, এ কাঞ্চনের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন দর্শনার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিদ আহমেদ বলেন, “ক্যাম্পাসে প্রায় প্রত্যেক ঋতুতেই কিছু না কিছু ফুল আমাদের মুগ্ধ করে। গ্রীষ্মে রক্ত কাঞ্চন ফুলের আকর্ষণীয় রঙ আর পাঁপড়ির নমনীয়তা অসম্ভব সুন্দর লাগে। ক্যাম্পাসে এসে রক্ত কাঞ্চন আভায় বিমোহিত হই।”
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী জানান, রোকেয়া হলের পাশের কাঞ্চনের বাগানটি অপূর্ব সুন্দর। এটি দেখলে সবার মনে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। রঙ আর রূপের অপূর্ব সমন্বয়ে বর্ণিল এ ফুল যেন প্রকৃতিকে সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে সড়কের ধারে সারি সারি অর্কিড কাঞ্চনের চারা রোপনের কাজ অব্যহত আছে। এপ্রিল থেকে মালিরা বীজ সংগ্রহ করেন এবং এক মাসের মধ্যেই সেগুলো বপন ও পরিচর্যা শুরু করেন। বর্ষাকালে গাছগুলো নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করলে দুই বছরের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে রঙ, শোভা ও সৌন্দর্যের কারণে রক্ত কাঞ্চনই সৌন্দর্য্যপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
বাগানের মালি আলতাফ হোসেন জানান, মার্চের মাঝামাঝি বা শেষে কাঞ্চনের বীজ সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগে রোপণ করা হয়। পরে এপ্রিল-মে মাসের দিকে চারা উঠিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ লাগানো হয়েছে।
এ গাছ লাগানোর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, “সারা দেশে অর্কিড কাঞ্চনের এত বড় সংগ্রহ আর কোথাও নেই। এগ্রিকালচার বিল্ডিংয়ের সামনে একসময় রক্ত কাঞ্চনের একটি গাছ ছিল। গাছটিতে মার্চের শুরুর দিকে এত ফুল ফুটত যে, সেখানে কোনো পাতা থাকত না। তখনই মাথায় আসে ক্যাম্পাসজুড়ে গাছটি ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা।”
তিনি বলেন, “অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের সহায়তায় রোকেয়া হলের সামনের পুকুরপাড়সহ প্রশাসন ভবনের সামনে ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গাছটি রোপণ করা হয়, যা অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে বিজিবির শ্রদ্ধা
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদশ (বিজিবি) এর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে বুড়িঘাটে বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্বাধীনতার এই বীর সেনানীর সমাধীতে বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাঙামাটির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। এরপর রাঙামাটি সদর সেক্টরের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।
এসময় বিজিবির কাপ্তাই জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাওসার মেহেদী, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের ছিন্নভিন্ন দেহ সমাহিত করা ও শনাক্তকারী দয়াল কৃঞ্চ চাকমা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা ও পরিচালক ইয়াসিন রানা সোহেলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে সশস্ত্র সালাম প্রদান করে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় জাতির এই সূর্য সন্তানকে। এছাড়া, বীরশ্রেষ্ঠের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পরে দয়াল কৃঞ্চ চাকমাকে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন বিজিবি রাঙামাটির সেক্টর কমান্ডার।
এদিকে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাঙামাটিতে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।
ঢাকা/শংকর হোড়/ইভা