আট মাসে বিদেশি ঋণছাড় ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
Published: 24th, March 2025 GMT
বিদেশি ঋণছাড় ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই–ফেব্রুয়ারি) দেশে মোট ৪১৩ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এই সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার।
আজ সোমবার দুপুরে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–ফেব্রুয়ারি মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। অবশ্য অর্থবছরের শুরুর কয়েক মাস বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ের চেয়ে পরিশোধ বেশি হয়েছিল।
গত আট মাসে বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে। এ সময়ে এই সংস্থা দিয়েছে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ৯৬ কোটি ডলার ও জাপান ৭৩ কোটি ডলার দিয়েছে।
ইআরডির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তুলনামূলক বেশি বিদেশি ঋণ ছাড় হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
অন্যদিকে আলোচ্য আট মাসে সরকারকে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৬৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে আসল পরিশোধ হয়েছে ১৬৯ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ৯৫ কোটি ডলার শোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে একই সময়ে ২০৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬১ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ঋণসহায়তা বাবদ খুব বেশি প্রতিশ্রুতি মিলছে না। গত জুলাই–ফেব্রুয়ারি সময়ে ২৩৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। গতবার একই সময়ে ৭২০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি নেমে এসেছে এক–তৃতীয়াংশে। চলতি অর্থবছরে চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩৩৬ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গত এক যুগের বিদেশি ঋণ পরিশোধ তিন গুণ হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর শ ধ করত আট ম স
এছাড়াও পড়ুন:
ছোট হচ্ছে আগামী বাজেটের আকার
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের চেয়েও ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটর প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম। এর আগে মাত্র একবার বাজেটের আকার আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে ধরা হয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৩ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। সভা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এটি হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা। এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ঘাটতি ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি)’র আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
এখন অর্থবছরের নয় মাস যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়। নয় মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার ৭০ ভাগের ওপরে ওঠানো সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের নাজুক অবস্থা এবং বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়া বাজেট ছোট করার একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে আট লাখ কোটি টাকার ঘরে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী মে মাসে বাজেট আকার চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও ছিল মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছর ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ। এর আগে আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬ শতাংশ। মূলত আগামী বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৩ লাখ ১৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৩.৬২ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে (এনবিআর) সরকারের আয়ের লক্ষ্য হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের।
জানা গেছে, এনবিআর চাচ্ছে ৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিতে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য চাপ দিয়ে রেখেছে।
এদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা