দিনাজপুরের শিশু ধর্ষণে জামিন পাওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সেই আসামি গ্রেপ্তার
Published: 24th, March 2025 GMT
দিনাজপুরের পাঁচ বছরের সেই শিশু ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলামকে আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় সাইফুল ইসলামের আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৩। সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের তথ্যের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১৩ দিনাজপুর কোম্পানি কমান্ডার মহিদুল ইসলাম।
সাড়ে আট বছর আগে জনন অঙ্গ কেটে দিনাজপুরের সেই শিশুটিকে ধর্ষণ করেন সাইফুল ইসলাম। এর ফলে শিশুটির মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিকবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনো প্রস্রাব ঝরে তার। শিশুটির বয়স এখন ১৩ বছর।
এর আগে ৮ বছর ৪ মাস কারাদণ্ড ভোগের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন আসামি সাইফুল ইসলাম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় নারী ও শিশু অধিকারকর্মীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতির মধ্য রাষ্ট্রপক্ষ বাদী হয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করে। ৫ মার্চ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আসামি সাইফুল ইসলামের হাইকোর্ট থেকে পাওয়া জামিন আদেশের ওপর আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। সেই সঙ্গে আসামিকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল প্রথম আলোতে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় ‘দিনাজপুরে শিশু ধর্ষণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন স্থগিত, আসামির এলাকা ছাড়ার খবর’ শিরোনামে।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে?’—ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবার আক্ষেপ শিরোনামে আসামির জামিন হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো।
র্যাব-১৩–এর কোম্পানি কমান্ডার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোর সংবাদটি দেখার পর র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতায় র্যাব-১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। দিনাজপুর পুলিশের কাছে আসামিকে হস্তান্তর করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামি সাইফুল ইসলাম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করছিলেন।
২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর এক প্রতিবেশীর একই বয়সী মেয়ের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। পরদিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটির বাবা ওই বছর ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুল ইসলামের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঘটনার ৮ বছর ৪ মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম। দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাইফুল ইসলামের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
আসামিকে গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশুটির বাবা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, র্যাব তৎপর হয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করায় তিনি অনেক খুশি। তাঁর খুব ভালো লাগছে। আসামি জামিনে মুক্ত থাকায় তাঁরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন; সেটা দূর হলো বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি চাই যাবজ্জীবনের যে রায় দেওয়া আছে, সেটি যেন কার্যকর হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প রথম আল
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী ঐতিহ্যে চুনারুঘাটের বৈশাখী মেলা, কৃষিপণ্যের বাহারে মুখর পীরের বাজার
শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার পীরের বাজারে শুরু হয়েছে বৃহৎ বৈশাখী মেলা, স্থানীয়ভাবে যা 'বান্নি' নামে পরিচিত। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলাটি চুনারুঘাটসহ সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয় এবং মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে কৃষিপণ্যের বিশাল সমাহার। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে লাঙল, জোয়াল, দা, কাঁচি, মই, মাছ ধরার সরঞ্জামসহ অসংখ্য কৃষি উপকরণ। মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হস্তশিল্প ও মনিহারি পণ্যেরও ছিলো চোখধাঁধানো উপস্থিতি।
স্থানীয় দোকানিরা জানান, প্রতিবছর বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু হবিগঞ্জ নয়, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এমনকি উত্তরবঙ্গ থেকেও বিক্রেতারা অংশ নিয়েছেন এ ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।
চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজিম উদ্দিন সামছু বলেন, এই মেলা মূলত কৃষকদের জন্য। এখান থেকে প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতেন তারা।
তবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে কৃষিকাজে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জামের প্রয়োজন কমে যাওয়ায় মেলার জৌলুস কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন অনেকে। সেইসঙ্গে আশপাশে ঘরবাড়ি গড়ে ওঠায় মেলার পরিসরও সীমিত হয়েছে।
স্থানীয় ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, মেলায় অংশ নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন। মেলা চলাকালীন নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ বাহিনী, নিশ্চিত করেন চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, শত বছর আগে এই মেলা শুরু হয়েছিল ছোট পরিসরে পূজা আয়োজনের মাধ্যমে। পরে তা বৃহৎ মেলায় রূপ নেয়।
এখনও অনেকেই শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে এই মেলায় আসেন, স্মৃতিচারণ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মেলায় পরিবেশিত হচ্ছে গ্রামবাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
চুনারুঘাটের এই বৈশাখী মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।