আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি শহীদদের স্বজনদের
Published: 24th, March 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমে খুনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময়সহ বিগত ১৫-১৬ বছরে দলটি যে গুম-খুন-হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার বিচার করতে হবে। এরপরে দেশে সংস্কার করতে হবে। আর সংস্কার শেষ করার পরেই হবে নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন হলে, আর আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে, তা হবে জুলাই-২৪-এর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। জুলাই-২৪-এর গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনের আয়োজক ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’।
মানববন্ধনে শহীদ শাহরিয়ার হাসানের বাবা আবুল হাসান বলেন, শহীদদের হত্যার বিচার হচ্ছে না। বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। বিচারের নামে ঘুম পাড়ানোর গান শোনানো হচ্ছে। আট মাস পরও সন্তান হত্যার বিচারের জন্য কেন রাস্তায় দাঁড়াতে হবে? দেশে যদি খুনি হাসিনা থাকত, ২০৩০ সালের আগে কেউ নির্বাচনের কথা ভাবতে পারত না। অথচ আজ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঐক্য হবে, সংস্কার হবে, নির্বাচন হবে, কিন্তু আগে প্রত্যেকটা হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলার জমিনে দৃশ্যমান হতে হবে।
শহীদ সায়েমের মা শিউলী আক্তার বলেন, শহীদ সন্তানদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। শহীদদের রক্তের সঙ্গে কোনো বেইমানি করা যাবে না। কী করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে এ দেশে আনার জন্য বলা হয়? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। এখনো সন্তান হত্যার বিচার হচ্ছে না। কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অথচ শত শত ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কীভাবে এখন নির্বাচনের কথা বলা হয়? আগে বিচার করতে হবে। পরে সংস্কার করে নির্বাচন।
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, একটা সন্তান হত্যারও বিচার এ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের একজনেরও যদি ফাঁসি হতো, তাহলে তাঁরা এই সরকারকে নিজেদের সরকার ভাবতে পারতেন। তাঁদের সন্তানেরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। দরকার হলে শহীদ পরিবারগুলো সন্তান হত্যার বিচারের জন্য আবার রাস্তায় নামবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।
সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেন জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে আপনাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আপনারা কোনো সম্মান আমাদের করেননি।’
গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ, আমাদের ছেলেরা দেশের জন্য যে শহীদ হয়েছে, তারা কী অন্যায় করেছে? নতুন বাংলাদেশ যে গড়তে যাচ্ছেন, নতুন বাংলাদেশ তো গঠন হচ্ছে না। পুরাতন বাংলাদেশের চাইতে আরও খারাপ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।’
মানববন্ধনে শহীদদের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান। ট্রাইব্যুনালের ফটকে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর জ ল ই ২৪ র জন য আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীকে লাথি মারার অভিযোগ, অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিবন্ধীকে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের নাম সরকার নূরে আলম (মুক্তা)। তিনি উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলায় এক শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি। ভুক্তভোগী মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম মোতালেব মিয়া (৫০)। তিনি উপজেলার চতলবাইদ মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে গত বছরের ২ মার্চ প্রতিবেশী এক নারীকে মারধর করেন চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই ঘটনায় করা মামলায় তিনি মাসখানেক জেলহাজতে ছিলেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলছিল। বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মিয়া একটি লাঠি হাতে পরিষদ চত্বরে যান। তিনি মোশারফ নামের এক ব্যক্তিকে পেটাবেন বলে খোঁজ করছিলেন। এ সময় দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ মোতালেবকে সরিয়ে দেন। পরে বেলা দুইটার দিকে মোতালেব মিয়া একইভাবে পরিষদ চত্বরে গিয়ে বকাঝকা করতে থাকেন। চেয়ারম্যান নূরে আলম তাঁকে পরিষদ চত্বর ত্যাগ করতে বলেন। তখন চেয়ারম্যানকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন মোতালেব। এ সময় চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে মোতালেবকে লাথি মারেন। গতকাল সোমবার দুপুরে চেয়ারম্যানের লাথি মারার পাঁচ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রাম পুলিশ প্রহর লাল চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ওই লোককে পরিষদ চত্বর ত্যাগ করতে বললে তিনি হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে লাথি দেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানও ক্ষিপ্ত হয়ে লাথি মেরেছেন। লোকটি মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি নিজ এলাকায়ও অনেকের সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে পরিষদ চত্বরে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এই কর্মসূচিতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘এক বছর আগে একজন নারীকে পিটিয়েছেন। এবার একজন বয়স্ক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়েছেন। টাঙ্গাইল সদর থানায় চেয়ারম্যানের নামে খুনের মামলাও রয়েছে। এ ধরনের নষ্ট চেয়ারম্যান আমাদের দরকার নেই। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’
বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকটি যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা আমি আগে জানতাম না। জানলে আমি কোনোভাবেই এমন আচরণ করতাম না। এ বিষয়ে আমি খুবই লজ্জিত।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে এরপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’