‘সিগারেটে মূল্যস্তর তিনটি হলে রাজস্ব বাড়বে, ব্যবহার কমবে’
Published: 24th, March 2025 GMT
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করার দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)।
সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করে না। নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী সিগারেট ব্যবহারে বিশেষভাবে নিরুত্সাহিত হবে।
সোমবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্য সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর ও মূল্য বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন-এর সদস্য ড.
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আকতার মালা বলেন, “সরকারের উচিত হবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবধরনের তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয় যে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্য বৃদ্ধির যেসব দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে- নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রামগুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একই সাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য প্রদান করেন। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।
ঢাকা/হাসান/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ও ম ল য প রস ত ব ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছোট হচ্ছে আগামী বাজেটের আকার
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের চেয়েও ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটর প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম। এর আগে মাত্র একবার বাজেটের আকার আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে ধরা হয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৩ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। সভা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এটি হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা। এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ঘাটতি ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি)’র আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
এখন অর্থবছরের নয় মাস যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়। নয় মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার ৭০ ভাগের ওপরে ওঠানো সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের নাজুক অবস্থা এবং বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়া বাজেট ছোট করার একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে আট লাখ কোটি টাকার ঘরে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী মে মাসে বাজেট আকার চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও ছিল মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছর ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ। এর আগে আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬ শতাংশ। মূলত আগামী বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৩ লাখ ১৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৩.৬২ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে (এনবিআর) সরকারের আয়ের লক্ষ্য হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের।
জানা গেছে, এনবিআর চাচ্ছে ৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিতে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য চাপ দিয়ে রেখেছে।
এদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা