Risingbd:
2025-03-25@20:32:02 GMT

জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

Published: 24th, March 2025 GMT

জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম ফরজ বিধান এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম আর্থিক উৎস। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে জাকাতের ভূমিকা বহুমুখী। এটি শুধু আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাকাত এমন একটি বিধান যা পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মেও ছিল। যেমন ঈসা (আ.

) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৩১)

কোরআন ও হাদিসে জাকাত 

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ পাশাপাশি আনা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং জাকাত দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)

আরো পড়ুন:

রমজানে নেক আমল ও সমাজসংস্কার 

রমজানের শেষ দশকে যেসব আমল গুরুত্বপূর্ণ

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সদকা তথা জাকাত হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪২২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে জাকাত দেয়, তার সম্পদ ক্ষয় হয় না, বরং তা বৃদ্ধি পায়।’ (সহিহ মুসলিম)

যাদের ওপর জাকাত ফরজ

ইসলামী শরিয়ত কেবল সামর্থবান মানুষের ওপর জাকাত ফরজ করেছে। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্তারোপ করেছে। তা হলো :

মুসলিম হওয়া : জাকাত শুধু মুসলমানের ওপর ফরজ। 
স্বাধীন হওয়া : দাস বা পরাধীন ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া : নিসাব হলো শরীয়ত নির্ধারিত সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ। যারা পূর্ণ বছর এই পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবে কেবল তারাই জাকাত দেবে।
সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকা : কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, সাধারণত এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত আদায় করতে হয়।
ঋণমুক্ত হওয়া : ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হয়। (দুররুল মুখতার : ৩/১৮২; হিদায়া, জাকাত অধ্যায়)

জাকাতের নিসাব

নিসাব হলো সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ, যার ওপর জাকাত ফরজ হয়। কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ (৮৭.৪৮ গ্রাম) এবং সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা থাকে তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বর্ণের হিসাব তখনই প্রযোজ্য হবে যখন স্বর্ণ ছাড়া রূপা, নগদ অর্থ অথবা অন্য কোনো সম্পদ থাকবে না। যদি স্বর্ণের সঙ্গে রূপা বা নগদ অর্থ থাকে তবে সে ক্ষেত্রে রূপার হিসাবে জাকাত প্রদান করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮০; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮০)

জাকাত কখন দিতে হবে

জাকাত বছরের যে কোনো সময় দেওয়া যায়। তবে রমজান মাসে যেহেতু আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন তাই আলেমরা রমজানে জাকাত দেওয়া উত্তম বলেন। আশা করা যায়, কেউ রমজানে জাকাত দিলে আল্লাহ কমপক্ষে ৭০টি ফরজ দানের সাওয়াব দেবেন। এছাড়াও রমজান থেকে রমজান হিসাব রাখাও ব্যক্তির জন্য সহজ হবে।

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে জাকাত প্রদানের তাওফিক দিন। আমিন।

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন র ওপর জ ক ত ফরজ স বর ণ পর ম ণ আল ল হ ইসল ম রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কৃতির ভুবন আলোকিত করে সন্‌জীদা খাতুনের বিদায়

আজীবন দেশের সংস্কৃতির ভুবন আলোকিত করার গুরুদায়িত্ব পালন করে বিদায় নিলেন সন্‌জীদা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার ৯২ বছর পূর্ণ করার কিছু আগে প্রয়াত হলেন দেশের এই অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আগামী ৪ এপ্রিল তিনি ৯৩ বছরে পদার্পণ করতেন। জন্মদিনের পরিবর্তে সেদিনে হবে তাঁর স্মরণসভা।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ৩টা ১০ মিনিটে হৃৎস্পন্দন থেমে যায় সন্‌জীদা খাতুনের (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ ও পুত্রবধূ লাইসা আহমদ লিসা জানিয়েছেন, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (হার্ট অ্যাটাক) হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি সুস্থ ছিলেন না। তাঁর ছিল কিডনির জটিল রোগ। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯ মার্চ তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর নেওয়া হয় আইসিইউতে। অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি।

সন্‌জীদা খাতুনের বড় মেয়ে অপালা ফরহাদ নভেদ আগেই প্রয়াত। ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ আর মেয়ে রুচিরা তাবাসসুম নভেদসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন বহু গুণের অধিকারী অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা এই মানুষটি। তাঁর ছেলেমেয়েরা জানিয়েছেন, মরদেহ রাতে হিমঘরে রাখা হবে।

সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আনা হবে তাঁর হাতে গড়া দেশের অগ্রগণ্য সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে। সন্‌জীদা খাতুনের অনেক নাতি–নাতনি ও ঘনিষ্ঠ বহু আত্মীয় বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁরা শেষবিদায় জানাতে আসবেন। সে কারণে দাফনের দিনক্ষণ পরে ঠিক করা হবে। ৪ এপ্রিল সন্‌জীদা খাতুনের জন্মদিনে ছায়ানটে স্মরণসভা করার পরিকল্পনা করা হলেও সময় এখনো ঠিক হয়নি।

সন্‌জীদা খাতুনের কীর্তির ধারা বিচিত্র। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গবেষক, শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, সংগঠক ও সক্রিয় সাংস্কৃতিক নেত্রী। ছিলেন ছায়ানট ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি। ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার প্রতিষ্ঠাতা। জনসাধারণের সাংস্কৃতিক বোধের উন্নয়ন এবং মুক্ত–উদার মানবিক সমাজ নির্মাণের অবিরাম প্রচেষ্টাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরে দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজন ছাড়াও তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধরা শোকার্ত চিত্তে স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যান। অনেকেই ছিলেন অশ্রুসিক্ত।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক হাসপাতালে প্রথম আলোকে বললেন, তিনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন এবং জীবনকালটা মানুষের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন। জনমানসে সংগীত, শিল্প, সাহিত্যের বোধ সৃষ্টি এবং এর সঙ্গে সামাজিক–সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার বোধ সঞ্চার করে গেছেন। বিপুলভাবে তিনি বাঙালির জীবন সমৃদ্ধ করে তোলার কাজ করেছেন। তাঁর মতো দ্বিতীয় কেউ নেই।

রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি ও শিল্পী বুলবুল ইসলাম বলেন, দেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রসার ও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে ওয়াহিদুল হক, জামিল চৌধুরী ও সন্‌জীদা খাতুন—এই তিনজনের ভূমিকা পথিকৃতের মতো। তাঁরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ সুগম করেছেন। দুজন আগেই প্রয়াত। এখন তৃতীয়জনও চলে গেলেন। নিজেকে অভিভাবকহীন মনে হচ্ছে।

ছায়ানটের তবলার শিক্ষক এনামুল হক ওমর বললেন, যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি সারা দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের সংগঠিত করেছেন, ছায়ানটকে পরিচালনা করেছেন, তার তুলনা হয় না। তাঁর প্রয়াণ জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।

সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট, উদীচী, চারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তাঁর বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। সন্‌জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই এতে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতায় সংগঠিত করেন বাংলাদেশের শিল্পীদের। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সন্‌জীদা খাতুন ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

সন্‌জীদা খাতুনের প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি দীক্ষা নেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতির। প্রথমে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন প্রখ্যাত হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর তালিম নেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের কাছ থেকে।

আইয়ুব খানের কঠোর শাসনকালে নানা বাধা অগ্রাহ্য করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনে তিনি ও সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের যাত্রা শুরু। ১৯৬৭ সালে তাঁরা রমনার বটমূলে প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে আয়োজন করে প্রভাতি গানের আসর। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠান থেকেই প্রাণিত হয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন এখন দেশজুড়ে বিপুল এক অসাম্প্রদায়িক উৎসব। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা ছায়ানটের এই প্রভাতি গানের আসরে ২০০১ সালে ভয়াবহ বোমা হামলা চালালেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি।

এসব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরে সন্‌জীদা খাতুনের গবেষণা ও রচনার কাজও কম নয়। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টির অধিক। রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, নজরুল মানস ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

সন্‌জীদা খাতুন দেশে একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া সম্মানিত হয়েছেন ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দেশিকোত্তম পুরস্কার এবং কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রবীন্দ্র–তত্ত্বাচার্য উপাধিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ