কমিশনের প্রস্তাব গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে
Published: 24th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ সম্প্রতি (১২ মার্চ, ২০২৫) প্রথম আলোয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা কেবল স্বাভাবিকই নয়, কাম্যও বটে। তবে নিবন্ধে উল্লিখিত কোন কোন যুক্তি কমিশনের প্রস্তাবের ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যা স্পষ্ট করা প্রয়োজন।
নিবন্ধটিতে দাবি করা হয়েছে, কমিশনের প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দুর্বল করবে এবং রাষ্ট্রপতিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করবে। বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতিকে যেসব ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে (৩.
তবে এই দাবি সঠিক নয়। সংস্কার প্রস্তাবের ৩.৩.১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করবেন।’ ৩.৩.২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ ভেঙে গেলে, রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ করবেন।’
বাস্তবে এসব নিয়োগপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে না। কেননা সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারকদের নিয়োগ একটি স্বাধীন বিচারিক নিয়োগ কমিশন দ্বারা পরিচালিত হবে এবং প্রধান বিচারপতি সর্বদা আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হবেন (ধারা ৫ ও ৯, বিচার বিভাগসম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাব)।
এ ছাড়া সংবিধানের ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বরাবরই মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করে থাকেন। সুতরাং এখানে নতুন কিছু সংযোজন করা হয়নি।
■ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ভূমিকা পালন করবে না। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের দ্বারা প্রয়োগ হবে না। ■ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এটি কম গণতান্ত্রিক নয়, বরং অধিকতর গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো সব সময় এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। ■ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদের প্রধান কাজ হলো সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এ ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হলো ‘অনাস্থা ভোট’, যা পরবর্তী নির্বাচনের আগেই একটি ব্যর্থ সরকারকে অপসারণের সুযোগ দেয়। ■ প্রধানমন্ত্রী ‘কয়েক কোটি ভোটারের সমর্থনে নির্বাচিত’ এবং তাই তাঁর রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকা উচিত—এই যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী মূলত একজন সংসদ সদস্য, যিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পান।অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ এবং উপদেষ্টা পরিষদ গঠনপ্রক্রিয়াসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে (৫.১-৫.৪)।
অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রপতির ভূমিকা কেবলই আনুষ্ঠানিক; নিয়োগের বিষয়ে তার কোনো প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে না। তাই রাষ্ট্রপতিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, এই দাবি ঠিক নয়।
উপরন্তু কমিশনের সুপারিশে স্পষ্টই বলা হয়েছে, ‘কতিপয় নির্দিষ্ট কার্যাবলি ছাড়া অন্য সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করবেন (১.২)।’ এর ফলে প্রধানমন্ত্রী সর্বদা সরকারের কার্যক্রমের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন।
২.নিবন্ধটিতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) গঠনপ্রক্রিয়া যেভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে ‘ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তে অধিকতর ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে’। দাবি করা হয়েছে, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের নয়জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই বিরোধী দল থেকে আসবে।
কিন্তু এই তথ্য সঠিক নয়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের গঠন হবে: তিনজন সরকারি দল থেকে, তিনজন বিরোধী দল থেকে এবং তিনজন নিরপেক্ষ সদস্য—রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং এমন একজন সংসদ সদস্য, যিনি সরকার বা প্রধান বিরোধী দলের অন্তর্ভুক্ত নন (২.১)।
এই ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো নিশ্চিত করবে যে কোনো একক গোষ্ঠী পুরো কাউন্সিলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদের নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন, যা ‘প্রধানমন্ত্রীকে সব দিক থেকে “অকার্যকর” করে রাখার একটা প্রচেষ্টা’।
ধারণাটি সঠিক নয়। বস্তুত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ভূমিকা পালন করবে না। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের দ্বারা প্রয়োগ হবে না। বরং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব হবে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনা করা।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের প্রতিনিধিদের এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এটি কম গণতান্ত্রিক নয়, বরং অধিকতর গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো সব সময় এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কিন্তু ঠিক এ কারণেই জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রয়োজন; নিয়োগপ্রক্রিয়া ন্যায়সংগত রাখা এবং তা যেন কোনো একক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে না থাকে, সেটা নিশ্চিত করা।
৩.সংবিধান সংস্কার কমিশনের দেওয়া ৭০ অনুচ্ছেদের প্রস্তাবিত সুপারিশের ফলে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে দলীয় সংসদ সদস্যের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। ড. নিজাম উদ্দিন আহমদের নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, এটি ‘স্থিতিশীল সরকার গঠনের পরিপন্থী’ এবং ‘হর্সট্রেডিং’-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এই যুক্তি নতুন নয়। গত কয়েক দশকে যাঁরা ৭০ অনুচ্ছেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরা এমনটিই বলে আসছেন। তবে এই যুক্তি ত্রুটিপূর্ণ।
একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদের প্রধান কাজ হলো সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এ ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হলো ‘অনাস্থা ভোট’, যা পরবর্তী নির্বাচনের আগেই একটি ব্যর্থ সরকারকে অপসারণের সুযোগ দেয়।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ‘অনাস্থা ভোট’ গণতন্ত্রকে দুর্বল করে না, বরং শক্তিশালী করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেমস ক্যালাহান মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হন। এর ফলে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং মার্গারেট থ্যাচারের দল জয়ী হয়।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে অজনপ্রিয় বা অদক্ষ সরকার পরিবর্তনের বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। অনাস্থা প্রস্তাবের অভাবে, একবার সরকার গঠিত হলে, তারা পূর্ণ মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রের কার্যকলাপের ওপর ‘অবাতিলযোগ্য ইজারা’ পায়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল দাবি, এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা। বর্তমান রূপে ৭০ অনুচ্ছেদ বজায় রেখে এটি সম্ভব নয়। ফলে নির্বাহী বিভাগের গণতান্ত্রিক জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক সুরক্ষাব্যবস্থা, যা স্থিতিশীলতার জন্য কোনো হুমকি নয়। যদি সংসদ সদস্যরা সর্বদা তাঁদের দলকে সমর্থন করতে বাধ্য হন, তবে সংসদ সরকারের ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ফলে অযোগ্য নেতাদের অপসারণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
৪.অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদের নিবন্ধে আরও দাবি করা হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন মাত্র ৫৮১ জনের ভোটে’, ফলে রাষ্ট্রপতিকে ‘কয়েক কোটি ভোটারের সমর্থনে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান’ করা যুক্তিসংগত নয়। আগেই বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে এমন কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি যা প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বহীন করে ফেলে।
এ ছাড়া কমিশনের প্রস্তাবে কোথাও বলা হয়নি যে রাষ্ট্রপতি শুধু ৫৮১ জনের ভোটে নির্বাচিত হবেন। বরং প্রস্তাব করা হয়েছে, সংসদ সদস্যের পাশাপাশি, প্রতিটি জেলার নির্বাচিত স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ (৬.৩.১) এবং প্রতিটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠিত ‘সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল’(৬.৩.২) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সমন্বয় কাউন্সিলের সদস্য মিলে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের মধ্যে যাঁকে সর্বোচ্চ ভোট দেবে, তিনি একটি ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য হবেন (৩.২.২)। অতএব, যদিও প্রতিটি জেলা সমন্বয় কাউন্সিলের এবং প্রতিটি সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিলের একটি করে ভোট থাকবে, তথাপি তা একাধিক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ‘কয়েক কোটি ভোটারের সমর্থনে নির্বাচিত’ এবং তাঁর রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকা উচিত—এই যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী মূলত একজন সংসদ সদস্য, যিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পান।
অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকায় মাত্র কয়েক হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতে পারেন, যেখানে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সারা দেশের জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন, যা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।
৫.শেষত, নিবন্ধটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো দেশকে আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ মডেলের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই আশঙ্কা ভিত্তিহীন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্থানীয় প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা মানে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং, এটি নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে আরও অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল করবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার ধারণাটিকে ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ব্যবস্থার সমতুল্য বলা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এ ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত পরিসরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতার বৈধতা বৃদ্ধি করবে।
● ইমরান সিদ্দিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব গণত ন ত র ক র ষ ট রপত ক র ষ ট রপত র প রস ত ব র ব যবস থ য় গণতন ত র অন চ ছ দ এই য ক ত সদস য র ব চ রপত ন বন ধ অন স থ পর চ ল ত ব কর র ওপর করব ন সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
রাফিনিয়াকে কথা কম বলতে বললেন ওতামেন্দি
ম্যাচের আগে অনেকটা আগুন জ্বালিয়েছেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। আর্জেন্টিনাকে মাঠ ও মাঠের বাইরে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন এই বার্সেলোনা তারকা। এমন কথা বললে কী আর পরিস্থিতি শান্ত থাকে! থাকেওনি।
ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে ৪-১ ব্যবধানে হারানোর ম্যাচে রাফিনিয়াকে কথা কম বলতে বলেছেন নিকোলাস ওতামেন্দি। পুরো ম্যাচে রাফিনিয়াকে শুনতে হয়েছে দুয়োধ্বনি।
মারাকানায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি এমনিতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রেখেছিল। সেদিন আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত বাজার সময় ব্রাজিলের সমর্থকেরা দুয়ো দিতে শুরু করলে দাঙ্গা বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রাজিলের পুলিশ আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ওপর লাঠিপেটা করে। আর্জেন্টাইনরাও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গ্যালারির চেয়ার ছুড়ে মারেন। নজিরবিহীন এ সংঘাতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছিলেন।
মারাকানায় মার খাওয়ায় তেতে ছিলেন আর্জেন্টাইনরা। ওই ঘটনার পর এটিই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের এটাই প্রথম ম্যাচ। সঙ্গে ম্যাচের আগে রাফিনায়ার এমন কথা। রাগ ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলার জন্য আর্জেন্টাইনরা আসলে সুযোগ খুঁজছিলেন। সেটিই আসে ম্যাচের ৩৮ মিনিটে রাফিনিয়া তালিয়াফিকোকে ফাউল করলে। ওতামেন্দি, পারদেস, রদ্রিগো ডি পলরা রাফিনিয়ার দিকে তেড়ে যান। তখনই রাফিনিয়াকে ওতামেন্দি বলেছেন, ‘কথা কম বলো’।
রাফিনিয়ার মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও। ম্যাচ শেষে টিওয়াইসি স্পোর্টস রাফিনায়ার মন্তব্য নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা রাফিনিয়াকে নিম্নমানের ভীত ফুটবলার বলেছেন। পুরো ম্যাচেও আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনেছেন এই ব্রাজিলিয়ান।