৩২ ওমরাহ যাত্রীর ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি পরিচালক
Published: 24th, March 2025 GMT
বরগুনা ও পিরোজপুরের ৩২ জন ওমরাহ যাত্রীর প্রায় ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন একটি হজ এজেন্সির পরিচালক। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই পরিচালক ওমরাহ যাত্রীদের হাত খরচ ও বিমানের টিকিটের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এই ঘটনায় এজেন্সির পরিচালকের বিরুদ্ধে পাথরঘাটা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম এম এ জাকারিয়া। তিনি দারুস-সুন্নাহ হজ কাফেলা এজেন্সির পরিচালক। তিনি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ওলামাগঞ্জ এলাকার মাওলানা রুহুল আমিনের ছেলে।
আরো পড়ুন:
ফতুল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৩
হাসপাতালে টয়লেটের পাইপে নবজাতক
ভুক্তভোগীরা জানান, বরগুনা সদরের মিজান টাওয়ারে দারুস-সুন্নাহ হজ কাফেলা ছিল। এই এজেন্সির মাধ্যমে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বরগুনা ও পিরোজপুরের ৩২ জন ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ১৪ দিনের প্যাকেজ বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে যান তারা। সেখানে নিজেদের হাত খরচের জন্য বাংলাদেশি টাকাকে সৌদি রিয়ালে রূপান্তরিত করতে ৩২ জন ওমরাহ যাত্রী ২৮ লাখ টাকা এজেন্সি পরিচালক এম এ জাকারিয়ার হাতে দেন।
সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর রিয়াল না দিয়ে প্রতারণা করেন জাকারিয়া। ঘটনার পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর পাথরঘাটা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজেন্সি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। তার অভিযোগ, শুধু রিয়েল নয়, এজেন্সির পরিচালক প্রতারণা করেছেন তাদের ফিরতি টিকিট নিয়েও। তিনি যাত্রীর ফিরতি টিকেটের বিমান ভাড়ার ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী পাথরঘাটা পৌরসভার বাসিন্দা তারিকুল ইসলাম বলেন, “সৌদি আরব গিয়ে প্রয়োজনীয় খরচ ও স্ত্রীর জন্য গহনা কেনার জন্য ইসলামী ব্যাংক পাথরঘাটা এজেন্ট শাখা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরগুনা ইসলামী ব্যাংকের জাকারিয়ার একাউন্টে পাঠাই। কথা ছিল, এ টাকার পরিবর্তে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে রিয়াল দেবেন তিনি আমাদের। মক্কায় গিয়ে রিয়াল না দিয়ে জাকারিয়া জানান, মদিনায় গিয়ে রিয়াল দেবেন।”
তিনি আরো বলেন, “মদিনায় গিয়ে রিয়াল চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকের ঝামেলার কারণে টাকা পাস হচ্ছে না। দেশে গিয়ে টাকা দিয়ে দেবেন। এরপর বাংলাদেশে এসে কয়েক দফা তাগাদা দেই। পরে বরগুনার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিষয়টি জানালে, তাদের কাছে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর টাকা পরিশোধ করার কথা বলেন জাকারিয়া।”
তিনি বলেন, “কথা মতো নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধ না করে গত ৪ ডিসেম্বর পুনরায় টাকা দেওয়ার কথা বলেন জাকারিয়া। নির্ধারিত তারিখেও টাকা পরিশোধ না করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। এরপর আমি মামলা করি আদালতে।”
তিনি আরো বলেন, “ওমরাহ থেকে দেশে আসার সময় বিমানের ফিরতি টিকিট নিশ্চিত না করে বিমানবন্দরে হাজিদের রেখে সটকে পড়েন জাকারিয়া। তখন আমিসহ ৩২ জন হাজী নিজ খরচে টিকিট কেটে দেশে ফিরি।”
একই অভিযোগ করেন প্রতারণার শিকার অন্য হাজিরা। তারা জানান, সৌদি মুদ্রা রিয়াল দেওয়ার কথা বলে তাদের সবার থেকেই টাকা নেন এজেন্সি পরিচালক। সৌদি আরবে অবস্থানকালে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দেশে ফিরে টাকা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার এছাহাক আলী, আবদুল খালেক, রহমত আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসলিমা বেগম, আলেয়া বেগম, শাহনাজ পারভীন ও নাসিমা বেগমের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, বরগুনার বামনা উপজেলার বাসিন্দা সোবাহান মাষ্টার, কবির, নজরুল, আজহার উদ্দিন মাস্টার, হালিমা বেগম, ফিরোজা বেগম ও নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা নিয়েছেন জাকারিয়া।
বরগুনা সদর ও বেতাগীর সাত জনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, বরগুনা সদরের মাহবুবুর রহমান খোকা ও আরিফ মোল্লার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নেন জাকারিয়া।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলুর মাধ্যমে মোবাইলে যোগাযোগ করলে দারুস-সুন্নাহ হজ কাফেলা এজেন্সির পরিচালক এম এ জাকারিয়া জানান, টাকা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। তিনি পর্যায়ক্রমে সবার টাকা ফেরত দেবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বরগুনার উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছেন তিনি। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে।
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ওমর হ য ত র প থরঘ ট কর ছ ন ইসল ম বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
টটেনহ্যামকে উড়িয়ে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন, ছুঁলো ইউনাইটেডের রেকর্ড
অ্যানফিল্ড যেন রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে রূপ নিয়েছিল আনন্দের সমুদ্রে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমে মাত্র এক পয়েন্টের প্রয়োজন ছিল লিভারপুলের শিরোপা নিশ্চিত করতে। কিন্তু তারা অপেক্ষা করেনি কোনো সমীকরণের জন্য। টটেনহ্যাম হটস্পারকে বিধ্বস্ত করে ৫-১ গোলের বড় জয় তুলে নিয়েছে অলরেডরা। তাতে চার ম্যাচ হাতে রেখেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।
ঘরের মাঠে শুরুটা অবশ্য প্রত্যাশামতো হয়নি। ম্যাচের ১২ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে হেড করে টটেনহ্যামকে এগিয়ে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কে। গোল খেয়ে কিছুটা থমকে গিয়েছিল গ্যালারি। তবে দ্রুতই নিজেদের মেলে ধরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে লিভারপুল। চার মিনিটের ব্যবধানে লুইস দিয়াজ সমতা ফেরান ডমিনিক সোবোসলাইয়ের নিখুঁত পাস থেকে। প্রথমে অফসাইডের সংকেত এলেও ভিএআর রিভিউর পর গোলটি বৈধ ঘোষণা করা হয়।
তারপর শুরু হয় গোলের বন্যা। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার দলকে এগিয়ে দেন। বিরতির আগে ৩৪ মিনিটে কডি গাকপোর গোলে লিভারপুলের লিড বাড়িয়ে নেয় ৩-১ গোলে। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশির আগে গ্যালারি ছিল উত্তেজনায় ফেটে পড়ার অপেক্ষায়।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে সোবোসলাইয়ের পাস ধরে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ফিনিশে গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ। এটি ছিল তার চলতি মৌসুমের ২৮তম গোল। এই গোলের মাধ্যমে তিনি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সার্জিও আগুয়েরোকে ছাড়িয়ে সর্বকালের পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন দখল করেন।
ম্যাচের ৬৯ মিনিটে স্পার্স ডিফেন্ডার ডেসটিনি উদোগির দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল লিভারপুলের জয়টাকে আরও বড় করে তোলে।
৩৪ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের সংগ্রহ দাঁড়াল ৮২ পয়েন্টে, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট বেশি। ফলে চার ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করেছে আর্নে স্লটের দল। এই জয়ে সর্বোচ্চ ২০টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছে অলরেডরা।
শিরোপা জয়ের পর অ্যানফিল্ডে দেখা গেছে এক অনন্য দৃশ্য। বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ‘চ্যাম্পিয়ন্স’ লেখা জার্সি পরে মোহামেদ সালাহ, ভার্জিল ফন ডাইকরা উদযাপনে মেতেছিলেন। গ্যালারির লাল সমুদ্র যেন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল পুরো সময়টা।
লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট নিজের প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি জিতে গড়লেন অনন্য কীর্তি। হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি ও আন্তোনিও কোন্তের পর তিনিই হলেন আরেকজন কোচ, যিনি ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেন। উচ্ছ্বসিত স্লট বলেন, ‘‘কিছু জেতা সবসময় দারুণ অনুভূতির, তবে লিভারপুলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে প্রথম মৌসুমেই শিরোপা পাওয়া, এটা বিশেষ কিছু।’’
ঢাকা/আমিনুল