হার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করণীয়
Published: 24th, March 2025 GMT
১. বুকব্যথা
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশ অনেক আগে থেকে এবং ৬৮ শতাংশের কিছুদিন আগে থেকে হালকা ব্যথা ছিল। সুতরাং বুকব্যথা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
২. বুকে ভারবোধ
ওই একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ রোগীর বুকে ভারবোধ ছিল। বুকে ভারবোধ রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেন, বুকে চাপ বা অস্বস্তি বোধও হতে পারে। অনেকে ভারী কাজ করার পর বা দ্রুত হাঁটার পর বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পরও বুকে ভারবোধ করতে পারেন।
৩.
বুক ধড়ফড়
একই গবেষণায় ৪২ শতাংশ রোগী আগে বুক ধড়ফড়ের লক্ষণ ছিল। সুতরাং এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপদচিহ্ন। এ ক্ষেত্রে রোগী অনুভব করেন, হৃৎপিণ্ড খুব দ্রুত লাফাচ্ছে। অনেকে মাঝেমধ্যে হার্টবিট মিসের কথাও বলেন।
৪. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে যাওয়া
এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপদচিহ্ন। অনেকে বলেন, ভারী কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যান, একেও হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। অনেকের আবার বিশ্রামরত অবস্থায়ও এ রকম হতে পারে।
আরও পড়ুনহার্ট সুস্থ রাখতে কী খাবেন২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. বুক জ্বালাপোড়া
বুক জ্বালাপোড়া শুনলেই অনেকে গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা ভাবেন আর দিনের পর দিন গ্যাসের ওষুধ খেয়ে যান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা হলেও যদি দেখা যায় ওষুধে কাজ হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ
দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ অনেক সমস্যা বা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক হার্ট অ্যাটাকের রোগীর শুরুর দিকে এ রকম ক্লান্তিবোধ হয়। সুতরাং এটিও একটি বিপদচিহ্ন হতে পারে।
এর পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ বা বিপদচিহ্ন মাথায় রাখতে হবে। যেমন মাথা ঝিমঝিম, পা ফোলা বা পা ভারী বোধ হওয়া, বমিভাব, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা। এসব প্রথম ছয়টির মতো অবশ্য বেশি পরিলক্ষিত হয় না। এখনো পর্যন্ত দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে পূর্ব লক্ষণ বা বিপদচিহ্ন বেশি দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
অনেক রোগীর কোনো বিপদচিহ্ন ছাড়াই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। তাঁদের অনেকে আবার এসব বিপদচিহ্ন বুঝতে পারেন না বা অগ্রাহ্য করেন। হার্ট অ্যাটাকে যেহেতু মৃত্যুঝুঁকি থাকে, সুতরাং এসব ব্যাপার অবশ্যই আমলে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুনবয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ০৭ আগস্ট ২০২৪ হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে করণীয়হুট করে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। এমন আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর আশপাশে প্রায়ই শোনা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর সংকেত পাঠায়। প্রথমে বুকে অল্প ব্যথার সঙ্গে অস্বস্তি থাকে। বেশির ভাগ সময় হার্ট অ্যাটাকে বুকের মাঝখানে চাপ বোধ হয়। কয়েক মিনিট ধরে ব্যথা থাকে। মাঝেমাঝে ব্যথা চলে যায় আবার ফিরে আসে।
একটা অস্বস্তিকর চাপ ও ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। অনেক সময় পিঠ, ঘাড়, চোয়াল ও পাকস্থলীতেও অস্বস্তি হয়। বুকে অস্বস্তির সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়ে আসে। ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও বমি ভাব হতে পারে।
উপসর্গ বুঝে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। মূলত হার্ট যখন অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করে, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক চাপসহ নানা কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে ভয় পাবেন না। দ্রুত জোরে ও ঘন ঘন কাশি দেবেন, যেন কাশির সঙ্গে কফ বের হয়ে আসে। প্রতিবার কাশি দেওয়ার আগে দীর্ঘশ্বাস নিন। এভাবে ঘন ঘন কাশি ও দীর্ঘশ্বাস—প্রতি দুই মিনিট পরপর করতে থাকুন। এতে করে আপনার হৃৎপিণ্ড কিছুটা হলেও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করবে। হাসপাতালে নেওয়ার আগে এটি রোগীকে সাপোর্ট দেবে অনেকখানি। কারণ, দীর্ঘশ্বাসের ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহন বেশি হয় এবং ঘন ঘন কাশি দেওয়ার ফলে বুকে যে চাপের সৃষ্টি হয়, তাতে হার্ট পর্যাপ্ত ও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত হয়।
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের আগেই কি শরীর বিশেষ কিছু জানান দেয়২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব পদচ হ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তুচ্ছ ঘটনার জেরে এনসিপি–বিএনপির সংঘর্ষ, ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রাজধানীর রূপনগরে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক সমকালকে বলেন, মিরপুরের বিইউবিটির এক ছাত্রীর সঙ্গে উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তরুণী তার এক সহপাঠী আশিকের সহায়তা চান। এরপর সোমবার রাত ৮টার দিকে তরুণী রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর সড়কের ঝিলপাড় এলাকায় তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই সময় আশিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনিককে গালমন্দ করেন। এ নিয়ে দুজন বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়ান।
ওসি আরও বলেন, আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়ান আশিক। একপর্যায়ে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়াসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। অন্যদিকে খবর পেয়ে আশিকের পক্ষের লোকজনও সেখানে যান। এ সময় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে করা মামলার আসামিরা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
এদিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে শেখ মাহিন আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
এজাহারে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কর্মী অনিককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য থানায় সংবাদ দেয়। ওই সময় টুটুল মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জন এসে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টুটুলসহ তার লোকজনের কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই। তখন টুটুল আমাকে দেখে বলেন, এটাই সেই মাহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর তারা লাঠিসোঁটা, ধারালো চাকু, রাম দা, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। আমাকে রক্ষার জন্য অন্যরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মারধর ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার পর দুই পক্ষই মিছিল নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার সামনে জড়ো হয়। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।