যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতা তৌহিদুল হত্যা মামলায় ১ আসামি গ্রেপ্তার
Published: 24th, March 2025 GMT
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের নিহত হওয়ার অভিযোগে করা মামলায় এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার ভোরে কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম সাইদুল হাসান (৪৫)। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী। এ মামলায় বেসামরিক ৬ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়, যাঁদের সঙ্গে তৌহিদুলের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। গ্রেপ্তার সাইদুল মামলার ৫ নম্বর আসামি। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। তাঁরা সিভিল (সাদা) ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত ছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনরাতে আটক যুবদল নেতার সকালে মৃত্যু, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন৩১ জানুয়ারি ২০২৫আজ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, থানায় হত্যা মামলা হওয়ার পর থেকে সাইদুল আত্মগোপনে ছিলেন। এ মামলার অন্য আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সাইদুলকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সাইদুলের দুই ভাইও এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি। মামলা দায়েরের কয়েক দিন পর সাইদুলের বাবা মোক্তল হোসেন ও আরেক আসামি ইটাল্লা গ্রামের তানজিল উদ্দিনের বাবা ফজলুর রহমান কুমিল্লা নগরে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, জমি–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁদের সন্তানদের ফাঁসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখছি না। আমরা সব আসামির দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। জমিজমা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে তাঁরাই আমার ভাইয়ের হত্যার নেপথ্যে ছিল। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
আরও পড়ুনযৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতা তৌহিদুল হত্যায় ছয়জনের নামে মামলা০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুপি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি তৌহিদুলের বাবার কুলখানি অনুষ্ঠান ছিল। তাঁর পরিবারের দাবি, এর আয়োজন চলাকালে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরদিন দুপুরে খোঁজ পান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৌহিদুলের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, তৌহিদুলের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন।
ঘটনার পরপরই পুলিশ জানায়, ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে তৌহিদুলকে নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে তৌহিদুলের মৃত্যু নিয়ে আইএসপিআরের বিবৃতি০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।
২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।