প্রতিবছর ঈদের আগের এ সময়ের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন মাদ্রাসাছাত্র গোলাম কিবরিয়া। কিশোর বয়সে পড়াশোনার জন্য বাড়ি ছাড়েন তিনি। নেত্রকোনা থেকে চলে আসেন চট্টগ্রামে। তাই ঈদের লম্বা ছুটিতে ছুটে যান বাড়িতে, পরিবার-পরিজন আর স্বজনদের কাছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

আজ সোমবার ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে এসেছিলেন গোলাম কিবরিয়া। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিজয় এক্সপ্রেসে করে ঘরে যাবেন তিনি। সোমবার সকালে ট্রেনে ওঠার আগে ঈদে বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানান এই মাদ্রাসাছাত্র।

গোলাম কিবরিয়া বলেন, মাদ্রাসা বিভিন্ন সময়ে ছুটি থাকে। ওই সময় বাড়ি ফেরা হয়। তবে ঈদের সময় বাড়িতে যাওয়ার যে আনন্দ আর খুশি, তা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা হয় না। অনেক দিন ধরে বাড়ির বাইরে থাকার কারণে এ সময়ে বাড়িতে যাওয়ার আগ্রহও থাকে বেশি।

শুধু গোলাম কিবরিয়া নন, ঈদে বাড়িতে ফেরার আনন্দ ছিল আরও অনেক যাত্রীর মধ্যে। তেমন একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফরিন আজাদের। ময়মনসিংহের এ বাসিন্দা বলেন, বছরজুড়ে পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। ঈদের সময় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যেমন দেখা হয়, তেমনি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও আড্ডা-গল্প হয়। তাঁদের অনেকেই পড়াশোনা, চাকরির কারণে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অন্যান্য সময় তেমন দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। ঈদেই সবার সম্মিলন হয়।

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের খুশি আর উচ্ছ্বাস আরও বেড়েছে স্টেশনে তেমন কোনো চাপ না থাকায়। প্রথম দিন যাত্রীদের ভিড় ছিল কম। ট্রেনও ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ে। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার থেকে স্টেশনে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়বে বলে জানান রেলের কর্মকর্তারা। প্রথম দিন সকালবেলায় বিজয়, চট্টলা ও সাগরিকা ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়েছে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রার প্রথম দিন কোনো চাপ ছিল না। সোমবার সুবর্ণ, পাহাড়িকা ও সৈকত এক্সপ্রেসের সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল। এ জন্য যাত্রীর ভিড় ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সব আন্তনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে। আবার বিশেষ ট্রেনও চলাচল শুরু হবে। আর ওই দিন সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়বে। তাঁরাও বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম ক বর য় প রথম দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।

অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ